ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম এবং প্রাপ্তিস্থানসহ ছাগলের জাত চেনার উপায়
ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম এবং এদের মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে খামার স্থাপন করলে প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই সফলতার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আর সেজন্য ছাগলের জাত চেনার উপায় জানা প্রত্যেক ছাগল খামারী জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ছাগল পালনে ইচ্ছুক প্রত্যেকের উচিত কোন ছাগল আমাদের দেশের জন্য উপযোগী, কোন জাতের ছাগলের মাংস ও দুধ উৎপাদন কেমন কিংবা কোন ছাগলের বাচ্চা প্রসব সক্ষমতা কতটুকু সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে ছাগল খামার স্থাপন করা।
ভূমিকা
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর আমিষজাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ছাগলের গুরুত্ব অপরিসীম। এছড়া আমাদের দেশে ছাগল পালনে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। ছাগল পালনের মাধ্যমে তুলনামূলক অল্প পূঁজি, অল্প জায়গা এবং অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশের ভূমিহীন প্রান্তিক চাষী এবং দুস্থ মহিলাদের জন্য গাভীর পরিবর্তে ছাগল পালন অধিক লাভজনক। আর এজন্যই হয়তো বাংলাদেশে ছাগলকে গরীবের গাভী বলা হয়ে থাকে।
পারিবারিক খামারে ২-১ টি ছাগল পালনে কোনো প্রকার বিচার বিশ্লেষণ না করলেও বাণিজ্যিকভাবে বিশদ আকারে ছাগলের খামার স্থাপন করার পূর্বে অবশ্যই একজন খামারীকে ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং ছাগলের জাত চেনার উপায় সম্পর্কে একাধিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং বিচারবিশ্লেষণ শেষে খামার স্থাপন করা উচিত। অন্যথায় খামার স্থাপন শেষে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার ফলে সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
ছাগলের শ্রেণীবিন্যাস
ছাগলের বৈজ্ঞানিক নাম Capra aegagrus hircus যাকে ছয়টি ধাপ বা স্তরে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। নিচে ছাগলের শ্রেণীবিন্যাস উল্লেখ করা হলো:
শ্রেণী (Class) |
: |
স্তন্যপায়ী (Mammalia) |
বর্গ (Order) |
: |
আরটিওডাকটাইলা (Artiodactyla) |
উপবর্গ (Sub-order) |
: |
রোমন্থকারী (Ruminantia) |
গোত্র (Family) |
: |
গোজাতীয় (Bovidae) |
গণ (Genus) |
: |
কেপরা (Capra) |
প্রজাতি (Species) |
: |
ছাগল (Capra hircus) |
ছাগল পালনের সুবিধা
আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে, পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালন ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ছাগল পালন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ এদের মাংস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। ছাগল পালনের অসংখ্য সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- ছাগল দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। প্রতি বারেই এরা ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশী জাত ব্ল্যাক বেঙ্গলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ এ জাতের ছাগল বছরে দু’বার এবং প্রতিবার ১-৪টি বাচ্চা দিয়ে থাকে।
- শারীরিক গঠনে অনেক ছোট হওয়ায় অন্যান্য গবাদিপশুর তুলনায় ছাগল পালনে জায়গার পরিমাণ অনেক কম লাগে। এক্ষেত্রে বাড়ির উঠানে, বারান্দার এক কোণে এমনকি শয়ন ঘরের খাটের নিচে বা এক কোণে রেখেও এদের পালন করা যায়।
- অন্যান্য গবাদিপশুর তুলনায় ছাগলের দাম তুলনামূলক অনেক কম। তাই সীমিত বিনিয়োগে ছাগল পালন করে খুব অল্প সম্পয়ে ছাগল পালন করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
- ছাগলের রোগ-ব্যাধি গরুর তুলনায় কম। ফলে এ প্রকল্পে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।
- ছাগলের খাদ্য খরচ নিতান্তই কম এবং এদের খাবার খুবই সহলভ্য। সাধারণত বাড়িতে থাকা বিভিন্ন গাছ যেমন- কাঁঠাল, জাম, লিচু, আম ইত্যাদি গাছের পাতা ছাগলের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্যের উৎস।
- ছাগল নিজ দেহের তুলনায় দৈনিক যে খাদ্য খায় তার চেয়ে অনেক বেশি মাংস ও দুধ উৎপাদন করে। এই উৎপাদন ক্ষমতা গরুর শতকরা ৩৫-৩৮ ভাগ কিন্তু ছাগলের ৪৮ থেকে ৭১ ভাগ।
- গ্রামের অনেক অসহায় সম্বলহীন এবং দুঃস্থ মহিলা ও পরিবার ইচ্ছা করলেই একটি ছাগল পালনের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারে। একান্তই অস্বচ্ছলতা সাপেক্ষে প্রয়োজনে সে কারো কাছ থেকে বর্গা নিয়ে শুরু করে প্রথম বিয়ানের পর যে বাচ্চা হয় সে বাচ্চা থেকে নিজেই ছাগলের মালিক হয়ে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।
- পারিবারিকভাব ছাগল পালন করতে বাড়তি শ্রমের প্রয়োজন হয় না। পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েরা ছাগলের যত্ন করতে পারে।
- খামার ভিত্তিক ছাগল পালন করতে চাইলে তুলনামূলক কম বিনিয়োগে খামার শুরু করে খুব দ্রুতই খামারের পরিধি বড় করা সম্ভব।
- অল্প বিনিয়োগে নিজের বেকারত্বের পাশাপাশি অন্যের জন্যও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।
- ছাগলকে পতিত জমি, ক্ষেতের আইল, বাঁধ ও রাস্তায় পালন করা যায়।
- ছাগাল তুলনামূলক বড় গাছের বাগানে যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল বাগানের আগাছা খেয়ে সেখানেই মল-মূত্র ত্যাগ করে। যা বাগানের সার হিসাবে গাছের পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে।
- গরু ও ছাগল একই চারণ ভূমিতে চরানো যায়। যে সমস্ত দ্রব্য গরু খায় না ছাগল তা খেতে পারে।
- অল্প পরিমাণে ছাগল পালন করলে গরুর সঙ্গে ছাগলকে একই গোয়ালে রাখা যায়। এতে করে পৃথক ছাগলের প্রয়োজন হয় না।
- উন্নত দেশে ছাগল, ভেড়া ও গরুর অর্থনৈতিক অবদানের অনুপাত যথাক্রমে ১১২:১০০:৭০। অর্থাৎ ছাগলের অর্থনৈতিক অবদান অনেক বেশি।
- ভূমিহীন লোকেরা ২-৩টি ছাগল অনায়াসে অন্যের জমির মধ্যেও পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাগলগুলো ফসলের পরববর্তী সময়ে উক্ত জমিগুলোতে পালিত হয়ে থাকে।
- যাদের প্রচুর ফসলি তাদের ফসলের বাইপ্রোডাক্টগুলো সদ্ব্যবহারের জন্য ছাগল পালন করা ভালো। কারণ এতে লেবার খরচ অনেক কমে যায়।
- ছাগল পালন করলে ব্যাংক বা সরকারি সহযোগিতা খুব সহজেই পাওয়া যায়।
এছাড়াও ছাগলের মাসং, দুধ ও অন্যান্য উপাদানের বেশ বিছু সুবিধা আছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ছাগলের মাংস অতি সুস্বাদু ও উপাদেয় আমিষ।
- ছাগলের মাংস সকল সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য।
- ছাগলের দুধ সহজে হজমযোগ্য। যারা গ্যাস্টাইটিস বা পাকস্থলী প্রদাহে ভোগেন তাঁদের জন্য ছাগলের দুধ খুবই উপকারী।
- ছাগলের দুধ এলার্জি, এ্যাজমা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- ছাগলের চামড়া অত্যন্ত উন্নতমানের শিল্প সামগ্রী। বাংলাদেশের দেশী কালো জাতের ছাগলের চামড়ার চাহিদা বিশ্বব্যাপী।
- কোনা কোনো জাতের ছাগলের লোম বা পশম ব্রাশ, কম্বল, থলে, মাদুর ইতাদি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
ছাগলের জাত কত প্রকার
পশুবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ছাগলের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। নিচে ছাগলের শ্রেণী বিভাগ উল্লেখ করা হলো:
ক্র. নং | শ্রেণীবিভাগ |
০১. | শিং ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ: পশুবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন জরিপে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্য এশিয়ার ছাগলের মধ্যে দু’ধরনের শিং পরিলক্ষিত হয়েছে। এজন্য ছাগলের শিং-এর উপর ভিত্তি করে এদেরকে দু’শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (ক) বেজোয়ার: সর্পিল (Spiral) শিং ওয়ালা ছাগল। (খ) মারঘর: পাঁকানো (Twisted) শিং ওয়ালা ছাগল। |
০২. | জন্মগত শ্রেণীবিভাগ: ছাগলের জন্মস্থানের উপর ভিত্তি করে এদেরকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) এশিয়ান ছাগল: এদের জন্মস্থান বা উৎপত্তিস্থল এশিয়া মহাদেশে। (খ) আফ্রিকান ছাগল: এদের জন্মস্থান বা উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা মহাদেশে। (গ) ইউরোপিয়ান ছাগল: এদের জন্মস্থান বা উৎপত্তিস্থল ইউরোপ মহাদেশে। (ঘ) ওরিয়েন্টাল ছাগল: এরা ভারতবর্ষ ও তার আশ-পাশ এলাকার বাসিন্দা। |
০৩. | উৎপাদন ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ: উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে ছাগলকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) মাংস উৎপাদনকারী ছাগল: এই শ্রেণীর ছাগল মূলত মাংস উৎপাদনের জন্যই বেশি উপযোগী। (খ) দুগ্ধজাত বা দুধ উৎপাদনকারী ছাগল: যেসকল ছাগল থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তাদেরকে এই শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। (গ) পশম উৎপাদনকারী ছাগল: কিছু প্রজাতির ছাগল আছে যাদেরকে শুধুমাত্র পশম উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়ে থাকে। |
০৪. | দেহের আকৃতি ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ: ছাগলের স্কন্ধ পর্যন্ত উচ্চতার উপর ভিত্তি করে ছাগলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) বড় জাতের ছাগল (খ) ছোট জাতের ছাগল (গ) বামন জাতের ছাগল |
স্থান ও আবহাওয়া ভেদে পৃথিবীরি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল পাওয়া যায়। স্থানীয় আবহাওয়া ও তাদের পারিপার্শ্বিকতার ওপর নির্ভর করে এদের দেহের গঠন, আকৃতি ও শরীরের লোমের তারতম্য হয়। শীত প্রধান দেশের ছাগলের দেহের আকৃতি বড় এবং পেট মোটা হয়। এদের দেহের লোমও লম্বা এবং ঘন হয়।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ছাগলের চামড়া নরম, মোটা, স্থিতিশীল এবং ভাঁজ করলে পুনঃঅবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা রাখে। তাই বিশ্বজুড়ে এ জাতীয় ছাগলের চামড়ার তুলনা নেই। এজন্য বাংলার ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক বেঙ্গল বা কালো জাতের ছাগলের চামড়া বিশ্ববাজারে অধিক মূল্যবান। মূলত এরাই বামন জাতের ছাগল। এরা ব্ল্যাক বেঙ্গল নামে পরিচিত হলেও, এদের গায়ের রং সাদা, ধুসর, বাদামী এবং সাদা ও কালোর মিশ্রণেও হয়ে থাকে।
ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ২৩৪ প্রজাতির ছাগলের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের নিজ জাত হলো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কৃত্রিম প্রজননের অবদানে দেশী জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাড়াও বেশকিছু বিদেশী জাতের ছাগলও এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। নিচে ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম উল্লেখ করা হলো:
ক্র. নং | ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম | পরিচিতি |
০১. | ব্লাক বেঙ্গল ছাগল | বাংলাদেশের দেশী ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গল নামে পরিচিত। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিম বঙ্গ ও আসামসহ ভারতের বেশকিছু স্থানে পালন করতে দেখা যায়। |
০২. | যমুনাপাড়ি ছাগল | যমুনাপাড়ি ছাগলের উৎপত্তিস্থল মূলত ভারত। প্রথমদিকে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে এ জাতের ছাগল পালন শুরু করলেও সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা খামারীরা যমুনাপাড়ি ছাগল পালন করছেন। এদের নাম যমুনাপাড়ি হলেও আমাদের দেশের কোনো কোন অঞ্চলে এরা রাম ছাগল নামেও বেশ পরিচিত। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। আবদ্ধ অবস্থায় বা খামারে পালনের জন্য এ জাতের ছাগল বেশ উপযোগী। তবে এ জাতের ছাগল গ্রামীণ পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে বিধায় ইচ্ছে করলে আমাদের দেশী ছাগলের ন্যায় এদেরকেও গ্রামীণ পরিবেশের উম্মুক্ত অবস্থায় পালন করা যেতে পারে। |
০৩. | তোতাপুরি ছাগল | তোতাপুরি ছাগলের উৎপত্তিস্থল ভারতে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এ জাতীয় ছাগল পালনেরে হার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখের গঠন অনেকটা তোতা পাখির মত হওয়ায় এদের নামকরণও করা হয়েছে তোতাপুরি নামে। বর্তমানে বাংলাদেশে পালিত বিদেশী কিংবা সংকর জাতের যত ছাগল আছে এদের মধ্যে তোতাপুরি জাতটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। |
০৪. | শিরোহি ছাগল | ভারতে এ জাতের ছাগলের উৎপত্তি। ভারতে এর উৎপত্তি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে শিরোহি জাতের ছাগল পালিত হচ্ছে। দুধ উৎপাদনে এ জাতের ছাগলের জুড়ি নেই। |
০৫. | বিটল জাতের ছাগল | পাকিস্তান ও ভারতে এ জাতের ছাগলের উৎপত্তিস্থল। তবে কারো কারো মতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবেই এ জাতের ছাগলের প্রথম সন্ধ্যান মেলে। ভারতে এ জাতের ছাগল ‘অমৃতসরী’ হিসেবেও পরিচিত। সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারতসহ বাংলাদেশেও বিটল জাতের ছাগল পালন দেখা যায়। মাংস এবং দুধ উভয় উদ্দেশ্যেই এ জাতের ছাগল পালন লাভজনক। |
০৬. | বোয়ার ছাগল | বোয়ার ছাগল হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের জাত। এর মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ১৯২০ সালের দিকে আফ্রিকান সরকার এর বংশবৃদ্ধির জন্য নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জাতটি আফ্রিকান হলেও মাংস উৎপাদনের সফলতার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের বেশ কিছু খামারী পরীক্ষামূলকভাবে এ জাতীয় ছাগল পালনে লিপ্ত আছে। |
০৭. |
বারবারি ছাগল | বারবারি ছাগলের উৎপত্তিস্থল মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকায়। ভারতের উত্তর প্রদেশের এটোয়া, এটা, আগ্রা এবং মথুরা জেলাতেও এই ছাগল পাওয়া যায়। |
০৮. | সানেন ছাগল | সানেন জাতের ছাগলের উৎপত্তিস্থল সুইজারল্যান্ড হলেও হল্যান্ডের সমতল ভূমিতে এ জাতের ছাগল প্রচুর দেখা যায়। দুগ্ধ খামারের জন্য এ জাতীয় ছাগল বেশ উপযোগী। |
০৯. | টোগেনবার্গ ছাগল | এ জাতের ছাগল সুইজারল্যান্ড ও আমেরিকায় পাওয়া যায়। এই ছাগল সাধারণত মাংস উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। |
১০. | ব্রিটিশ টোগেনবার্গার ছাগল | ব্রিটিশ টোগেনবার্গ ছাগল মিশ্র সংকর জাতের। এরা মূলত দুধ এবং মাংস উভয় উদ্দেশ্যেই পালিত হয়ে থাকে। |
১১. | এলপাইন ছাগল | এ জাতের ছাগল ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের অলিগ অঞ্চলে পাওয়া যায়। এরাও দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালিত হয়। |
১২. | অ্যাংলো নুবিয়ান ছাগল | ভারতের যমুনাপাড়ী এবং মিশরের জেরিবাই জাতের ছাগল হতে উৎপন্ন সংকর জাতের ছাগল অ্যাংলো নুবিয়ান। তবে ব্রিটেনের উদ্ভাবিত নুবিয়ান ছাগল অত্যন্ত উন্নতমানের। এদের মাংস উৎপাদনের হার অনেক বেশি। তবে সেসব দেশের কেউ কেউ মাংসের পাশাপাশি দুধ উৎপাদনের জন্যও এদের পালন করে থাকেন। |
১৩. | সুরতি ছাগল | ভারতের গুজরাটে সুরতি ছাগলের উৎপত্তিস্থল। সাধারণত দুধ উৎপাদনের জন্যই এ জাতের ছাগল পালন করা হয়ে থাকে। |
১৪. | কাশ্মীরী বা তিব্বতী ছাগল | কাশ্মীর এবং তিব্বতের পাহাড়ী অঞ্চলে এই ছাগল পাওয়া যায়। সাধারণত পাহাড়ী অঞ্চলে গাড়ি টানার কাজে এই ছাগল ব্যবহৃত হয়। |
১৫. | এ্যাংগোরা ছাগল | এশিয়া মাইনরের এ্যাংগোরা অঞ্চল এ জাতের ছাগলের উৎপত্তিস্থল। এ জাতের ছাগল মূলত পশম উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। |
১৬. | সোনালী গোয়েনসী | উৎপত্তিস্থল গোয়েনশীর নামানুসারে এই ছাগলের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ গোট সোসাইটি ১৯৭০ সালে একটি স্বতন্ত্রখাত হিসাবে এই ছাগলকে তালিকাভুক্ত করেন। ১৯৭৪ সালে বৃটিশ সানেন পাঁঠা দিয়ে গোয়েনসী পাঠীর সাথে প্রজনন করে সংকর জাতের এই সোনালী গোয়েনসী জাতের ছাগল উৎপাদন করেন। |
১৭. | মালাবারি জাতের ছাগল | এ জাতের ছাগল কেরেল্লার মালবারি অঞ্চলে পাওয়া যায়। মালবারি জাতের ছাগল আরব দেশীয় দুধাল জাতের ছাগল হতে উৎপন্ন হয়েছে। আরব দেশের ছাগলের সাথে দেশী ছাগলের সংকরায়নের মাধ্যমে মালবারি ছাগলের উৎপত্তি। |
১৮. | পশমিনা জাতের ছাগল | পশমিনা জাতের ছাগল হিমাচল প্রদেশে পাওয়া যায়। এরা সাধারণ খাড়া পাহাড়ী অঞ্চলে ভারবাহী কাজে ব্যবহার করা হয়। |
১৯. | গাদ্দি জাতের ছাগল | ভারতের হিমাচল প্রদেশে হিমালয়া, চাম্পা, কানগায়া, কালু, বিলাশপুর, শিমলা কিনিয়ার এবং লাবুল অঞ্চলে পাওয়া যায়। এ জাতীয় ছাগল মাংসের জন্য বিখ্যাত এবং মাংসে চর্বির পরিমাণ খুবই কম থাকে। |
২০. | মারওয়ারি জাতের ছাগল | ভারতের রাজস্থানের মারওয়ারি অঞ্চলে এ জাতের ছাগলের উৎপত্তিস্থল। এরা খুব কস্ট সহিষ্ণু এবং রোগ-বালাই প্রতিরোধক। মূলত মাংসের জন্যই এরা বেশ জনপ্রিয়। |
পরীক্ষামূলকভাবে উপরোল্লিখিত বিভিন্ন জাতের বেশকিছু ছাগল বাংলাদেশে পালন হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই নিম্নোক্ত জাতগুলোই এদেশের খামারীরা বেশি পালন করে থাকেন:
|
ছাগলের জাত চেনার উপায়
শারীরিক্ত গঠন, মাথার শিং, গায়ের রং ও পশম এবং দেহের বাহ্যিক আকৃতিই মূলত ছাগলের জাত চেনার সহজ উপায়। এছাড়াও কিছু পারিপার্শ্বিক বিষয় এবং প্রজননকেন্দ্রে সংরক্ষিত নথি থেকে ছাগলের জাত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে ছাগলের জাত চেনার উপায় হিসেবে এদের দেহের বাহ্যিক গঠনই সর্বজন স্বীকৃত এবং সহজ পদ্ধতি। নিচে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলের জাত চেনার উপায় সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের দেশী জাতীয় ছাগল ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ:
- নাম ব্ল্যাক বেঙ্গল হলেও এদের গায়ের রং সাদা, ধুসর, বাদামী এবং সাদা ও কালোর মিশ্রণেও হয়ে থাকে।
- এ জাতের ছাগলের কান সোজা ও খাঁড়া এবং শিং বাঁকানো থাকে।
- এদের দেহের গঠন খুব ছোট এবং স্বভাবতই পায়ের সাইজও বেশ ছোট।
- ছোট হলেও এদের শরীর বেশ আটশাট ও মাংসল
- এদের বুক বেশ প্রশস্ত এবং পিঠ সোজা হয়।
- এ জাতের ছাগলের লোম ছোট ও নরম হয়।
- আফ্রিকার বামন জাতের ছাগলের মতো এরা অত্যাধিক কষ্ট-সহিষ্ণু ও চঞ্চল।
- স্ত্রী ছাগল ৯-১০ মাস বয়সে প্রথম প্রজননের যোগ্য হয়।
- ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে।
- এ জাতের ছাগল বছরে দু’বার এবং প্রতিবার ১টি থেকে ৪টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে।
- পূর্ণ বয়স্ক একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ২৫-৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অন্যদিকে পূর্ণ বয়স্ক ছাগীর ওজন সর্বোচ্চ ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত হয়।
- এ জাতের ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয়।
- এদের চামড়ার মান উন্নত বিধায় বিশ্বব্যাপী এদের চাহিদা রয়েছে।
যমুনাপাড়ি ছাগলের বৈশিষ্ট্য / রাম ছাগল চেনার উপায়
যমুনাপাড়ি ছাগলের বৈশিষ্ট্য কিংবা রাম ছাগল চেনার উপায়সমূহ নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- যমুনাপাড়ি ছাগলের গায়ের রং কালো, বাদামী, সাদা বা বিভিন্ন রং এর সংমিশ্রণে হয়ে থাকে।
- যমুনাপাড়ি ছাগলের পা খুব রম্বা হয়।
- এদের কান লম্বা, মোচড়ানো এবং ঝুলানো থাকে। সাধারণত এদের কান ২০-২৫ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এদের দেহের গড় উচ্চতা ৩২-৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এদের নাক অনেকটা উঁচু হয়।
- এদের শরীরের লোম আমাদের দেশী জাতের তুলনায় বেশ লম্বা হয়।
- বিশেষ করে পিছনের পায়ের লোমগুলো বেশি লম্বা থাকে।
- পূর্ণবয়স্ক একটি যমুনাপাড়ি পুরুষ ছাগলের ওজন ৭০-৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অন্যদিকে পূর্ণবয়স্ক একটি যমুনাপাড়ি ছাগীর ওজন ৫০-৬০ কোজ পর্যন্ত হয়।
- যমুনাপাড়ি ছাগী বছরে একবার এবং সাধারণত একটি বাচ্চা প্রসব করে।
- এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেশ সন্তুষজনক। ভাল খাদ্য ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একটি ছাগী প্রতিদিন ২-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে।
- এরা প্রতি বিয়ানে ৩০৫ দিন দুগ্ধদানকালে সর্বমোট ৬০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
- এ জাতের ছাগলের সাথে অ্যাংলো নুবিয়ান জাতের ছাগলের বেশ সাদৃশ্য রয়েছে।
তোতাপুরি ছাগল চেনার উপায়
তোতাপুরি জাতের ছাগল চেনার উপায় এর নামের সাথেই সাদৃশ্য রয়েছে। নিচে তোতাপুরি ছাগল চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
- তোতাপুরি ছাগল চেনার অন্যতম উপায় হলো এদের মুখের গড়ন অনেকটা তোতা পাখির মতো।
- তোতাপাখির নিচের ঠোঁট যেমন উপরের ঠোঁটের তুলনায় সামনের দিকে অগ্রসর তেমনি তোতাপুরি ছাগলেরও নিচের ঠোঁট বা চোয়াল উপরের ঠোঁটের চেয়ে সামনের দিকে বাড়ন্ত অবস্থা থাকে।
- কখনও কখনও এদের নিচের ঠোঁট বা চোয়াল দ্বারা উপরের ঠোঁট ঢেকে থাকতেও দেখা যায়।
- এদের নাক বেশ চাপা এবং উপরের ঠোঁটের সাথে লেপ্টে থাকে।
- এদের কান বেশ বড় হয় এবং ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এদের কান এতটাই বড় হয় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের কান থুতা বা চিবুকের নিচ পর্যন্ত চলে আসে।
- এদের গায়ের সুনির্দিষ্ট কোনো কালার হয় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাদা রংয়ের সাথে কালো অথবা বাদামী রংয়ের মিশ্রণে ছোপ ছোপ ধরনের হয়ে থাকে।
- এদের মাথার তালুর দিকের অংশটুকু অন্যান্য ছাগলের তুলনায় খানিকটা উঁচু থাকে।
- এদের দেহের গঠন বেশ বড় ও লম্বাকৃতির হয়ে থাকে।
- এ জাতীয় ছাগলের গলবিল খানিকটা ঝুলন্ত থাকে এবং বড় বড় পশম দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে।
- এ জাতের ছাগলের শিং সাধারণত খুব একটা বড় হয় না।
- এ জাতীয় ছাগলের দুধ উৎপাদনের হার তুলনামূলক কম হলেও মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য তোতাপুরি ছাগল বেশ লাভজনক।
- পূর্ণবয়স্ক তোতাপুরি একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ৮০-৯০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অন্যদিকে একটি তোতাপুরি ছাগীর ওজন ৬০-৭০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বোয়ার ছাগলের বৈশিষ্ট্য
ব্যাপক হারে মাংস উৎপাদনের জন্য বোয়ার ছাগল হচ্ছে সর্বোত্তম। নিচে বোয়ার ছাগলের বৈশিষ্ট্যসমূহ উপস্থাপন করা হলো:
- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জাতীয় ছাগলের গায়ের রং সাদা এবং মাথার দিকে বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও এরা পুরোপুরি সাদা কিংবা বাদামী অথবা সাদা ও বাদামীর মিশ্রণেও হতে পারে।
- এদের কান মোটামুটি লম্বা ও সর্বদা দোদুল্যমান অবস্থা থাকে।
- পূর্ণবয়স্ক একটি বোয়ার ছাগলের গলবিলে দাড়ির মত বড় বড় পশম এবং সবগুলো পায়ের উপরের অংশের পশমগুলো বেশ বড় থাকে।
- এরা স্বভাবে বেশ ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির হয়।
- এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও উর্বরতার হার অত্যধিক বেশি হওয়ায় এরা খুব দ্রুত বর্ধনশীল।
- একটি বোয়ার ছাগী মাত্র পাঁচ মাস বয়সেই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে।
- এরা প্রতি বছরে ২ বার বাচ্চা প্রসব করে থাকে।
- বোয়ার জাতের ছাগী সাধারণ প্রথম বিয়ানে ১টি বাচ্চা প্রসব করলেও পরের প্রতি বিয়ানে এরা ২টি করে বাচ্চা প্রসব করে থাকে।
- এদের দুধ উৎপাদনেরে পরিমাণ একেবারেই কম। প্রতি দুগ্ধদানকালে এরা সর্বোচ্চ ৬৫-৬৮ লিটার পর্যন্ত দুধ দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
- পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ বোয়ার ছাগলের ওজন ৭০-১৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- অন্যদিকে একটি বোয়ার ছাগীর ওজন হয় সর্বোচ্চ ৫০-৮০ কেজি পর্যন্ত।
- সঠিক পরিচর্যা ও সুষম খাবার ব্যবস্থাপনায় বোয়ার জাতের ছাগলের দৈনিক গড় বৃদ্ধির হার পুরুষ ছাগলের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৫০ গ্রাম এবং ছাগীর ক্ষেত্রে ১৮৬ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
শিরোহি জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্য
শিরোহি জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্য এবং এদের জাত চেনার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:
- শিরোহি জাতের ছাগলের গায়ের রং সাধারণত ধুসর বা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে।
- এদের গায়ে মাঝে মাঝে ছোট ছোট ছাপ থাকে এবং শরীরে লোম সুবিন্যস্ত।
- এ জাতীয় ছাগলের কান যমুনাপাড়ি ছাগলের ন্যায় লম্বা, মোচরানো এবং ঝুলানো।
- এদের শিং স্পাইরাল এবং পিছনের দিকে বাঁকানো।
- এ জাতের ছাগল প্রতি বিয়ানে একসঙ্গে ১-৫টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।
- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুধ উৎপাদনের জন্য এ জাতীয় ছাগলই উত্তম।
- সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনায় এ জাতের একটি ছাগী দৈনিক ৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
- দুগ্ধদানকালে পুনরায় গর্ভবতী না হলে এরা একটানা দু’বছর পর্যন্ত দুধ দিতে পারে।
বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য
বিটল ছাগলের জাত চেনার উপায় এবং তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
- বিটল ছাগলের সুনির্দিষ্ট কোনো গায়ের রং নেই। এরা কালো, সাদা, বাদামী কিংবা কালো ও বাদামীর মধ্যে সাদার মিশ্রণও থাকতে পারে।
- এদের কান লম্বা ও ঝুলানো অনেকটা যমুনাপাড়ি ছাগলের মতো।
- এ জাতীয় ছাগলের নাক সাধারণত রোমান টাইপের হয়ে থাকে।
- এদের শিং পিছনের দিকে বাঁকা থাকে।
- এদের লেজ তুলনামূলকভাবে ছোট ও পাতলা হয়ে থাকে।
- বিটল ছাগলের শরীরের দৈর্ঘ্য ৭০-৮৬ সে.মি. এবং ঘাড়ের বেড় ৭৩-৮৬ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- এ জাতীয় পুরুষ ছাগলের মধ্যে দাড়ি দেখা গেলেও ছাগীর মধ্যে কোনো দাড়ি থাকে না।
- এদের ওলান বড় এবং বাট লম্বা হয়।
- বিটল জাতের একটি ছাগী হতে দৈনিক ২-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়।
- একটি পূর্ণবয়স্ক বিটল ছাগলের ওজন ৬০-৭০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- আর একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০-৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বারবারি ছাগলের বৈশিষ্ট্য
নিচে বারবারি ছাগলের জাতে চেনার উপায় এবং এদের বৈশষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:
- বারবারি ছাগলের গায়ের রং সাদা বা হরিণের মত বাদামী, সাদা ও কালো রংয়ের মিশ্রণে চক্রাকার হতে পারে।
- এ জাতীয় ছাগলের কান ছোট এবং খাড়া হয়ে থাকে।
- এদের শিং প্যাচানো থাকে এবং সামনে ও পিছনে উভয় দিকেই বাঁকানো থাকে।
- এদের পা বেশ ছোট হয়ে থাকে।
- বারবারি ছাগলের ওলনা বেশ বড় ও নিচের দিকে ঝুলন্ত থাকে।
- এ জাতীয় একটি পুরুষ ছাগল পূর্ণ বয়সে ৫০ কেজি এবং পূর্ণবয়স্ক একটি ছাগীর ওজন ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
- এরা বছরে দুইবার অথবা প্রতি ১২-১৫ মাসে ১ হতে ২ টা বাচ্চা দেয়।
- এরা দৈনিক ২-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
মালবারি জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্য
নিচে মালবারি জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্যসমূহ উপস্থাপন করা হলো:
- মাথার আকার মাঝারি এবং নাক রোমান ধরনের হয়।
- এদের কান খুব বড় হয় এবং ঝুলে থাকে।
- এদের গায়ের রং সাধারণত সাদা হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও সাদার সাথে কালোর মিশ্রণও দেখা যায়।
- মালবারি জাতের স্ত্রী ছাগলের শিং থাকে না।
- এদের ওলান বেশ বড় হয়।
- এরা মূলত অধিক বাচ্চা এবং দুধ উৎপাদনের জন্যই বেশি প্রসিদ্ধ।
- এরা বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতি বিয়ানে প্রায় ৫০% ছাগল দুটি করে বাচ্চা প্রসব করে, ২৫% ৩টি করে এবং ৫% ছাগল ৪টি করে বাচ্চা প্রসব করার ক্ষমতা রাখে।
- এদের দৈনিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ লিটার পর্যন্ত।
- এ জাতের পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন সর্বোচ্চ ৩০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
তোতাপুরি ছাগল কোথায় পাওয়া যায়
বিভিন্ন উন্নত জাতের ছাগলসহ বাংলাদেশে ছাগল পালনের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় জাত তোতাপুরি ছাগল কোথায় পাওয়া যায় তা মোবাইল নম্বরসহ উপস্থাপন করা হলো:
ক্র. নং | খামার মালিকের নাম | ঠিকানা | মোবাইল নম্বর |
০১. |
মো. লিটন | বিলমারিয়া, পুঠিয়া, রাজশাহী |
|
০২. |
মো. আকাশ | খোলামারা, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা | 01925 654057 |
০৩. |
গাজী ফেরদাউছ | পূর্ব নন্দীপাড়া, সবুজবাগ, ঢাকা | 01839 300396 |
০৪. |
মো. দেলোয়ার | পিয়ারাখালী জামতলা, ঈশ্বরদী, পাবনা | 01823 004100 |
০৫. |
মো. খলিলুর রহমান | গজারিয়া, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ |
|
০৬. |
মো. সাইদুল ইসলাম | খুলনা সদর, খুলনা |
|
০৭. |
মো. ওয়াসিম | উত্তর ধর্মাসুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা | 01977 212653 |
লেখকের মন্তব্য
গৃহপালিত পশুর মধ্যে ছাগল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একটা সময় ছাগল পালন পারিবারিক খামারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং কৃত্রিম প্রজননের সুফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণ উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছায় ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক ছাগলের খামার গড়ে উঠছে। আর বাণিজিকভাবে ছাগল খামারে সফলতার জন্য তারা বিভিন্ন জাতের ছাগল পালন করছে।
ছাগলের খামারে সফল হতে হলে দেশী ছাগলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত জাতের ছাগল নিয়ে খামার স্থাপন করা উচিত। এরই প্রেক্ষিতে ছাগলের বিভিন্ন জাতের নাম, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, উৎপাদনক্ষমতা এবং বিভিন্ন জাতের ছাগলসহ তোতাপুরি ছাগলের প্রাপ্তিস্থান বিষয়ক এই আর্টিকেলটি নির্ভরযোগ্য উৎস হতে সংগ্রহ, সংকলন ও উপস্থাপন করা হয়েছে।
আর্টিকেলটিতে কোনো প্রকার ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে পাঠকের সুচিন্তিত মতামতের প্রেক্ষিতে তা সংশোধনযোগ্য। আপনাদের যেকোনো মতামত জানাতে কমেন্টবক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে ছাগল খামার স্থাপনে ইচ্ছুক এমনসব উদ্যোক্তাদের মধ্যে শেয়ার করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। সেই সাথে আর্টিকেলটি কাজের সময় পুনরায় সহজে খুজে পেতে আপনার ডিভাইসের ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া, agrilife24.com, agricare24.com, ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, অধ্যাপক, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক রচিত এবং নূর পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “লাভজনক পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা” বই। খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে বইটি আপনার সংরক্ষণে রাখতে পারেন। |
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url