কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ কত? উচ্চ কোলেস্টেরল এর লক্ষণ কি?
কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ যখন তার নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে তখনই শরীর নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন প্রত্যেকের উচিত উচ্চ কোলেস্টেরল এর লক্ষণ সম্পর্কে অবগত থাকা এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনা।
রক্তের এই বিশেষ উপাদানটি শরীরের জন্য যেমন খুবই প্রয়োজনীয় তেমনি তা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নলিখিত তথ্য ও উপাত্তগুলো অনুসরণ করে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্যতালিকা প্রণয়ন করলে আশা করি ফলপ্রসূ হবে।
ভূমিকা
কোলেস্টেরল এক ধরনের তৈলাক্ত স্টেরয়েড যা কোষের সেল মেমব্রেন এ পাওয়া যায়। এটি মূলত এক ধরনের চর্বি। স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে এটি সেল মেমব্রেন এর অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আরও সহজভাবে যদি বলি তাহলে, কোলেস্টেরল হলো রক্তের চর্বি বা ফ্যাট যা সঞ্চালিত হয়ে কোষের ভিতরে তরল পাদার্থের পরিবহন পক্রিয়া সচল রাখে। যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ধমনী সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ কত?
শরীরে ০৪ ধরনের লিপিড বা চর্বির উপর বিবেচনা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরূপণ করা হয়।
- Low Density Lipoprotein (LDL)
- High Density Lipoprotein (HDL)
- Triglycerides
- Total Colesterol in Body
- LDL কোলেস্টেরল এর মাত্রা ১০০-১৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এই মাত্রা যদি ১৩০ কে অতিক্রম করে তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আর এই মাত্রা যদি ১৫০-১৯০ এর মধ্যে থাকে তখন তা বর্ডার লাইনে আছে বলে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে রোগী যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাকের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।
- HDL কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ ৬০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন ব্যক্তির শরীরে এই কোলেস্টেরলের সর্বনিম্ন মাত্রা ৪০ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা সর্বনিম্ন ৪৫ মিলিগ্রাম হতে পারে। এর চেয়ে কম হলে ঐ ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনায় অবস্থান করে।
- রক্তে Triglycerides এর নিরাপদ মাত্রা ১৫০ বা তার কম কিন্তু এই মাত্রা যদি ২০০ মিগ্রা অতিক্রম করে তবে তা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পরে।
- রক্তে যত ধরনের কোলেস্টেরল আছে সবগুলোকে একত্রে Total Colesterol in Body বলা হয়। যদিও এই কোলেস্টেরলের মাত্রা দিয়ে শরীরের কোলেস্টেরল ঝুঁকি নির্ণয় করা যায় না তবুও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ ২০০ মিলিগ্রাম এবং সর্বোচ্চ মাত্রা ২৪০ মিলিগ্রাম। অনুরূপভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ ১৭০ মিলিগ্রাম এবং সর্বোচ্চ মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম।
উচ্চ কোলেস্টেরল এর লক্ষণ
- সিঁড়ি ভাঙলে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাড়াটা স্বাভাবিক কিন্তু সেই সাথে যদি অস্থিরতা অনুভূত হয় তবে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে রক্তের কোলেস্টেরল দেখে নেওয়া উচিত।
- অপ্রয়োজনে বুক ধরফর করা কিংবা হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন গতি বেড়ে যাওয়াও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ।
- চোখের চারপাশে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব এবং সাদা ও হলুদ রঙের ছোট ছোট দানা কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ।
- শুধুমাত্র জন্ডিস হলেই যে চোখ হলুদ হয় এমন ধারাণা রাখা ঠিক নয়। উচ্চ কোলেস্টেরলে ভোগা রোগীদেরও চোখ এবং চোখের চতুর্দিকে হলুদ আভা পড়তে পারে।
- হাত ও পায়ের নখের রং পরিবর্তিত হয়ে কালচে বা বাদামী রং ধারণ করে এবং নখের উজ্জ্বলতা ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
- জিভের রং পরিবর্তন ও জিভের উপরিভাগে গুটি গুটির মত অস্বাভাবিক কিছুর আস্তরণ কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ।
- শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত মেদ বা চর্বিও উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ। সাধারণত তলপেটের চর্বিগুলো কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রার ইঙ্গিত বহন করে।
- স্নায়ুতন্ত্রের অসাড়তা ও আকস্মিক খিঁচুনিও উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ।
- সামান্য কায়িক শ্রমে শ্বাসকষ্টের সমস্যাসহ বুকে ব্যাথা হতে পারে।
- কখনও কখনও উচ্চ রক্ত চাপে ভোগা রোগীদেরও উচ্চ কোলেস্টেরল থাকার সম্ভাবনা থাকে।
- হঠাৎ অতিরিক্ত হারে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।
কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ
রক্তে কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ অতিক্রম করার মূল কারণ হলো স্যাচুরেটেড ফুড বা সম্পৃক্ত খাবার। এই খাবারগুলো মূলত উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার। যেকোনো বয়সেই রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। নিচে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান প্রধান কারণগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারিগর।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি দুটি একে অন্যের পরিপূরক।
- অলসতা কিংবা শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে।
- বংশগত কারণেও রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ধুমপান ও মাদক দ্রব্য সেবন রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে।
- অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে।
- কখনও কখনও বয়স ও লিঙ্গভেদে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজের পর কোলেস্টেরল বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত ওজনও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
রক্তে কোলেস্টেরল বেশি হলে কি কি সমস্যা হয়?
কোলেস্টেরল রক্তেরই একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। কিন্তু এই উপাদানটি যখন নির্দিষ্ট মাত্রাকে অতিক্রম করে তখনই তা Bad Colesterol এ পরিণত হয় এবং শরীর নানান জটিলতার সম্মুখীন হয়। নিচে রক্তে কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ অতিক্রম করলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা উপস্থাপন করা হলো:
- হৃদরোগের প্রবণতা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘদিন উচ্চ কোলেস্টেরলে ভোগলে রোগী হার্ট অ্যাটাকের চরম ঝুঁকিতে অবস্থান করে।
- কোলেস্টেরল বেশি হলে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে স্পর্শানুভূতি লোপ পাওয়া কিংবা স্নায়ুতন্ত্র অসাড় হয়ে যেতে পারে।
- রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল আমাদের দৃষ্টিশক্তিকেও প্রভাবিত করে। অস্বাভাবিক মাত্রার কোলেস্টেরল আমাদের চোখের ধমনীতে প্রেসার ক্রিয়েট করে যার ফলে চোখে ঝাপসা দেখাসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত ঘটায়।
- উচ্চ কোলেস্টেরলের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যহত হয় যার ফলে ব্রেণ স্ট্রোকের মত ভয়ংকর কিছুও ঘটতে পারে।
- রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে রক্তচাপও বেড়ে যায়।
- রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ফলে হৃদযন্ত্রের কম্পণের মাত্রার তারতম্য ঘটে এবং স্ট্রোক করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ধমনীতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং ধমনী সংক্রান্ত নানান জটিলতায় ভোগতে হয়।
- রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে তা আমাদের স্মৃতিশক্তিকেও প্রভাবিত করে। কখনও কখনও স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার মত ঘটনা ঘটে থাকে।
কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয়
রক্তে কোলেস্টেরল এর নরমাল রেঞ্জ অতিক্রম করলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরী অন্যথায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি থাকে। নিচে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
- নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ হতে হবে যেমন- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, ঘুম থেকে ওঠা এবং সময়মত পরিমিত খাবার খাওয়া।
- খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা। বিশেষ করে সম্পৃক্ত খাবার যেমন- লাল মাংস, বড় চিংড়ি, ভাঁজাপোড়া, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করার কোনো বিকল্প নেই।
- ধুমপান, মদ্যপান এবং তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
- শর্করা জাতীয় খাবার পরিহার করা।
- নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করা। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট দ্রুত হাটার অভ্যাস করা।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বা আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
- রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী।
কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা
রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমেই উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে নিম্নলিখিত খাবারগুলো:
- কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে খাদ্য তালিকায় রাখতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। পুষ্টির এই উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশি থাকে সবুজ শাক-সবজিতে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হচ্ছে পালংশাক, পুঁই শাক, কচুশাক, কলমি শাকসহ যেকোনো শাক।
- কম ক্যালরিযুক্ত ভিটামিন সি, খনিজ পদার্থ, পটাসিয়াম ও ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কোলেস্টেরল কমাতে খুবই সহায়ক। তাই প্রতিদিনের ফলের তালিকায় রাখতে পারেন কলা, পেয়ারা, পেঁপে, তরমুজ, কমলা, কিউই ইত্যাদি।
- কুসুম বাদে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া যেতে পারে।
- ওমেগা ৩ জাতীয় খাবার যেমন- বাদাম, আখরোট ও আমন্ড রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন পুষ্টি ও খনিজ সমৃদ্ধ বিভিন্ন দানাদার খাবার যেমন গম, ভুট্টা, ঢেঁকিছাটা লাল চাল, ওটস, বার্লি ইত্যাদি। এসব খাবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- রসুন উচ্চ রক্তচাপসহ রক্তের অতিরিক্ত কলোস্টেরল কমাতে কাজ করে রসুন। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া করে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। রসুন হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
- লাল মাংস (গরুর মাংস, খাসির মাংস) ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। তার পরিবর্তে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১ দিন মুরগির মাংস রাখতে পারেন তবে মাছ খেতে পারেন প্রতিদিন।
- শুধু কোলেস্টেরল নয়, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ যেকোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে রান্নায় তেলের ব্যবহার সীমিত হওয়া উচিত। রান্না করা তেলে দ্বিতীয়বার আবার রান্না করা উচিত নয় অর্থাৎ পোড়া তেলে রান্না করা একদম অনুচিত।
- আর্থিক সামর্থ্য থাকলে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে সকল রান্নার কাজ সম্পন্ন করা।
- সর্বোপরি বাহিরের খাবার অর্থাৎ হোটেল বা রেস্টুরেন্টের খাবার পরিহার করতে হবে।
কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে গেলে খাদ্য তালিকা থেকে নিম্নলিখিত খাবারগুলো বাদ দিতে হবে অন্যথায় রোগী হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানান জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
- লাল মাংস যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
- শরীরের Bad Colesterol নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে বড় চিংড়ি মাছ।
- ফাস্ট ফুড বা যেকোনো প্রসেসড ফুড কম খাওয়া সম্ভব হলে পুরোপুরি পরিহার করা
- ভাঁজাপোড়া বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার
- খারাপ কোলেস্টেরল কিংবা ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা নিতে পরিহার করতে হবে লোভনীয় খাবার কেক, চকলেট, পেস্ট্রি ও আইসক্রিম ইত্যাদি।
- রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ক্রিম, পনির ও মাখন পরিহার করা খুবই জরুরী।
কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
নিম্নলিখিত উপাদানগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন রক্তের কোলেস্টেরল। নিচে উপাদানগুলোর ব্যবহারবিধিসহ উপস্থাপন করা হলো:
মধু: মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধুতে থাকা বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ রক্তনালীতে খারাপ কোলেস্টেরল প্রবেশে বাধা দেয়। রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে নিয়মিত মধুর সাথে দারচিনির গুঁড়োর মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিন সকালে এক কাপ কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও অল্প পরিমানে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে রক্তের কলোস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া চিকিৎসা
রসুন: ওষধিগুণে ভরপুর রসুনে আছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যামাইনো অ্যাসিড নামক রাসায়নিক যৌগ। রসুনে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও রসুন হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এজন্য স্বাস্থ্যসচেতন প্রত্যেকের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
হলুদ: হলুদে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ লবন, ফসফরাস ও আয়রন নামক রাসায়নিক যৌগ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে টনিক হিসেবে কাজ করে। এজন্য কাঁচা হলুদের রস খুবই কার্যকরী। তবে কাঁচা হলুদ সহজলভ্য না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সকালে খালিপেটে এক কাপ কুসুম গরম পানির সাথে আদা চা চামচ হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
মেথি বীজ: প্রচুর ঔষধিগুণে ভরপুর মেথিকে আমরা মসলা হিসেবেই জানি। স্বাস্থ্যসচেতনদের নিকট মেথি খাবার বা পথ্য হিসেবেও সুপরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন সকালে খালিপেটে এক টেবিল চামচ পরিমান মেথি চিবিয়ে অথবা এক গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালিপেটে সেই পানি পান করলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে খুবই উপকারী।
ধনে বীজ: ধনে বীজকে অনেকে মসলা হিসেবে চিনলেও এটি প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ভেষজ উপকরণ। ধনে পাতায় থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ধনে বীজের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য দেহের টক্সিন দূর করতেও কাজ করে।
আপেল: খুবই সহজলভ্য প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল আপেল। আপেলে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে কাজ করে। বিশেষজ্ঞের মতে, পুষ্টিগুণের দিক থেকে সবুজ আপেল লাল আপেলের চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে। তাই তারা স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবুজ আপেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বিটরুট: বিটরুট ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে ভরপুর এক প্রকার সবজি। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড নামক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিনয়েড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। আপনি এটি সবজি, সালাদ কিংবা জুস করে খেতে পারেন।
পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতায় আছে ফাইবার ও ক্লোরোফিল নামক রাসায়নিক যৌগ যা উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী। আপনি পুদিনা পাতা কাঁচা চিবিয়ে অথবা জুস করেও খেতে পারেন।
গ্রিন-টি: গ্রিন-টি এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কম-বেশি জানা আছে। গ্রিন-টি তে থাকা ফ্লাভোনয়েড ও পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত নালীতে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়।
আমলকি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক-তেতো স্বাদযুক্ত এই ফলটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ২টি কাঁচা আমলকি চিবিয়ে অথবা জুস করে খেতে পারেন। আর যদি ঘরে আমলকির গুঁড়ো মজুদ থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে এক কাপ কুসুম গরম পানির সাথে আদা চা চামচ আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগার রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী উপাদান। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিয়মিত খেলে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হবে।
কোলেস্টেরল কমানোর ব্যায়াম
মূলত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীর থেকে ঘাম ঝড়লেই রক্তের কোলেস্টেরল কমতে থাকে। তবে নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যায়াম করলে রক্তের কোলেস্টেরল অতিদ্রুত হ্রাস পায়।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট করে দ্রুত হাটার অভ্যাস করা
- অন্য যেকোনো ব্যায়ামের চেয়ে সাঁতার কাটা অধিক উত্তম
- প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব
- এছাড়াও জিমে গিয়ে অথবা নিজের বাসায় ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল কমানো যেতে পারে।
- তবে রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সবকিছুর উর্ধ্বে কাজ করে নিয়মতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস।
লেখকের মন্তব্য
উপরোল্লিখিত তথ্যগুলো রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আপনার সহযোগি হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবুও আমার পরামর্শ থাকবে, যদি আপনি উচ্চ কোলেস্টেরলে ভোগেন তবে উপরোক্ত তথ্যের পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সেই সাথে এই তথ্য থেকে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিতদের মধ্যে যিনি একই সমস্যায় ভোগছেন তাদেরকেও শেয়ার করে উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিন।
বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি যে, এই আর্টিকেলে কোনো প্রকার সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে আপনার সুচিন্তিত মতামত সাদরে গ্রহণযোগ্য। আপনার মতামত জানাতে কমেন্টবক্সে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url