১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড পরস্পর ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে এক মহান নেতাকে এবং দেশ হয়েছে নেতৃত্বশূন্য। হত্যাকান্ডের প্রায় অর্ধশত বছর পরও বঙ্গবন্ধুর অভাব অপূরণীয়।
১৫_আগস্ট_জাতীয়_শোক_দিবসের_তাৎপর্য_এবং_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের এই কালো অধ্যায়কে দুঃখভারাক্রান্ত চিত্রে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়।

ভূমিকা

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য আকাশচুম্বী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এবং তাঁর প্রতি গভীর সমবেদনার নিদর্শন স্বরূপ ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৯৭৫ সালের এই দিন খন্দকার মোশতাকের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহীনর কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। জন্ম দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় যা সর্বজনীনভাবে ঘৃণিত ও নিন্দিত। যে জাতি বঙ্গন্ধুর মত মানুষকে  হত্যা করতে পারে সেখানে বাংলাদেশের রাজনীতি কখনো শঙ্কামুক্ত নয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে জন্ম দেয় এক কলঙ্কিত অধ্যায় যা বিশ্বব্যাপী নিন্দিত ও গর্হিত। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ৫৫ বছরের জীবনে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১৪ বছরই কাটিয়েছেন জেলে অথচ মাত্র ০৪ বছরও তিনি স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে পারেননি।
নিচে বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস মনে রাখার সুবিধার্থে শর্টনোট আকারে উপস্থাপন করা হলো:

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা

  • বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মূলে ছিলেন পাকিস্তান সেনবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল করিম, সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর আব্দুর রশিদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং মাহবুবুল আলম চাষীসহ আরও অনেকে।
  • তারা পরিকল্পনার জন্য তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়িতে বসতেন।
  • হত্যা পরিকল্পনার এক বৈঠকে খন্দকার মোশতাক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জিয়ার সমর্থন নেওয়ার পরামর্শ দেন।
  • পরামর্শ মোতাবেক কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান জিয়াউর রহমানের সমর্থন প্রত্যাশা করে জিয়াকে বলেছিলেন “আমরা পেশাদার সৈনিক। কোন ব্যক্তি না। দেশের এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমরা জুনিয়র অফিসাররা একটা পরিকল্পনা করেছি। আপনার সহযোগিতা দরকার।
  • জবাবে মেজর জিয়া বলেছিলেন, “নিজেকে জড়াতে চাই না। তোমরা যদি কোন ছক করেই থাকো, সেটা তোমাদেরই পূরণ করতে হবে। আমাকে বাইরে থাকতে দাও।”
  • যেদিন রাতে হত্যাকান্ড ঘটানো হবে সেদিন রাতে অসময়ে অপ্রয়োজনীয় ও অঘোষিতভাবে সেনা ইউনিট এর চলাচল নজরআন্দাজ করতে ১৯৭৫ সালের মার্চ থেকেই প্রতি মাসে দু’বার করে রাত্রিকালীন ট্রেনিং শুরু হয়। সেই মোতাবেক আগস্ট মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখও রাত্রিকালীন ট্রেনিং কর্মসূচি রাখা হয়।
১৫_আগস্ট_জাতীয়_শোক_দিবসের_তাৎপর্য_এবং_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন

  • বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা বেছে নিয়েছিল ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ দিনটি। কারণ দিনটি ছিল পূর্ব নির্ধারিত রাত্রিকালীন ট্রেনিং কর্মসূচির একটি দিন। এছাড়ও তখন ছিল বর্ষাকাল। যখন বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সেনাবহর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত তখন অন্য সবাই ভেবেছিল এটা ট্রেনিং-এরই একটা অংশ।
  • হত্যাকান্ডের দিন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের দায়িত্বে ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) এ কে এম মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা এবং এস.এইচ.এম.বি নূর চৌধুরী।
  • সে সময় তাদের নিকট ছিল ২৮ টি ট্যাঙ্ক, ১৮টি ১০৫ এম এম কামান আর ৭০০ লোকবল। ট্যাঙ্কে কোনো কোনো গোলাবারুদ ছিল না। এগুলো শুধুমাত্র সাইকোলোজিক্যাল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • মিন্টো রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসা আক্রমণের দায়িত্বে ছিল মেজর ডালিম। তার সঙ্গে ছিল একটি হেভি মেশিনগান, জিপ, পর্যাপ্ত অ্যামুনিশন, গুলি, এক প্লাটুন ল্যান্সার এবং একটি বড় ট্রাক।
  • বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির বাসা আক্রমণের দায়িত্বে ছিল রিসালদার মোসলেমউদ্দিন।
  • পিলখানার বিডিআর এর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য রেডিও স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং নিউ মার্কেট এলাকার দায়িত্বে ছিল মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান।
  • সেনাবাহিনী আক্রমণ মোকাবিলার জন্য যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রস্তুত ছিল লিয়াকত
  • শেরে বাংলা নগর এবং সাভার থেকে রক্ষিবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্বে ছিল সৈয়দ ফারুক রহমান।
  • পরিকল্পনামাফিক রাত পৌনে তিনটার দিকে সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাব জোয়ার্দার ডিউটি চেক করতে এসে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ডিউটিরত হাবিলদার আব্দুল গণিকে বলেন, “এখন সমস্ত গুলি দিয়ে দাও। সকালে নতুন গুলি দেওয়া হবে।”
  • লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) এ কে এম মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা এবং এস.এইচ.এম.বি নূর চৌধুরীর নেতৃত্বে ভোর ৪.২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর বাসভনে আক্রমণ শুরু হয়।
  • বঙ্গবন্ধু পরিবারের বড় ছেলে শেখ কামালকে সর্বপ্রথম খুন করা হয়।
  • শেখ কামালকে প্রথমে ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা পায়ে গুলি করে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে অন্যএকজন সেনা স্টেনগান দিয়ে বুকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে।
  • তারপর ক্যাপ্টেন হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে কর্তব্যরত এক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে গুলি করে হত্যা করে।
  • বঙ্গবন্ধু যখন বুঝতে পারে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করেছে তখন তিনি সর্বপ্রথম টেলিফোন করেছিলেন তৎকালীন সেনা প্রধা শফিউল্লাহকে।
  • বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহকে বলেছিলেন, “কী ব্যাপার শফিউল্লাহ! তোমার আর্মি এখানে গোলাগুলি করে, আর তুমি কী করছ?” জবাবে শফিউল্লাহ বলেছিলেন, “স্যার আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আপনি কি কোনভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন?” উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “ও! তুইও ওদের সাথে আছিস!”
  • সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ তাৎক্ষণিক কর্নেল জামিলকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের খবর দিলে তিনি বের হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ির কাছাকাছি সোবহানবাগ মসজিদের নিকট পৌঁছানো মাত্র কর্নেল ফারুকের সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
  • বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় ফোনটি করেছিলেন সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার মাসহুরুল হককে।
  • ফোন পাওয়ার পর মাসমহুরুল হক বের হয়ে ধানমন্ডির কাছাকাছি মিরপুর রোডে পৌঁছালে কর্নেল ফারুকের সদস্যরা তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাস্তায় ফেলে দেয়।
  • শেখ হাসিনার বেশ কিছু বক্তব্যের সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু সর্বশেষ ফোন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে। যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে কখনও বলেছেন বঙ্গবন্ধু তাকে ফোন করেননি আবার কখনও বলেছেন তখন তিনি গৃহবন্দী ছিলেন।
  • ফোনে কথোপকথন শেষে বঙ্গবন্ধু দরজার সামনে এসে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন মহিউদ্দিন, তার পিছনে হুদা এবং নূর।
  • তাঁদের দেখে বঙ্গবন্ধু বলেন, “কি চাস তোরা?” জবাবে নূর বলেছিলেন, “স্যাটআপ, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট”।
  • বঙ্গবন্ধু পুনরায় প্রশ্ন করলেন, “কই নিবি আমারে?” উত্তরে নূর বলেছিলেন, “সাথে আসেন।”
  • বঙ্গবন্ধু আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কমান্ডিং অফিসার কে?” জবাবে শাহরিয়ার বলেছিলেন, “আমাদের কোন কমান্ডিং অফিসার নেই, আজ আমরা সবাই কামান্ডার।”
  • তারপর হুদা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে আসার সময় তাঁর চোঁখ বাধার চেষ্টা করলে বঙ্গবন্ধু হাত দিয়ে খোঁচা মেরে বললেন, “সরে যা এখান থেকে।”
  • ইতোমধ্যে শেখ ফজলুল হক মনি ও আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছালে আনুমানিক ভোর ৫.৪৫ মিনিটে বজলুল হুদা ও নূর চৌধুরী গুলি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
  • পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর শরীরে মোট ১৮ টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। [কারো কারো মতে বঙ্গবন্ধুর গায়ে ২৮টি গুলি চালানো হয়।]
  • নিহত হওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর এক হাতে পাইপ, অন্য হাতে দিয়াশলাই, চোখে চশমা, পরনে ছিল লুঙ্গি ও গায়ে সাদা পাঞ্জাবি।
  • শোবার ঘরে অবস্থানরত বেগম ফজিলাতুননেছা, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল এবং পারভীন জামাল রোজীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও মেজর আজিজ পাশা।
  • নিচতলার অফিস ঘরের ভিতরে বাথরুমের কল থেকে পানি পান করতে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে ব্রাশফায়ার করেন আজিজ পাশা। তারপর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পুনরায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
  • ০৮ বছরে ছোট্টা শিশু শেখ রাসেলও রক্ষা পায় নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞা থেকে। বেগম ফজিলাতুননেছাকে হত্যার পূর্বে শেখ রাসেলকে উপর থেকে নিচে আনা হয়েছিল। বার বার শেখ রাসেল মায়ের কাছে যাওয়ার আকুতি করলে, তাকে রক্তাক্ত মৃত মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। শেখ রাসেল মাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় রিসালদার তাকে উপর থেকে থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
  • ধানমন্ডির ১৩/১ সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর স্ত্রী আরজু মণিকে স্টেনগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন।
  • মিন্টো রোডের ৩৭ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সেরনিয়াবাতের বাড়িতে আক্রমণ করে সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও আজিজ পাশার নেতৃত্বে একদর সেনাসদস্য। তারা ভিতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সকল সদস্যকে ড্রয়িং রুমে জড়ো করে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ ০৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
  • সেখানে সেরনিয়াবাতের ছেলে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে হত্যাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় তিনি বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। পরে তিনি পালিয়ে গিয়ে ভারতে আত্মগোপন করেন।
  • সেদিন সেরনিয়াবাতের বাসায় নিহত হন- আব্দু রব সেরনিয়াবাত, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, চাচাতো ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত, নাতি শুকান্ত হাসনাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খান। গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে যান সেরনিয়াবাতের বড় মেয়ে বিউটি, স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহসহ আরো তিনজন।
  • ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের দিন শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থিত শেখ হাসিনার সাথে থাকায় তাঁরা দু’বোন বেঁচে যান।
  • সেসময় ফারুক রশিদ ছাড়াও সর্বহারা পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল।
  • বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণ
  • বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মেজর ডালিম রেডিওতে ০৩টি বক্তব্য দেন। সকাল সাড়ে ছয়টার সময় প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী মুজিব সরকারকে উৎখাত করে দেশের স্বার্থে বন্দি করেছে।” দ্বিতীয় বক্তব্যে বলেন, “সেনাবাহিনী ক্ষমতা অধিগ্রহণের সময় উচ্ছেদ করা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন।” এবং সর্বশেষ বক্তব্যে তিনি ঘোষণা করেন, “আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরচার মুজিব সরকারকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে। সারাদেশে মার্শাল ল জারি করা হলো। জননেতা খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। বাংলাদেশ এখন থেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হবে।”
  • বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর শুনে সাভারে রক্ষীবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দু’জন সদস্য মাথায় রাইফেলের নল লাগিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করে।
  • মেজর ডালিমের ভাষণের মাঝে “ওরা সূর্যসন্তান, সূর্যসেনা ওরা, কোন বাধা মানবে না” শিরোনামের একটি গান বাজানো হচ্ছিল। গানটি লিখেছেন খান আতাউর রহমান এবং দিনের আলো ফুটার আগেই তিনি নিজ গানের সুর করেন।
  • বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি বানানো হলো এবং তাঁকে নিয়ে মেজর রশিদ রডিও ভবনে গেলে সেখানে তিনি সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং মেজর ডালিমের উপস্থিতিতে দুপুর পৌনে বারোটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
  • ভাষণের কপি খন্দকার মোশতাক নিজেই তৈরী করে নিয়ে এসেছিলেন। ভাষণ দেওয়ার পূর্বে সেনা প্রধান শফিউল্লাহ কপিটি পড়ে বলেন, “চমৎকার, ইটস রিয়েলি গুড।” প্রতিত্তোরে মোশতাক বলেন, “আপনার কি মনে হয়, এই ভাষণ একদিনে লেখা হয়েছে?”
  • ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনোরা! এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সত্যিকার ও সঠিক আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপদানের পবিত্র দায়িত্ব সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা ও বাংলাদেশের গণমানুষের দোয়ার উপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ করা হয়েছে।”
  • ভাষণ শেষে মোশতাক আহমদ ফারুক, রশিদ এবং ডালিমকে ‘সূর্যসন্তান’ এবং ভয়হীন হৃদয়ের অধিকারী ‘বীর’ বলে সম্বোধন করেন।
  • তারপর সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকেও একটি লিখিত কাগজ দেওয়া হয়েছিল পাঠ করার জন্য এবং রেকর্ড করে রেডিওতে প্রচার করা জন্য। তাতে লিখা ছিল, “আমি সেনাপ্রধান কাজী মোহাম্মদ সফিউল্লাহ বলছি, সেনাবাহিনী এবং তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে খন্দকার মোশতাক আহমদকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হলো। আপনারা সবাই শান্ত থাকুন। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না।”
  • কর্নেল তাহেরউদ্দিন রেডিও সেন্টারে এসে প্রথমে ডালিমের সাথে দেখা হলে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং সাহসের প্রশংসা করেন। অতঃপর কংগ্রেচুলেশন বলে মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান।
  • রেডিও সেন্টার থেকে বের হয়ে খন্দকার মোশতাক বায়তুল মোকাররম গিয়ে দুই রাকাআত নফল নামায আদায় করেন।
  • তখন ফারুকের ট্যাংক বাহিনীর কালো পোশাক পরা সেনাদের সাথে জাসদের গণবাহিনীর সদস্যরাও আনন্দ করছিল।
  • খন্দকার মোশতাক রেডিওতে সকালে যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন সন্ধ্যায় তার সাথে আরো যোগ করে পুনরায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বজ্রকঠিন দায়িত্ব সম্পাদনের পথ সুগম করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সত্যিকারের বীরের মতো অকুতোভয় চিত্তে এগিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, রক্ষীবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছেন। এরা সবই একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন।”

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের দাফন কাফন

  • ১৬ আগস্ট ভোর রাতে বঙ্গবন্ধু ছাড়া নিহতদের সবাইকে বনানী কবরস্থানে জানাজা ও কাফন ব্যতীত দাফন করা হয় এবং শেষ করতে প্রায় সকাল হয়ে যায়।
  • সেখানে মোট ১৮টি কবর খুঁড়া হয়। প্রথম কবরে বেগম ফজিলাতুননেছাকে, তারপরে শেখ নাসেরকে, এবং পর্যায়ক্রমে শেখ কামাল, কামালের স্ত্রী, শেখ জামাল, জামালের স্ত্রী, তারপরে শেখ রাসেলকে রাখা হয়। ১৩ নম্বর কবরে শেখ মনিকে এবং ১৭ নম্বর কবরে সেরনিয়াবাতকে এবং বাকী কবরগুলোতে অন্যান্য নিহতদেরকে কবরস্থা করা হয়।
  • বঙ্গবন্ধুর কবর চার নেতার মাজারের পাশে দাফনের কথা বলা হলে খন্দকার মোশতাক বলেন, “রাস্তাঘাটে তো কত মানুষ মারা যডায়, তাদের সবার কি আমার খেয়াল রাখতে হবে?” তিনি আরও বলেন, “গ্রেভ হিম এনি হোয়ার বাট নট ইন ঢাকা।”
  • তারপর ১৬ আগস্ট দুপুর ২.৩৫ মিনিটে (কারো কারো মতে বেলা দেড়টার সময়) হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়া ডাক বাংলায় পৌঁছে।
  • সেখানে বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর চাচা মোশাররফ হোসেন। টুঙ্গিপাড়ায় পিতার কবরের পাশে বঙ্গবন্ধুর লাশ সমাহিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
  • দাফনের পূর্বে পাশের বাড়ি থেকে একটি পুরাতন টিনের বালতিতে পানি এন এবং একজন গ্রামবাসীর দেওয়া কাপড় কাঁচার ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়।
  • বঙ্গবন্ধুর লাশকে গোসল করিয়েছিলেন শেখ নুরুল হক, শেখ আবদুল মান্নান, শেখ কেরামত ও ইমানউদ্দিন গাজী।
  • সেখানে ‘সাহেরা খাতুন’ নামক হাসপাতাল থেকে রিলিফের লাল রং এর পাড়বিশিষ্ট তিনটি সাদা কাপড় আনা হয়। অতঃপর ব্লেড দিয়ে পাড় কেটে ফেলে কাফন পরানো হয়।
  • বঙ্গবন্ধুর জানাজায় মোট ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দুই কাতারে ১০ জন করে, শেষ কাতারে ০৬ জন এবং ইমাম সাহেব। [কারো কারো মতে ৩০/৩৩ জন।]
  • বঙ্গবন্ধুর জানাযার নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা আবদুল হালিম।
১৫_আগস্ট_জাতীয়_শোক_দিবসের_তাৎপর্য_এবং_বঙ্গবন্ধু_হত্যার_ইতিহাস

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে খুনিরা যাদেরকে হত্যা করেছিল

  • ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুসহ মোট ২২ জনকে হত্যা করেছিলো।
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  • বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুননেছা (রেণু)
  • বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ কামাল
  • বঙ্গবন্ধুর মেজো পুত্র লে. শেখ জামাল
  • কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল
  • কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকু
  • জামালেল স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী
  • বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসের
  • বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত
  • সেরনিয়াবাতের বড় মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত
  • সেরনিয়াবাতের ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত
  • সেরনিয়াবাতের চাচাতো ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত
  • সেরনিয়াবাতের নাতি শুকান্ত হাসনাত
  • সেরনিয়াবাতের ভাগ্নে নান্টু সেরনিয়াবাত
  • বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি
  • শেখ ফজলুল হক মণির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু
  • বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ
  • বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম খান রেন্টু (আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই)
  • এবং কর্তব্যরতম পুলিশের জনৈক ডিএসপি

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে জড়িত যারা

  • খন্দকার মোশতাক আহমদ
  • মাহবুবুল আলম চাষী
  • লে. ক. সৈয়দ ফারুক হোসেন
  • লে. ক. সুলতান শাহরিয়ার রশীদ
  • লে. ক. মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)
  • ক্যাপ্টেন মোস্তফা
  • অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওয়াহব জোয়ারদার
  • রিসালদার সৈয়দ সারওয়ার হোসেন
  • লে. ক. মোহাম্মদ আজিজ পাশা
  • তাহিরউদ্দিন ঠাকুর
  • জোয়ারদার রশীদ
  • লে. ক. খন্দকার আবদুর রশীদ
  • মেজর বজলুল হুদা
  • লে. কর্নেল এইচ. এম. বি নূর চৌধুরী
  • লে. ক. শরিফুল হক ডালিম
  • লে. ক. এম এ রাশেদ চৌধুরী
  • মেজর এ. কে. এম মহিউদ্দিন আহম্মদ
  • রিসালদার মোসলেম উদ্দিন
  • মেজর আহমদ শরিফুল হোসেন
  • ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হোসেন
  • ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন
  • ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ
  • দফাদার মারফত আলী শাহ্‌
  • এলডি আবুল হাসেম মৃধা

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত যারা

  • লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান
  • লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ
  • লে. কর্নেল শরীফুল হক ডালিম
  • লে. কর্নেল আজিজ পাশা
  • লে. ক. সুলতান শাহরিয়ার রশীদ
  • মেজর বজলুল হুদা
  • লে. কর্নেল এইচ. এম. বি নূর চৌধুরী
  • লে. ক. এম এ রাশেদ চৌধুরী
  • মেজর আহমদ শরীফুল হোসেন
  • ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হোসেন
  • ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের সরকারি নামকরণ

  • বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদ বাংলাদেশের সরকারি নাম রাখেন “ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ”।
  • বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকারের ব্যাপারে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জেড. এ ভুট্টো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “আমরা ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশকে এখনই স্বীকৃতি দিলাম।”
  • সৌভ্রাতৃত্বের নিদর্শন হিসেবে খন্দকার মোশতাক সরকারের বাংলাদেশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জেড. এ ভেুট্টো ৫০ হাজার টন চাল, এক কোটি গজ লং ক্লথ এবং ৫০ লক্ষ গজ ভালো কাপড় উপটৌকন হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।
  • ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদ খুনিদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন।
  • পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামের কালো আইনকে সংবিধানে সংযুক্ত করে বৈধতা প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্ব নেতাদের মন্তব্য

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ বিস্মিত হয়েছিলেন। যে জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উপহার দিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের এক চতুর্থাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, সহ্য করেছেন অমানবিক নিপীড়ণ ও নির্যাতন সে জাতির মানুষ কিভাবে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে এই ভেবে তারা বিস্মিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে তাঁরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করেন:
  • বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে তৎকালীন জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিথ ঘৃণাভরে ঘোষণা করেন, “বাঙালি জাতিকে আর বিশ্বাস করা যায় না।”
  • তৎকাৎলীন ইরাকের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কেজি মুস্তফাকে ডেকে তাৎক্ষণিক বহিস্কার করেন এবং বলেন, “বিশ্ব একজন গ্রেট লিডারকে হারালো, যা পূরণ হওয়ার নয়।”
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল উইলসন এক বাঙালি সাংবাদিককে লিখেছিলেন, “এটা তোমাদের জন্য একটা সর্বোচ্চ জাতীয় ট্রাজিডি এবং আমার জন্য গভীর মাত্রায় ব্যক্তিগত ট্রাজিডি।”
  • বিশ্ববিখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কাভার স্টোরি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “শেখ মুজিবকে যদি হত্যা করা হবে, তাহলে বাঙালি জাতির জন্মের প্রয়োজন ছিল না এবং তাদের জন্য নতুন কোন দেশের অভ্যুদয় আবশ্যক ছিল না।”
  • লন্ডনে এক জামাইকানের সাথে পরিচয় পর্বে এম আর আখতার মুকুল নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিলে উক্ত জামাইকান রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “আপনি বাংলাদেশের লোক? আপনারাই শেখ মুজিবকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন? আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে ঘৃণা বোধ করি।
  • মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।”
  • জার্মান বংশদ্ভূত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী উইলি ব্র্যান্ট লিখেছেন, “মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।”
  • স্পেন বংশদ্ভূত কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল আলেহান্দ্রো কাস্ত্রো রুৎজের (ফিদেল কাস্ত্রে) বলেছেন, “শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।”
  • ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী) বলেছেন, “শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।”

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য ও বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস একে অন্যের পরিপূরক। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য সপরিবারে হত্যা করে। সৃষ্টি করে বাঙালি জাতির জন্য কালো ইতিহাস। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ০৮ বছরের শিশু পুত্র শেখ রাসেলও ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের সাথে দিবসটি পালন করা হয়। একই বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

তবে ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসলে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্যকে কলুষিত করে এবং দিবসটি পালনের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটায়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে দিবসটি পুনরায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

লেখকের মন্তব্য

স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য পাহাড়সম। যার অক্লান্ত পরিশ্রম. সুদৃঢ় মনোবল ও দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশলের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাঁর রক্তই সৃষ্টি করেছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। তাই এর তাৎপর্যকে সমুন্নত রাখতে দলমত নির্বিশেষে দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা প্রত্যেকের উচিত।

‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস’ শিরোনামে রচিত এই আর্টিকেলটিতে কোনো প্রকার ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের জন্য কমেন্ট বক্সে আপনার সুচিন্তিত মতামত পেশ করুন অথবা যোগাযোগ পেজে গিয়ে নিঃসংকোচে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।




তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিজস্ব ওয়েবসাইট,  অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস রচিত বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, এম.আর.আখতার মুকুল রচিত মুজিবের রক্ত লাল, ড. মোহা. এমরান হোসেন রচিত ‘বঙ্গবন্ধু, বঙ্গভাষা ও বঙ্গমুক্তি’ গ্রন্থসহ বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বেশ কিছু গ্রন্থ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url