ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী এবং ৩৪ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার

‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী’ এবং ‘৩৪ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার’ শিরোনামটি দুটি ভিন্ন মনে হলেও বাস্তবিক জীবনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্যের সাথে শিরোনাম দিুটি একে অন্যের পরিপূরক। হত্যাকান্ডের পর ৩৪ বছর সময় লেগেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করতে।
ইনডেমনিটি_অধ্যাদেশ_কী_এবং_৩৪_বছর_পর_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_বিচার
বঙ্গন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ার ‍মূল কারণই হলো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। অথচ আমরা অনেকেই জানিনা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে এর সম্পৃক্ততা।

ভূমিকা

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত আইন। এই আইনের সাথে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচারকার্য ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তীতে দেশে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য। দেশের জন্য নিবেদিত মহান এই নেতার হত্যাকান্ড ছিল খুবই নৃশংস ও বর্বর। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন হতে সময় লেগেছে ৩৪ বছর, যা অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। অনেকেরে কাছে বিষয়টি রহস্যজনকও মনে হতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ার রহস্য জানতে হলে, জানতে হবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী, কে এই অধ্যাদেশ জারি করেছে এবং কেন করেছে। 

আর এই আর্টিকেলটিতে সেটাই নিখুঁতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি, যেখানে আপনি পাবেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া।সেই সাথে আর্টিকেলটিতে অতিরিক্তভাবে সংযোজন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে প্রদত্ত সম্মানসূচক বিভিন্ন উপাধিসমূহ।

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী

ইনডেমনিটি (Indemnity) হচ্ছে একটি ইংরেজী শব্দ যার অর্থ ক্ষতি বা জরিমানা কিংবা শাস্তি এড়ানোর পন্থা। আর অধ্যাদেশ মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত কোনো আইন। অর্থাৎ ইডেমনিটি অধ্যাদেশ হচ্ছে দেশের জরুরী প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা বলে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে কিংবা কোনা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি বা জরিমানা এড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে জারিকৃত কোন আইন।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কেবলমাত্র তখনই কোনো অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রাখেন যখন সংসদীয় অধিবেশন না থাকে কিংবা জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণই ভিন্ন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং কালো আইন খ্যাত এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন।

খন্দকার মোশতাক কর্তৃক জারিকৃত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে হত্যাকারীদের সহযোগীতা করা হয়। এই অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধু হাত্যাকারীদের কেউ যেনো কোনো প্রকার বিচার কিংবা শাস্তির সম্মুখীন না হতে হয়। খন্দকার মোশতাক কর্তৃক জারিকৃত এই অধ্যাদেশই প্রমাণ করে কুখ্যাত মোশতাকই বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।
ইনডেমনিটি_অধ্যাদেশ_কী_এবং_৩৪_বছর_পর_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_বিচার
তারপর ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে কুখ্যাত খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক প্রণীত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের বৈধতা দিয়ে আইনে পরিণত করেন। এই কালো আইনের বৈধতা দেওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়ার জড়িত থাকা না থাকার বিষয়টি জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণতথ্য শর্টনোট আকারে নিচে উপস্থাপন করা হলো:
  • ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
  • ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি এই অধ্যাদেশ জারি করেন।
  • ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করেন এই কালো আইনের বৈধতা প্রদান করেন।
  • সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে তিনি এই আইন সংযোজন করেন।
  • সুদীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা এই আইন বাতিল করেন।
  • তিনি ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেন।
  • ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সুপ্রীম কোর্টের একটি রায়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষনা করা হয়।
  • ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সুপ্রীম কোর্টের রায়টিকে বৈধতা ঘোষণা দিয়ে আইন পাস হয়।

মুজিব হত্যার বিচার / বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচারকার্য শুরু হয় ১৯৯৬ সালে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর। এর আগে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সামরিক শাসন দ্বারা বিতর্কিত আইন ‘ইনডেনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করায় বঙ্গবন্ধু হতাকান্ডের বিচার কার্য বিলম্বিত হয়। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর বিচারকার্য শীথিল করতে এবং হত্যাকারীদের নিরাপদ দূরুত্বে সরাতেই এই কালো আইন জারি করা হয়েছিল।

১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর আইনটি বাতিল করা হয়। এই আইন বাতিলের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্য তরান্বিত হয়। ২০০২ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলে পুনরায় তাঁর বিচারকার্য থমকে যায়। অবশেষে ২০১০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে’ কালো আইন হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পুনরায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্য প্রাণ ফিরে পায়।
নিচে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার / মুজিব হত্যার বিচারকার্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ আত্তস্থ করার সুবিধার্থে শর্টনোট আকারে উপস্থাপন করা হলো:

বিদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি প্রক্রিয়া

  • ১৯৭৯ সালের ১০ মে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্বইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলনে বিচার চেয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করা হয়।
  • উক্ত সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের অনুরোধ করা হলেও ভারত থেকে সুইডেনে যাওয়া সম্ভব না হলে সর্বইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার পক্ষ হতে লন্ডনে অবস্থানরত শেখ রেহানাকে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন।
  • শেখ রেহানা উক্ত সভায় শেখ হাসিনার পাঠানো বাণী পাঠ করেন এবং নিজের পক্ষ থেকেও বক্তব্য দেন। সম্মেলনে বিশ্বনেতৃবৃন্দের নিকট বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানান।
  • সেদিনের সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানগণ।
  • এরপর ১৯৮০ সালের ২০ জানুয়ারি সেন্ট্রাল লন্ডনের কনওয়ে হলে অনুষ্ঠিত সর্বইউরাপী বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রথম সম্মেলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষের আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়াম সভাপতি এবং ড. সেলিম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনিত হন।
  • পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি এবং প্রধান বক্তা হিসেবে স্যার টমাস উইলিয়ামস উপস্থিথ ছিলেন।
  • ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্যার টমাস উইলিয়ামস বিশ্ববিখ্যাত আইজীবীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার হতদন্ত কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের হাউস অব কমন্স এর নিকটবর্তী কুন্দুন রেস্টুরেন্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের তদন্ত কমিশিনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
  • বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউ সি এম পি এবং সলিসিটর অব্রে রোজকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বিখ্যাত আইরিশ আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইড ও লেবার পার্টির আইনবিষয়ক মুখপাত্র জেফ্রি টমাস কিউ সি এম পি ছিলেন উক্ত কমিশনের সাধারণ সদস্য।
  • বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে তদন্ত্রের নিমিত্তে বাংলাদেশ সফরে আসতে চাইলে লন্ডন বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের ভিসা নামঞ্জুর করে দেন।
  • পরবর্তীতে ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবাবর্গসহ জাতীয় চার নেতার হত্যা সম্পর্কিত প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেন।

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া

  • ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রেী নির্বাচিত করার পর একই বছর ১৭ মে তিনি দেশে ফিরেন।
  • এরপর সুদীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর অপেক্ষা শেষে ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিজয়ী হলে ঐ বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যগণের হত্যার বিচার চেয়ে এজহার দায়ের করা হয়।
  • উক্ত এজহারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বাদী ছিলেন তাঁর একান্ত সহকারী (পিএ) এএফএম মোহিতুল ইসলাম।
  • ১৯৯৬ সালর ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে কালো আইন খ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করা হয়।
  • ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচারকাজ শুরু করে এবং ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারপতি কাজী গোলাম রসুল কর্তৃক ৭৬ পৃষ্ঠার রায় ঘোষনা করে ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়।
  • ২০০০ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলে বিভক্ত রায় প্রদানকারী বিচারক ছিলেন বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি এ.বি.এম খায়রুল হক।
  • বিভক্ত রায়ে বিচারপতি বি.বি.এম খায়রুল হক মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ১৫ আসামীর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদন্ড বহলা রাখেন এবং বাকী ০৫ জনকে খালাস দেন। অপরপক্ষে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন। একই সময় অন্য এক বিচারপতি মো. ফজলুল করিম ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন। সেসময় ১৫ আসামীর ০৫ জন আসামী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে।
  • এরপর ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এর শুনানি বিলম্বিত হয়।
  • পুনরায় ২০০৭ সালে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সহ ০৫ জন বিচারপতি নিয়ে বেঞ্চ গঠিত হয় এবং নবগঠিত বেঞ্চ ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বর ১৯ দিনের আপিল বিভাগের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে আপিল খারিজ করে ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়।
  • ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি আসামীদের পক্ষ হতে আপিল বিভাগে রিভিউ পিটিশন করা হলে ০৩ দিনের শুনানি শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারী রিভিউ পিটিশন খারিজ করা হয়।
  • নৃশংস এই হত্যাকান্ডের প্রায় ৩৪ বছর পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারী (২৭ জানুয়ারী মধ্যরাতের পর) বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার ০৫ জন যথা- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
  • মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যায়।
  • ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ১১ টার সময় পালিয়ে থাকা মৃত্যুদন্ড দন্ডিত আসামী ক্যাপ্টেন মাজেদকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে এবং ১২ এপ্রিল রাত ১২ টা ১ মিনিটের কেরানীগঞ্জস্থ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকরা করা হয়।
  • মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডাালিম, লে. কর্নেল এইচএমবি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বেশ কিছু দেশে এখনও পলাতক অবস্থায় আছে।

বঙ্গবন্ধুর উপাধি সমূহ

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উপাধি সম্পর্কিত তথ্য শর্টনোট আকারে নিচে উপস্থাপন করা হলো:
ইনডেমনিটি_অধ্যাদেশ_কী_এবং_৩৪_বছর_পর_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_বিচার
  • ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তৎকালীন ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
  • ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের এক বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আস.স.ম আব্দুর রব শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
  • ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধুকে সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
  • ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার এক জরিপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি” নির্বাচিত হন।
  • ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
  • এছাড়াও তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক অসংখ্য সম্মানসূচক উপাধি পেয়েছেন যা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও কৃতিত্বকে আরও প্রস্ফুটিত করে।

লেখকের মন্তব্য

‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী এবং হত্যাকান্ডের ৩৪ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার’ শিরোনামে রচিত এই আর্টিকেলটি মূলত বঙ্গবন্ধু হত্যা কান্ডের বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ার কারণ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া। স্বাধীন বাংলার স্থপতি এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্ত্বেও বাকশালীয় কায়দায় বঙ্গবন্ধুর এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারকার্যকে রুদ্ধ করেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হলেও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের বিচারকার্যের পূর্ণতা পায় ৩৪ বছর পর হত্যাকারীদের কয়েকজনকে ফাঁসি রায় কার্যকর করে। মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও ০৫ জন পলাতক থাকায় বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। উল্লেখ্য যে, বাকি ০১ জন জিম্বাবুয়েতে পলাতক থাকা অবস্থায় গ্রেফতারের পূর্বেই মারা যায়।

আমরা মনে করি, MrDorpon এর প্রতিটি পাঠক দর্পন পরিবারের একজন সদস্য। তাই আমাদের যেকোনো আর্টিকেলে কোনা প্রকার ভুলত্রুুটি দৃষ্টিগোচর হলে সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জনের নিমিত্তে আপনার সুচিন্তিত মতামত কমেন্ট বক্সে সাবমিট করুন। সেই সাথে MrDorpon এর পরিধি বিস্তৃতিতে আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।



তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ড. মোহা. এমরান হোসেন রচিত ‘বঙ্গবন্ধু, বঙ্গভাষা ও বঙ্গমুক্তি’ গ্রন্থসহ বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বেশ কিছু গ্রন্থ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url