গাভীর বাঁটে রক্ত আসা এবং বাঁটের ছিদ্র বন্ধের চিকিৎসা

গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগ মূলত Hemolactia নামে পরিচিত। সাধারণত দুধে বা দুধ দোহনের শেষে আক্রান্ত গাভীর বাঁট হতে তাজা রক্ত বা রক্তবর্ণ দুধ বা গোলাপী রং বা দুধ চায়ের মত দুধ আসলে বুঝতে হবে বাঁট দিয়ে রক্ত আসছে। সময়মতো এ রোগের চিকিৎসা না করলে গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের মত অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটতে পারে।
গাভীর_বাঁটে_রক্ত_আসা_এবং_বাঁটের_ছিদ্র_বন্ধের_চিকিৎসা
ক্ষেত্রবিশেষে দুধ দোহনকালে গাভীর বাঁটে রক্ত আসার কোনো উপসর্গ পরিলক্ষিত না হলেও দুধ গরম করার পর দুধ গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। এক্ষেত্রেও গাভীর বাঁট দিয়ে রক্ত আসার কারণকে নির্দেশিত করে।

ভূমিকা

দুগ্ধজাত খামারে গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগটি প্রায়শই দেখা যায়। এ রোগের ইতিহাস সব জাতের গাভীর মধ্যে দেখা দিলেও শাহীওয়াল জাতের গাভীতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশিই দেখা যায়। এছাড়াও কখনও কখনও গাভীর বাঁটের ছিদ্র আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার কারণে দুধ সহজে বের হতে পারে না। আঘাতজনিত কারেণে ক্ষত হয়ে বাঁটের গ্রানুলোম্যাটাস টিস্যু বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী অবস্থায় উক্ত টিস্যুতে বাটার ফ্যাট, মিনারেল এবং মেমোরী টিস্যু আটকে গিয়ে বাঁটের ছিদ্রপথ বন্ধ করে দেয়।

দুগ্ধজাত খামারে আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে দুধ কিন্তু গাভীর বাঁটে রক্ত আসা কিংবা বাঁটের ছিদ্র বন্ধের কারণে খামারীকে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণত আমাদের দেশের সংকর জাতের গাভী, বিশেষ করে শাহিওয়াল ও দেশী জাতের গাভীর মধ্যে এ রোগগুলো বেশি দেখা যায়। এজন্য খামারীকে অনাকাঙ্খিত ক্ষতি এড়াতে এসব রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

গাভীর বাঁটে রক্ত আসার কারণ

গাভীর বাঁটে রক্ত আসার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ নিচে উপস্থাপন করা হলো:
  • বাঁট ও ওলানে ক্ষত বা আঘাতজনিত কারণে ওলান থেকে রক্ত আসে।
  • জীবাণুঘটিত কারণেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত লেপ্টোস্পাইরা স্পিসিস, সেরাটিয়া, মারসেন্স, মাইক্রোকক্কাস, সারসিনা, মোনাসকাস ইত্যাদি জীবাণুর মাধ্যমে গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের সংক্রমণ ঘটে।
  • খাদ্যে স্বাভাবিক রং থাকলেও দুধের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে।
  • রক্তে প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে গেলেও গাভীর বাঁট দিয়ে রক্ত আসার সম্ভাবনা থাকে।

গাভীর বাঁটে রক্ত আসার লক্ষণ

নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখে মোটামোটিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গাভীর বাাঁটে রক্ত আসার উপক্রম ঘটেছে:
  • ওলান তুলতুলে ও হালকাভাবে ঝুলে থাকবে।
  • দুধের রং হালকা গোলাপী অথবা ফিকে লাল দেখা যায়।
  • ওলানে সামন্য ব্যথা থাকতে পারে।
  • বাঁটের ভিতর কিছুটা শক্ত অনুভূত হয়।
  • মাঝে মাঝে ভালো দুধ এবং মাঝে মাঝে রক্ত মিশ্রিত দুধ আসতে পারে।
  • একটা পর্যায়ে সবসময় দুধের সঙ্গে রক্ত দেখা যায়।
  • ক্ষতজণিত কারণে বাঁটে রক্ত আসলে বাটের ভিতর টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে টিউমার পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • ফলে বাঁটের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রান্ত বাঁট থেকে গাভীর দুধ আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
গাভীর_বাঁটে_রক্ত_আসা_এবং_বাঁটের_ছিদ্র_বন্ধের_চিকিৎসা

গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের চিকিৎসা

সাধারণত আক্রান্ত গাভীর রোগের লক্ষণ ও ইতিহাস, ওলানে ব্যাথার ধরণ, দুধ পরীক্ষা করে, রক্তের অনুচক্রিকা গণনার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে আধুনিক ভেটেরিনারী চিকিৎসা পদ্ধতিতে সার্ফ ফিল্ড ম্যাস্টাইটিস টেস্ট এবং দুধ সেন্ট্রিফিউজ করেও এ রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাধারণত ভেটেরিনারিয়ানরা গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের চিকিৎসা স্বরূপ নিম্নলিখিত ঔষধগুলো সাজেস্ট করে থাকেন: 

ক্র. নং

ঔষদের নাম

প্রয়োগবিধি

০১.
  • Inj. Magical-28 500ml (SK+F)/
  • Inj. Decam 200ml (ACME)/
  • Inj. Cal-D-Mag 200, 500ml (Renata)
পার্শ্বে উল্লেখিত ইনজেকশনগুলো ক্যালসিয়ামের ইনজেকশন। এদের যেকোন একটি মাঝারি/বড় গাভীকে ২০০-৪০০ মি.লি. আক্রান্ত পশুর শিরায় দিতে হবে। এর সাথে ক্যালসিয়াম অপসোসেলাই ১০০০ মি.লি. যোগ করতে পারলে আরও ভালো হয়।
০২.
  • Inj. Tracid vet 10ml vial (ACME)/
  • Inj. Hemosin 10ml vial (Chemist)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংসপেশীতে ১০ মি.লি. করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
অথবা,
  • Tab.5Metharspan 60pcs

 

পার্শ্বে উল্লেখিত ট্যাবলেটটি আক্রান্ত পশুকে প্রতিবার ১০টি ট্যাবলেট দিনে ২ বার করে পরপর ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। দ্রষ্টব্য: উল্লেখিত ট্যাবলেটটি মানুষের ঔষধ হলেও গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের জন্য খুবই কার্যকরী।
অথবা,
  • Pow.4SCZ-wsp 10gm (ACME)
পার্শ্বে উল্লেখিত পাউডারটি আক্রান্ত পশুকে প্রতিদিন একবার ১০ গ্রাম করে পর পর ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
অথবা,
  • Pow. Rena-K 10gm (Renata)/
  • Pow. Vita-K 10gm (ACME)/
  • Nava-K 10gm/K-10, 100gm, 1kg (Square)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি পাউডার আক্রান্ত পশুকে প্রতিদিন একবার ৫-১০ গ্রাম করে পর পর ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
০৩.
  • Inj. Diadin 30, 100ml (Renata)/
  • Inj. Salidon 25ml, 100ml (ACI)/
  • Inj. Salfazol vet 30ml, 100ml (ACME)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর শিরায় বা মাংসপেশীতে প্রতিদিন একবার প্রথম দিন ৫০ মি.লি. এবং পরের দিন থেকে ৩০ মি.লি. করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
অথবা,
  • Inj. Streptopen 2.5gm (Renata)/
  • Inj. SP vet-2 vial (ACME)/
  • Inj. Strepcin-G 2.5gm (Opsonin)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন ১৫০-২০০ কেজি ওজনের আক্রান্ত পশুর শিরায় বা মাংসপেশীতে প্রতিদিন একটি করে পর পর ৪-৫ দিন দিতে হবে।
অথবা,
  • Inj. Renacef 2gm (Renata)/
  • Inj. ACIcef-3 1gm, 2gm (ACI)/
  • Inj. Triject Vet 1gm, 2gm (SK+F)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংসপেশীতে প্রতিদিন একটি করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
০৪.
  • Cold9Therapy (ঠান্ডা সেঁক)
আক্রান্ত পশুর ওলানে এবং বাঁটে দিন ৩-৪ বার করে ঠান্ডা পানির সেঁক বা বরফ ম্যাসেজ করতে হবে।

গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই যেকোনা রোগ থেকে পশুকে নিরাপদ রাখতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নিচে গাভীর বাঁটে রক্ত আসা রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো উল্লেখ করা হলো:
  • ডেইরি ফার্মের জন্য শাহিওয়াল জাতের গরু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ওলানে যেন কোন প্রকার সংক্রমণ না হয় তার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • গোয়ালাকে গাভীর দুধ দোহানোর সময় সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে।
  • দুধ দোহানোর সময় যাতে ওলানে কোন প্রকার আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষল রাখতে হবে।
  • ওলানে কোন প্রকার ক্ষত দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সর্বোপরি পশুকে রুটিনমাফিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

গাভীর বাঁটের ছিন্দ্র বন্ধের কারণ

বকনা প্রথমবার বা গাভী বাচ্চা দেওয়ার পর অথবা দুধ দেয়ার সময় কোন কোন গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত নিম্নোক্ত কারণগুলো গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের জন্য দায়ী:
  • বাঁটে ক্ষত হওয়া।
  • ওলানে Cowpos হলে বাঁটের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • ছিদ্রপথে গ্রানুলোম্যাটাস টিস্যু বৃদ্ধির ফলে বাঁটের ছিদ্র বন্ধ হতে পারে।
  • বাঁটে রক্ত জমাট বাঁধা থাকলে।
  • বাঁটের ছিদ্রপথে Fibrous Tissue অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে।
  • অদক্ষ গোয়ালা দ্বারা দুধ দোহন করালে।

গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের লক্ষণ

গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের লক্ষণগুলো মূলত গাভীর বাচ্চা প্রসবের পরই দেখা দেয়। নিচে গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো:
  • গাভীর বাঁটের ছিদ্র খুবই ছোট হয়।
  • গাভীর ওলান প্রচুর টানলেও বাঁটের ছিদ্র পথ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে দুধ বের হয় না।
  • দুধ আসলেও খুবই সামান্য পরিমাণে আসে এবং দুধের বেগ খুব চিকন থাকে।
  • বার বার টানলে গাভী ব্যথা অনুভব করে।
  • দুধ টান দিলে বাঁটের শেষ ভাগে এসে বের না হয়ে পুনরায় উপরে উঠে যায়।
  • দূর থেকে দেখলে মনে হয় ওলানে দুধ টন টন করছে কিন্তু বের করা যাচ্ছে না।
  • বাঁটের মাঝখানে গিট বা ছোট টিউমারের অস্তিত্ব অনুভূত হয়।
গাভীর_বাঁটে_রক্ত_আসা_এবং_বাঁটের_ছিদ্র_বন্ধের_চিকিৎসা

গাভীর বাটের ছিদ্র বন্ধের চিকিৎসা

গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর বৈশিষ্টপূর্ণ উপসর্গ এবং কিছুদিন পর পর রক্ত আসার ইতিহাস জেনে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। সাময়িক বাঁটের মুখ বন্ধ থাকলে তা সার্জারি করে সংশোধন করা কিন্তু টিস্যুর বৃদ্ধি স্থায়ী হয়ে টিউমারের সৃষ্টি হলে বা অতিরিক্ত টিস্যু বাঁটের মধ্যে সৃষ্টি হলে চিকিৎসা তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না। বকনা বা গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর সাময়িক বাঁটের মুখ বন্ধ বা অর্ধ বন্ধ থাকলে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক আক্রান্ত পশুকে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে:

ক্র. নং

চিকিৎসার নাম / ঔষধের নাম

চিকিৎসা পদ্ধতি / প্রয়োগবিধি

০১.
  • Teat Syphon
এই পদ্ধতিতে পশুকে মাটিতে শুইয়ে নিয়ন্ত্রণে আসার পর প্রথমে ভালোভাবে বাঁটে প্রেসার দিতে হবে তাতে অনেক সময় টিস্যু ডিবিরিজ বের হওয়ার সাথে সাথে দুধ সজোরে বের হতে থাকবে। যদি তা না হয়, তখন Teat Syphon বাঁটের মুখ দিয়ে একটি প্রেসার দিয়ে ঢুকিয়ে দিলে মেমব্রেন বা হালকা টিস্যু বা মিউকাস বের হবে এবং স্বাভাবিকভাবে দুধ বের হতে থাকেব।
অথবা,
  • Teat Strieter
এই পদ্ধতিতে গরুকে ভালোভাবে শুইয়ে শান্ত হবার পর Teat strieter বাঁটের ভিতর ঢুকিয়ে বাঁটের ছিদ্র পথ পরিস্কার করতে হবে। এতে দুধ আসা তখন স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদি দুধ বের না হয় তখন বাঁটের ভিতর মাংসপিন্ড Teat strieter দিয়ে কেঁটে দিতে হবে।
০২.
  • Inj. পেনব্যাসিসিলিন ৪০ লাখ (ACME)/
  • Inj. বাইপেনভেট ৪০ লাখ(Square)/
  • Inj. প্রোনাপেন ৪০ লাখ ভায়াল(Renata)/
  • Inj. এসপি ভেট ২.৫ গ্রাম(ACME)
০১ নং চিকিৎসা শেষে বাঁটের ভিতর যেন কোন প্রকার জীবাণু সংক্রমিত না হতে পারে সেজন্য পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন মাঝারী বা বড় গরুর মাংসপেশীতে প্রতিদিন একটি করে পরপর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
০৩.
  • Inj. মেলভেট প্লাস(ACME)/
  • Inj. কপভেট (Square)/
  • Inj. রেনাফেন (Renata)
০১ নং চিকিৎসা শেষে পশুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংসপেশীতে প্রতিদিন ১০-১৫ মি.লি. করে পর পর ৩-৫ দিন দেওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, পশুর ব্যথা সহনশীল পর্যায়ে থাকলে না দেওয়াই উত্তম।
০৪.
  • Inj. প্রিডেক্সানল এস ১০ মি.লি. ভায়াল(Renata)
  • Inj. প্রেগনিভেট ১০ মি.লি. ভায়াল(Techno)
  • Inj. স্ট্রেরনভেট ১০ মি.লি.(ACME)
পার্শ্বে উল্লেখিত যেকোন একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংসপেশীতে প্রতিদিন একবার ১০ মি.লি. করে পর পর ৩-৫ দিন দিতে হবে।
০৫. উপরোক্ত চিকিৎসায় আক্রান্ত পশু সুস্থ্য না হলে সার্জারী করে স্থায়ীভাবে ফিসটুলার মাধ্যমে দুধ বের করা যায়।
দ্রষ্টব্য: ০১নং পদ্ধতিতে চিকিৎসার সময় যদি বাঁটের ভিতর অতিরিক্ত শক্ত বোধ হয় এবং দুধ একেবারে না আসে তাহলে বুঝতে হবে গ্রানুলোটেমাস টিস্যু বৃদ্ধি হয়ে বাঁটের ছিদ্রপথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। গাভীর বাঁটের ছিদ্র সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া বিষয়ক যেসব চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে তার ফল তেমন ভালো হয় না। তাই বাঁটে এই ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসা না করাই উত্তম। এতে করে গাভীর ৪টি বাঁট দিয়ে যে পরিমাণ দুধ পাওয়া যেত একটি বাঁট বন্ধ থাকলে বাকি তিনটি বাঁট দিয়ে প্রায় একই পরিমাণ দুধ পাওয়া যাবে।

গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

পূর্ব থেকেই যত্নশীল থাকলে এবং নিচে উল্লেখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করলে গাভীর বাঁটের ছিদ্র বন্ধের অনাকাঙ্খিত এই রোগ থেকে পশুকে দূরে রাখা সম্ভব:
  • গাভীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত গোশালা এবং দোহনশালা নিশ্চিত করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে দুধ দোহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাঁটে কোন প্রকার ক্ষত পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • দুধে হালকা রক্ত দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
  • সর্বোপরি নিয়মিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিলে এ রোগ থেকে অনেকাংশে দূরে থাকা সম্ভব।

লেখকের মন্তব্য

গাভীর বাঁটে রক্ত আসা কিংবা বাঁটের ছিদ্র বন্ধ হওয়ার মত রোগগুলো দুগ্ধজাত খামারের একটি কমন রোগ। যথাসময়ে এবং সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করলে খুব সহজেই এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী, প্রসবকালীন এবং প্রসবপরবর্তী গাভীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও পরিমিত পরিমাণে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে পারলে অনেকাংশেই পশুর জন্য এসব রোগ প্রতিরোধ করা সহায়ক হয়।

এছাড়া পরিকল্পিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেও গাভীকে এ রোগ থেকে নিরাপধে রাখা সম্ভব। তাই খামারীদের উচিত গাভীকে এসব রোগ থেকে নিরাপধে রাখতে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং আক্রান্ত পশুকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা। আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশুকে থেকে আলাদা জায়গায় নিরাপধ দূরুত্বে রাখা।

দুগ্ধজাত খামারীদের উদ্দেশ্যে রচিত “গাভীর বাঁটে রক্ত আসা এবং বাঁটের ছিদ্র বন্ধের চিকিৎসা” শিরোনামে রচিত আর্টিকেলটি আশাকরি খামারীদের জন্য সহায়ক হবে। যদিও নির্ভরযোগ্য উৎস হতে তথ্যগুলো সংগ্রহ, সংকলন এবং উপস্থাপন করা হয়েছে তবুও আর্টিকেলে উল্লেখিত চিকিৎসাপত্র অনুসরণের পূর্বে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান পরামর্শ নিয়ে বাস্তবে প্রয়োগর জন্য অনুরোধ রইলো।

আর্টিকেলটিতে কোনো প্রকার তথ্য সংযোজন, বিয়োজন কিংবা পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে কমেন্টবক্সে আপনার মতামত পেশ করার জন্য অনুরোধ রইলে। সেই সাথে আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার পরিচিত যেকোনা খামারী কিংবা খামার স্থাপনে আগ্রহীদের সাথে শেয়ার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ।



তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া, agricare24.com, poultrydoctorsbd.com, এগ্রোবাংলা, ড. মাহবুব মোস্তফা রচিত আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ ও চিকিৎসা এবং দুগ্ধবতী গাভী পালন, ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, অধ্যাপক, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক রচিত এবং নূর পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “লাভজনক পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা” ও “গৃহপালিত পশু-পাখির রোগব্যাধি ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি” বই । খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে বই তিনটি আপনার সংরক্ষণে রাখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url