বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলীর প্রতিটি তার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত দেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করে বিশ্বদরবারে তা তুলে ধরা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলীর সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য শর্টনোট আকারে উপস্থাপিত হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
জাতীয় প্রতীক, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত সহ বেশ কিছু জাতীয় বিষয় আছে যা বাংলাদেশ এবং এর জাতিসত্ত্বার পরিচায়ক। স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় জাতীয় বিষয়গুলোকে জাতীয়তার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
ভূমিকা
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বগৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ। আর তখন থেকেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কিছু বিষয়কে জাতীয় খেতাবে ভূষিত করেছেন যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক, জাতীয় সংগীত, জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ প্রভৃতি জাতীয় বিষয়সমূহ একটি জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। জাতীয় বিষয়াবলির সাথে একটি রাষ্ট্রের মান-মর্যাদা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী এবং জাতীয় বিষয়সমূহের সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক শর্টনোট
নিচে বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
জাতীয় বিষয় | নাম |
জাতীয় প্রতীক | উভয়পার্শ্বে ধানের শীষ বেষ্টিত পানিতে ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলা, তার শীর্ষদেশে পরস্পরযুক্ত তিনটি পাটগাছের পাতা, তার উভয় পার্শ্বে দুটি করে তারকা। |
| জাতীয় প্রতীক |
| শর্টনোট: - ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর পরই জাতীয় প্রতীক গ্রহণ করা হয়।
- জাতীয় প্রতীক মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদন লাভ করে ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
- বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের ডিজাইনার কামরুল হাসান।
- জাতীয় প্রতীক সম্পর্কে সংবিধানের ৪(৩) অনুচ্ছেদে বর্ণনা আছে।
- শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রতীক ব্যবহারের অধিকারী।
- জাতীয় প্রতীকের চারটি তারকা দ্বারা বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে বোঝানো হয়েছে।
|
জাতীয় মনোগ্রাম | লাল রঙের বৃত্তের মাঝে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র। বৃত্তের দুপাশে দুটি করে মোট ৪টি তারকা। বৃত্তের উপরে লেখা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এবং নিচে লেখা ‘সরকার’। |
| জাতীয় মনোগ্রাম |
| শর্টনোট: - এটি মূলত বাংলাদেশ সরকারের সীলমোহর।
- বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের মন্ত্রীপরিষদ সরকারি অফিস, নথি, স্মারক, চিঠিপত্র ও বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের মনোগ্রাম ব্যবহার করেন।
- বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামের ডিজাইনার এ.এন.সাহা।
|
জাতীয় পতাকা | বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্ত। |
| জাতীয় পতাকা |
| শর্টনোট: - পতাকায় লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক।
- উজ্জ্বল ঘন সবুজ বর্ণটি তারুণ্যের উদ্দীপণা ও বিস্তৃত গ্রামবাংলার প্রতীক।
- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, চিফ হুইপ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, উপমন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক/কনস্যুলার/মিশনসমূহের প্রধানগণ এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
|
জাতীয় বৃক্ষ | আম গাছ |
| জাতীয় বৃক্ষ: আমগাছ |
| শর্টনোট: - ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষ ঘোষণা করা হয়।
- আম বা আম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica.
- আমগাছ দ্বিবীজপত্র ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদ।
- ভারতীয় উপমহাদেশ ও ব্রহ্মদেশকে (বর্তমান মিয়ানমার) আমের উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হয়।
|
জাতীয় ফুল | শাপলা |
| জাতীয় ফুল: শাপলা |
| শর্টনোট: - মূলত সাদা শাপলা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।
- শাপলা ফুলের সাদা রং বাংলাদেশের জনগণের পরিশুদ্ধ মনের প্রতীক।
- এই ফুলের পাপড়িগুলো দ্বারা বাংলাদেশের একতাবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে নির্দেশিত করে।
- শাপলা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম নিম্ফিয়া নৌচালি (Nymphaea nouchali).
- শাপলা ফুলের ইংরেজি নাম হচ্ছে Water-lily.
|
জাতীয় ফল | কাঁঠাল |
| জাতীয় ফল: কাঁঠাল |
| শর্টনোট: - কাঁঠাল বা কাঁঠাল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus.
- কাঁঠাল গাছের ইংরেজি নাম হচ্ছে Jackfruit Tree.
- সহজলভ্য এবং স্বল্পমূল্যের এই ফল একটি দিয়ে অনায়েসে পুরো পরিবার তৃপ্তিসহকারে খেতে পারে। আর এজন্যই হয়তো কাঁঠালকে গরীবের ফল বলা হয়।
|
জাতীয় পাখি | দোয়েল |
| জাতীয় পাখি: দোয়েল |
| শর্টনোট: - দোয়েল Passeriformes বর্গের Muscicapidae গোত্রের সদস্য [সূত্র: বাংলাপিডিয়া]
- দোয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis.
- এর ইংরেজী নাম হচ্ছে Magpie.
|
জাতীয় মাছ | ইলিশ |
| জাতীয় মাছ: ইলিশ |
| শর্টনোট: - ইলিশকে ইংরেজীতে Hilsa বলে।
- এটি Clupeiformes বর্গ এবং Clupeidae গোত্রের অন্তর্গত।
- বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। যেমন- ইলিশ, চন্দনা ইলিশ এবং গুর্তা/কানাগুর্তা ইলিশ।
- এর বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha.
|
জাতীয় পশু | রয়েল বেঙ্গল টাইগার |
| রয়েল বেঙ্গল টাইগার |
| শর্টনোট: - বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনে।
- এর বৈজ্ঞানিক নাম Panthera tigris.
|
জাতীয় বন | সুন্দরবন |
| জাতীয় বন: সুন্দরবন |
| শর্টনোট: - সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী।
- পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন।
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টাইডল (স্রোতজ) বন সুন্দরবন।
- সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ৭৯৮ তম।
- সুন্দরবন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। [তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া]
- সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। [সূত্র: জেলা তথ্য বাতায়ন, খুলনা]
- বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬০.১৭%)। [সূত্র: বন অধিদপ্তর]
- ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- সুন্দরবনের ঢাংমারী (দাকোপ, বাগেরহাট), শরণখোলা (শরণখোলা, বাগেরহাট) ও চাঁদপাই (মোংলা, বাগেরহাট) এলাকাকে গাংগেয় ও ইরাবতী ডলফিনের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।
- সুন্দরবনের প্রধান প্রধান আকর্ষণীয় স্থানগুলো হলো কটকা, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, পুটনী দ্বীপ, নীলকমল।
|
জাতীয় ধর্ম | ইসলাম |
| জাতীয় ধর্ম: ইসলাম |
| শর্টনোট: - গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
- মুসলমান জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে আছে।
- সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
- এই ৯১ ভাগ মুসলিমের মধ্যে ৮৮± ভাগ বাংলাদেশী মুসলমান এবং বাকি ২± ভাগ বিহারী মুসলমান।
- হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ধর্মালম্বী মানুষও আছে যাদের মধ্যে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা বিদ্যমান।
|
জাতীয় খেলা | কাবাডি |
| জাতীয় খেলা: কাবাডি |
| শর্টনোট: - বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি’র পূর্ব নাম ছিল হা-ডু-ডু।
- ১৯৭২ সালে হা-ডু-ডু খেলাকে ‘কাবাডি’ নামকরণ করা হয়।
- ১৯৭২ সালেই ‘কাবাডি’ কে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
|
জাতীয় কবি | কাজী নজরুল ইসলাম |
| কাজী নজরুল ইসলাম | | শর্টনোট: - কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কলকাতা থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকা নিয়ে আসা হয় ১৯৭২ সালের ২৪ মে।
- ১৯৭২ সালের ২৪ মে একই দিনে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়।
|
জাতীয় দিবস | ২৬ মার্চ (মহান স্বাধীনতা দিবস) |
| জাতীয় দিবস |
| শর্টনোট: - ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়।
- ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারী এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৬ মার্চকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সর্বোচ্চ মর্যাদায় দিনটি পালন করা হয়।
|
জাতীয় উৎসব | বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব (পহেলা বৈশাখ) |
| জাতীয় উৎসব | | শর্টনোট: - বাংলা সনের নতুন বর্ষবরণ উৎসবই হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব।
- প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১ তারিখ (এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ) রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে এমন বেশ কিছু উৎসব দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা হয়।
|
জাতীয় গ্রন্থাগার | জাতীয় গ্রন্থগার, আগারগাঁও, ঢাকা। |
| জাতীয় গ্রন্থাগার |
| শর্টনোট: - ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাদেশিক শাখা হিসেবে ঢাকায় প্রথম গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- জাতীয় গ্রন্থাগার প্রথমে অস্থায়ীভাবে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৯৭৪ সালের ৩ জানুয়ারী শেরেবাংলা নগরে জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য ২ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
- গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার যাত্রাকালে পূর্বের গ্রন্থাগার থেকে বই, জনবল এবং বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।
- পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে আগারগাঁয়ের নিজস্ব ভবনে জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী কার্যক্রম শুরু হয়।
- জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থপতি মাজহারুল ইসলাম।
|
জাতীয় মসজিদ | বায়তুল মোকাররম মসজিদ |
| বায়তুল মোকাররম মসজিদ |
| শর্টনোট: - ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে মসজিদটির অবস্থান।
- ১৯৮২ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
- বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্থপতি আবুল হুসাইন থারিয়ানি (পাকিস্তানি)।
- ১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মসজিদটিতে প্রথম নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
- ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করে।
- ৮.৩০ একর জমির উপর মসজিদটির অবস্থান।
- সমগ্র মসজিদ ভবন সর্বমোট আটতলা। তবে ছয়তলা পর্যন্ত মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
|
জাতীয় মন্দির | ঢাকেশ্বরী মন্দির |
| জাতীয় মন্দির: ঢাকেশ্বরী মন্দির |
| শর্টনোট: - মন্দিরটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত।
- বিশ শতকের প্রথম দশকে মন্দিরটির সংস্কারকালে তৎকালীন রাজা শ্রীযুক্ত রাজেন্দ্র নারায়ন রায় বাহাদুর এই মন্দিরের জন্য ২০ বিঘা জমি রেকর্ডভুক্ত করেন।
- পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কিছু অসাধু ব্যক্তির স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারণে মন্দিরের প্রায় ১৪ বিঘা জমি বেদখল হয়ে যায়।
|
জাতীয় স্মৃতিসৌধ | সম্মিলিত প্রয়াস, সাভার। |
| জাতীয় স্মৃতিসৌধ | | শর্টনোট: - জাতীয় স্মৃতিসৌধ গাজীপুর জেলার সাভার উপজেলার নবীনগরে অবস্থিত।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
- ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর লে. জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় স্মৃতিসৌধ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
|
জাতীয় উদ্যান | সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। |
| সোহরাওয়ার্দী উদ্যান |
| শর্টনোট: - বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এর অবস্থান।
- সোহরাওয়ার্দীর পূর্ব নাম রেসকোর্স ময়দান।
- এই রেসকোর্স ময়দান থেকেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন এবং স্বাধীনতার ঘোষণার সূত্রপাত ঘটে।
- ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা এই উদ্যানেই আত্মসমর্পন করেছিল।
|
জাতীয় জাদুঘর | জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা। |
| জাতীয় জাদুঘর |
| শর্টনোট: - ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ০৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
- জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন লর্ড কারমাইকেল।
- ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর জাতীয় জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
|
জাতীয় চিড়িয়াখানা | বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর, ঢাকা। |
| জাতীয় চিড়িয়াখানা | | শর্টনোট: - বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পূর্ব নাম ঢাকা চিড়িয়াখানা।
- ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়।
- ১৯৬৪ সালে জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
- জাতীয় চিড়িয়াখানা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
- জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রথমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে মিরপুরে স্থানান্তর করা হয়।
|
জাতীয় শিশু পার্ক | ঢাকা শিশু পার্ক। |
| জাতীয় শিশু পার্ক |
| শর্টনোট: - জাতীয় শিশু পার্কের অবস্থান শাহবাগ, ঢাকা।
- সরকারি খাতে শিশুদের বিনোদনের জন্য একমাত্র পার্ক হচ্ছে জাতীয় শিশুপার্ক।
- পার্কটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- প্রায় ১৫ একর জমির উপর পার্কটির অবস্থান।
- পার্কটির সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার।
- অন্যান্য দিন ২.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। [শুধুমাত্র শুক্রবার ২.৩০ থেকে কার্যক্রম শুরু করে]
|
জাতীয় পার্ক | ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক, গাজীপুর। |
| ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক |
| শর্টনোট: - গাজীপুর জেলার সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এর অবস্থান।
- ১৯৭৪ সালে ৫,০২২ হেক্টর জমির উপর ভাওয়াল শালবনে এটি গড়ে তোলা হয়।
- ১৯৮২ সালে এটিকে জাতীয় পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
|
জাতীয় বিমানবন্দর | হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। |
| হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
| শর্টনোট: - এর পূর্ব নাম ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
- এটি বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর।
- বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলায় এর অবস্থান।
- ১৯৮০ সালে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
- এর আগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল তেঁজগাও বিমানবন্দর।
- ১৯৮১ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই বিমানবন্দরটি।
|
জাতীয় স্টেডিয়াম | বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম |
| বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম |
| শর্টনোট: - রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে এর অবস্থান।
- এর পূর্ব নাম ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম।
- পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সম্মানার্থে এই স্টেডিয়ামের নাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়।
- ১৯৫৪ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়।
- এটি বাংলাদেশের প্রধান স্টেডিয়াম।
- দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৬,০০০।
|
জাতীয় সংবাদ সংস্থা | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) |
| জাতীয় সংবাদ সংস্থা: বাসস |
| শর্টনোট: - বাসাস এর সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ।
- বাসস হচ্ছে দেশ-বিদেশী কর্মরত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সংগঠন।
- ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারী এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
- দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের ঢাকা ব্যুরো অফিসকে বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থায় রূপান্তর করা হয়।
|
জাতীয় পরিচয়পত্র | National Identity Card (NID) |
| জাতীয় পরিচয় পত্র: NID |
| শর্টনোট: - জাতীয় পরিচয়পত্রের (National Identity Card)সংক্ষিপ্ত রূপ NID.
- কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালে।
- ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের বায়োমেট্রিক কার্যক্রম শুরু হয়।
- ২০১৬ সাল থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র শুরু হয়।
- ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের বাধ্যতামূলক অফিসিয়াল নথি।
|
জাতীয় সঙ্গীত | আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি.... |
| শর্টনোট: - জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ও সুরকার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- ১৯০৫ সালে (১৩১২ বঙ্গাব্দে) ‘আমার সোনার বাংলা’ প্রকাশিত হয়।
- ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- ২০০৬ সালের বিবিসির শ্রোতা জরিপে ‘আমার সোনার বাংলা’ শ্রেষ্ঠ বাংলা গান নির্বাচিত হয়েছিল।
|
রণসঙ্গীত | চল চল চল উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল.... |
| শর্টনোট: - বাংলাদেশের রণসঙ্গীতের রচয়িতা ও সুরকার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
- বাংলাদেশের রণসঙ্গীত ‘চল চল চল’ কবিতাটি কবির ‘সন্ধ্যা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
- ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের রণসঙ্গীত প্রথম প্রকাশিত হয়।
- বাংলাদেশের রণসঙ্গীত ‘চল চল চল’ কবিতাটি নতুনের গান শিরোনামে ‘শিখা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
- ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি এটি বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়।
|
ক্রীড়া সঙ্গীত | বাংলাদেশের দুরন্ত সন্তান আমরা দুর্দম দুর্জয় ক্রীড়াজগতের শীর্ষে রাখব আমরা শৌর্যের পরিচয়। |
| শর্টনোট: - বাংলাদেশের ক্রীড়া সঙ্গীতের রচয়িতা সেলিমা রহমান।
- বাংলাদেশের ক্রীড়া সঙ্গীতের সুরকার খন্দকার নূরুল আলম।
- এটি ১০ চরণ বিশিষ্ট একটি সঙ্গীত।
- বাংলাদেশের ক্রীড়া সঙ্গীতের প্রথম দুই লাইন- “বাংলাদেশের দুরন্ত সন্তান আমরা দুর্দম দুর্জয় / ক্রীড়াজগতের শীর্ষে রাখব আমরা শৌর্যের পরিচয়।”
- বাংলাদেশের ক্রীড়া সঙ্গীতের শেষ চরণ- “বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের নাম হবে গৌরবময়।”
|
জাতীয় স্লোগান | জয় বাংলা |
| শর্টনোট: - ২০২২ সালের ২ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষনা করা হয়।
- সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ শেষে এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষকগণ ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।
- সাংবিধানিক পদাধিকারগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদ্যাপন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।
|
কোন কোন দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়?
জাতীয় পতাকা হচ্ছে একটি দেশের প্রতীক স্বরূপ। ইচ্ছে করলে যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং সঠিক নিয়মে যে কোন দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষ দিনে বাংলাদেশের সরকারী, বেসরকারী এবং বৈদেশিক কূটনৈতিক ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যাপারে সাংবিধানিক আইন রয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মদিবস (ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী), মহান স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ), বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবসে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
২১ শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে। ২০০৮ সালের ১১ আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, পতাকা ও প্রতীক অধ্যাদেশ ১৯৭২ এর আর্টিকেল ৫ এ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার অধ্যাদেশটি সংশোধিত হয়েছে।
অর্ধনমিত পতাকা উত্তোলনের ব্যাপারে উক্ত সংশোধনীতে বলা হয়েছে , পতাকা দন্ডের চূড়া থেকে এক চতুর্থাংশ নিচে পতাকা বাধতে হবে। পতাকা উত্তোলনের সময় প্রথমে চূড়া পর্যন্ত উঠাতে হবে। তারপর পতাকাটি এক-চতুর্থাংশ নিচে নামিয়ে ফের চূড়া পর্যন্ত উঠাতে হবে তারপর পুনরায় এক চতুর্থাংশ নিচে এনে অর্ধনমিত অবস্থায় পতাকাটি বেঁধে ফেলতে হবে।
জাতীয় পতাকা বিষয়ক তথ্য
নিচে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতীক জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য শর্টনোট আকারে উপস্থাপন করা হলো:
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং লাল ও সবুজ।
- জাতীয় পতাকার লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক। আর উজ্জ্বল ঘন সবুজ ক্ষেত্রটি তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত গ্রামবাংলার প্রতীক।
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০ ঃ ৬ / ৫ ঃ ৩।
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় লাল সবুজের অনুপাত ৪ ঃ ১। অর্থাৎ ৪ ভাগ সবুজ ক্ষেত্র এবং ১ ভাগ লাল বৃত্ত।
- ১৯৭০ সালের ৬ জুন শিব নারায়ণ দাস জহুরুল হক হলের ১১৮ নং কক্ষে বসে সর্বপ্রথম আয়তক্ষেত্রের মাঝে লালবৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকার নকশা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হত।
- প্রথম দিকে বাংলাদেশের পতাকায় লাল বৃত্তের মধ্যে সোনালি রঙের বাংলাদেশের মানচিত্রের প্রতীক ছিল।
- বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকার রূপকার চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান।
- ২ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস।
- জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেয়া সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হয় ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারী।
- ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়।
- সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত।
- ১৯৭১ সালের ২ মার্চ জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বটতলার এক ছাত্রসভায় জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়।
- তৎকালীন ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
- ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকার পল্টনে সর্বপ্রথম ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাথে সাথে শাহজাহান সিরাজ কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।
- ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার ধানমন্ডিস্থ নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। (উল্লেখ্য, একই দিনে বাংলাদেশের সর্বত্র পতাকা উত্তোলন করা হয়)।
- সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
- ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনে তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনের প্রধান এম. হোসেন আলী বাংলাদেশের বাহিরে সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, চিফ হুইপ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবির্গ, প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, উপমন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক/কনস্যুলার/মিশনসমূহের প্রধানগণ তাদের গাড়ি বা জলযানে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে জাপান ও পালাউ-এর জাতীয় পতাকার আকৃতিগত মিল আছে।
জাতীয় সংগীতের মূলভাব
জাতীয় সংগীত একটি দেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক উপক্রম। এটি বিশ্বদরবারে একটি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক পরিচিতি এবং বাস্তব জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। একটি দেশের জাতীয় সংগীত সাধারণত ওই দেশের ব্যক্তিগত, সামাজিক, ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত দেশটির ভাষাপ্রীতি ও আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ২৫ চরণ বিশিষ্ট ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতার প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। কবির এই গানে বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ, নদীমাতৃক বাংলাদেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য এবং এই সৌন্দর্যের ছায়াতলে দেশপ্রেমের গভীর মাহাত্ম্য ফুটে উঠেছে। প্রকাশ পেয়েছে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র। প্রাণ জুড়ানো এই গানটি নিবিড়ভাবে উপভোগ করলে কঠিন মনেও দেশপ্রেম জাগ্রত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার নিয়ম
গানটির মান, মর্যাদা ও গুরুত্ব বজায় রাখতে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় অবশ্যই দেশ ও জাতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময়ে সঠিক উচ্চারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগীতের শব্দ, স্বরস্থান এবং উচ্চারণের মাধ্যমে গানের মান অক্ষুন্ন রাখতে হবে। নিচে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
- জাতীয় সংগীত পরিবেশেনের মূল বিধান হলো প্রথম ১০ লাইন কণ্ঠসঙ্গীত হিসেবে এবং প্রথম ০৪ লাইন যন্ত্রসঙ্গীত হিসেবে।
- জাতীয় সংগীত কখনও পুরো ১০ লাইন আবার কখনও শুরুর দুই লাইন গাওয়ার বিধান রয়েছে।
- শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অত্যন্ত ভক্তির সাথে জাতীয় সংগীতের পুরো ১০ লাইন গাইতে হবে।
- স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের প্যারেডের সময় প্রথম দুই লাইন গাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
- দেশের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রমের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সংগীতের পুরো ১০ লাইন গাইতে হয়।
- রাষ্ট্রপতি যদি বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংসদে প্রবেশ করেন তবে বক্তব্যের শুরুতে এবং শেষে পূর্ণ জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এই ভাষণ যদি জাতির উদ্দেশ্যে সম্প্রচার করা হয় তখন শুরু এবং শেষে প্রথম দুই লাইন গাইতে হয়।
- এছাড়া রাষ্ট্রীয় যে কোনো কাজে জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন গাওয়ার বিধান রয়েছে।
- জাতীয় সংগীতের সুর ও তাল ঠিক রেখে গাইতে হবে। বর্তমানে সুর ও তাল ঠিক রাখতে যেকোনো অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের রেকর্ডেড ভার্সন বাজানো হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বিষয়ক তথ্য
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য শর্টনোট আকারে নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- জাতীয় সংগীতের রচয়িতা ও সুরকার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- জাতীয় সংগীতের প্রথম ইংরেজি অনুবাদক সৈয়দ আলী আহসান।
- ২৫ চরণের ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতার প্রথম ১০ লাইন জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ সর্বপ্রথম ১৯০৫ সালে (১৩১২ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত হয়।
- জাতীয় সংগীতটি সর্বপ্রথম ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতাটি কবির গীতবিতান কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
- ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারী গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলকগুলো কি নির্দেশ করে?
জাতীয় স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকল সামরিক, বেসামরিক, বাঙালি ও অবাঙালি শহীদদের স্মরণে নির্মিত এক স্থাপনা। এটি গাজীপুর জেলার সাভার উপজেলার নবীনগরে অবস্থিত। স্থাপনাটিতে মোট সাতটি ফলক আছে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূত্রপাত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে চুড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের নিদর্শন বহন করে। নিচে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলকগুলোর তাৎপর্য উল্লেখ করা হলো:
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
- ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
- ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন
- ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন
- ১৯৬৬ সালের ০৬ দফা আন্দোলন
- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান
- ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বিষয়ক তথ্য
- জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারের নবীনগরে অবস্থিত।
- এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
- ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
- ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর লে. জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় স্মৃতিসৌধ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
- সৈয়দ মাইনুল হোসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপর নাম সম্মিলিত প্রয়াস।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট বা ৪৫.৭২ মিটার।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফলকের সংখ্যা ০৭টি।
- ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর মালদ্বীপের আদ্দুসিটিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা বা প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়।
- রেপ্লিকাটির ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।
লেখকের মন্তব্য
বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী বিশ্ব দরবারে দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। আশাকরি জাতীয় বিষয়সমূহ নিয়ে রচিত এই আর্টিকেলটি প্রতিটি বাঙালির মনে গর্ব ও আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করবে। আর্টিকেলটি যেকোনো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার উপযোগী করে নির্ভুল তথ্য দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি। তবুও কোনো প্রকার সংশোধন, সংযোজন কিংবা পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে আপনার সুচিন্তিত মতামত কমেন্টবক্সে জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url