বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয় এবং বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক পরিচয়
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয়, তাঁর প্রয়াণ দিবস সহ বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা পরাধীন বাংলাকে স্বাধীন করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জানান দিয়ে লাল-সবুজ পতাকার দৃশ্যমান উড্ডয়নে অবিসংবাদিত এই নেতার অবদান অনস্বীকার্য।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পরিবার পরিচয়সহ তাঁর জন্ম, মৃত্যু ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে নির্ভুল উপস্থাপনা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
ভূমিকা
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই স্বাধীন বাংলাদেশে লাল-সবুজের পতাকা উদিত হয়েছে, বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এই কিংবদন্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে রচিত এই আর্টিকেলে উপস্থাপন করা হয়েছে তাঁর জন্ম, মৃত্যু, পারিবারিক পরিচয়, বংশপরিচয় এবং প্রাপ্ত উপাধিসমূহ।
যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বিশেষ করে চাকুরি ও ভর্তি পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২-১টি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে থাকে। তাই চাকুরি ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয়, তাঁর পরিবার পরিচয় এবং প্রয়াণ দিবস সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়াদি ছোট ছোট লাইনে শর্টনোট আকারে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই আর্টিকেলে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয়
স্বাধীন বাংলার স্থপতি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন পৃথিবী খ্যাত ওলি বায়েজিদ বোস্তামির শিষ্য দরবেশ শেখ আউয়ালের অষ্টম পুরুষ এবং সুযোগ্য উত্তরসূরি। নিচে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে বিশদ বিশ্লেষণ ছোট ছোট লাইনে শর্টনোট আকারে উপস্থাপন করা হলো:
বঙ্গবন্ধুর জন্ম কত সালে এবং কোথায়?
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমায় বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
- শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ৩ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ এবং ২৭ জামাদিউস সানী ১৩৩৮ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন।
- ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ছিল বুধবার অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুধবার জন্মগ্রহণ করেন।
- ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
- বঙ্গবন্ধুর নানা শেখ আব্দুল মজিদ বঙ্গবন্ধুর আকিকার দিন শেখ মুজিবুর রহমান নামটি রাখেন।
- দুই কন্যা সন্তানের পর প্রথম পুত্র সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। তাই খুশি হয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নানা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি শেখ মুজিবুর রহমানের মা সায়েরা খাতুন’কে দান করে বলেছিলেন- মা সায়রা! তোর ছেলের এমন নাম রাখলাম যে নাম জগৎ খ্যাত হবে।
- শেখ মুজিবুর রহমানর মাতাপিতা আদর করে তাঁকে খোকা নামে ডাকতেন।
- ভাইবোন ও গ্রামবাসীর নিকট তিনি ‘মিয়া ভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক পরিচয়
- শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান
- শেখ মুজিবুর রহমানের মাতার নাম সায়েরা খাতুন
- শেখ মুজিবুর রহমানের দাদার নাম শেখ আব্দুল হামিদ
- বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলে ব্রিটিশ ভারতের গোপালগঞ্জ দেওয়ানী আদালতের একজন সেরেস্তাদার।
- শেখ মুজিবুর রহমানের নানার নাম শেখ আব্দুল মজিদ।
- শেখ আব্দুল মজিদ ছিলেন শেখ লুৎফর রহমানের চাচা। অর্থাৎ সায়েরা খাতুন ছিলেন শেখ লুৎফর রহমানের চাচাতো বোন।
- শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল এক ভাই ও চার বোন।
- শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।
- শেখ আবু নাসের জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
- শেখ মুজিবুর রহমানের বোনদের নাম যথাক্রমে- ফাতেমা বেগম, আছিয়া বেগম, আমেনা বেগম ও খোদেজা বেগম লিপি।
- ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।
- আহমদ মমতা ও রাইহান নাসরিন প্রণীত ‘শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থ অনুযায়ী বিয়ের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ছিল ১৩ বছর এবং তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা’র বয়স ছিল তিন বছর। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রণীত ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, বিয়ের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ছিল দশ বছর।
- শেখ মুজিবুর রহমানের বাল্য বিবাহের মূল কারণ ছিল যখন শেখ ফজিলাতুননেছা রেনুর বয়স ৩ বছর এবং তার বড় বোন শেখ জিন্নাতুননেছা জিন্নি’র বয়স ৫ বছর তখন তাদের পিতা শেখ জহরুল হক ইন্তিকাল করেন। ঐ সময় মুসলিম পারিবারিক আইনে পিতার জীবদ্দশায় পুত্র ইন্তিকাল করলে পুত্রের সন্তান-সন্ততি সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন না। সে কারণে শেখ জহরুল হকের পিতা তথা শেখ ফজিলাতুননেছার দাদা শেখ আবুল কাশে তাঁর দুই পৌত্রী জিন্নাতুননেছা ও শেখ ফজিলাতুননেছাকে তাঁর একই বংশের দুই সন্তান শেখ আবদুল কুদ্দুস এর পুত্র শেখ মুহাম্মাদ মুসা ও শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিয়ে দিয়ে দুই পৌত্রীর নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেন।
- বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুননেছা রেনু ১৯৩০ সনে জন্মগ্রহণ করেন।
- শেখ ফজিলাতুননেছার বয়স যখন তিন বছর তখন তাঁর পিতা শেখ জহুরুল হক মৃত্যুবরণ করেন।
- শেখ ফজিলাতুননেছার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর মাতা হোসনে আরা বেগম ইন্তিকাল করেন।
- শেখ ফজিলাতুননেছার বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁর দাদা শেখ আবুল কাশেম মৃত্যুবরণ করেন।
- শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুননেছা দম্পত্তির পাঁচ সন্তান। দুই কন্যা যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তিন পুত্র যথাক্রমে- শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।
- শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সন্তানের শেখ হাসিনা। [আহমদ মমতা ও রাইহান নাসরিন প্রণীত ‘শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থ অনুযায়ী শেখ ফজিলাতুননেছার ওরশে শেখ হাসিনা জন্মের পূর্বে প্রথমে একজন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে মারা যায়।]
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বংশ পরিচয়
- বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ হলেন বাগদাদের খ্যাতনামা অলি বায়েজিদ বোস্তামীর শিস্য দরবেশ শেখ আউয়াল।
- শেখ আউয়াল সোনারগাঁয়ে বিয়ে করেছিলেন।
- শেখ আউয়ালের অধস্তন তৃতীয় পুরুষ শেখ বোরহান উদ্দিন টুঙ্গিপাড়ার বনেদী পরিবার কাজী বাড়িতে বিয়ে করেন। [মতান্তরে শেখ আউয়াল আসেন ফরিদপুর জেলায়। তিনি বাঙালি এক নারীকে বিয়ে করে টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করে। সেই বংশের মহাপুরুষ হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কারো কারো মতে, শেখ আউয়ালের পুত্র শেখ জহির উদ্দিন কাজী বাড়িতে বিয়ে করেন।]
- এম.আর আখতার মুকুল রচিত ‘মহাপুরুষ’ নামক গ্রন্থ মতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দরবেশ শেখ আউয়ালের অধস্তন সপ্তম পুরুষ। পক্ষান্তরে ভবেশ রায় লিখিত ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন কথা’ এবং মোতাহার হোসেন সুফী লিখিত ‘ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক’ গ্রন্থ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু দরবেশ শেখ আউয়ালের অষ্টম পুরুষ।
- শেখ আউয়াল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের বংশপরম্পরা যথাক্রমে- (১) শেখ মুজিবুর রহমান ® (২) শেখ লুৎফর রহমান ® (৩) শেখ আব্দুল হামিদ ® (৪) শেখ মোহাম্মাদ জাকির ® (৫) শেখ একরামুল্লাহ ® (৬) শেখ বোরহান উদ্দিন ® (৭) শেখ জান মাহমুদ ওরফে তেকড়ি শেখ ® (৮) শেখ জহির উদ্দিন ® (৯) দরবেশ শেখ আউয়াল।
- বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষের বাড়ির আয়তন ছিল প্রায় ২ একরের উর্ধ্বে।
- ১৮৫৪ সালে শেখ পরিবারের ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।
- জমিদারদের অনুমতি নিয়ে ১৮৫৪ সালে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষেরা পাকা বাড়ি (বিল্ডিং) তৈরি
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু তারিখ কত
- তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এর নীলনকশায় প্ররোচিত হয়ে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের সশস্ত্র হামলায় মাত্র ৫৫ বছর বয়সে সপরিবারে গুপ্তহত্যার স্বীকার হন বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতা।
- ১৯৭৫ খ্রি. ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোরে একদল সেনাসদস্য সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ধানমন্ডির-৩২ এর নিজ বাসভবনে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৩৮২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসের ২৯ তারিখ এবং ১৩৯৫ হিজরি সনের শাবান মাসের ৭ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন।
বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা উপাধি কবে কোথায় ঘোষণা করা হয়
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্মেলনে লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা নিচে শর্টনোট আকারে উপস্থাপন করা হলো:
- ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে আ.স.ম আব্দুর রব শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
- পরবর্তীতে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তাকে সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা’র পক্ষ থেকে সারা বিশ্বে পরিচালিত এক জরিপে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসাবে নির্বাচন করা হয়।
- ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী স্বাধীন বাংলার রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে রচিত এই আর্টিকেলটি জ্ঞান পিপাসুদের বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয়, পারিবারিক পরিচয়, প্রাপ্ত খেতাব ও প্রয়াণ দিবস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে সহায়ক হবে, সমৃদ্ধ হবে সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য ভান্ডার।
আমরা মনে করি, MrDorpon এর প্রতিটি পাঠক দর্পণ পরিবারের একজন সদস্য। তাই আর্টিকেলটিতে কোন তথ্য সংযোজন, বিয়োজন কিংবা পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়ত দৃষ্টিগোচর হলে কমেন্ট বক্সে আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url