কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিমাপক চার্ট

কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে কিংবা খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টির অন্যান্য উপাদানগুলো কতটুকু পরিমাণ থাকে তা জানতে হলে আগে জানতে হবে পুষ্টি কি কিংবা খাদ্যের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান কত প্রকার ও কি কি? যেকোনো মেশিনের ইঞ্জিন চালানোর জন্য যেমন জ্বালানির প্রয়োজন তেমনি খাদ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান প্রাণীকূলের জন্য অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানীস্বরূপ।
কোন_খাবারে_কত_ক্যালরি_থাকে_এবং_খাদ্যের_পুষ্টি_পরিমাপক_চার্ট
মানবদেহের যাবতীয় জৈবিক ক্রিয়া সাধিত হয় মনুষ্য কর্তৃক গৃহীত খাদ্যের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়ে। খাদ্যে বিদ্যমান প্রতিটি পুষ্টি উপাদান একটির সাথে অন্যটি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। 

ভূমিকা

পুষ্টি উপাদানের কোনো একটির অনুপস্থিতি যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনি প্রতিটি উপাদানের নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখাও অতীব জরুরী। যেকোন খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্ষুধা নিবারণ হবে ঠিকই কিন্তু শরীরে শক্তির সঞ্চার হবে, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কিংবা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে এমন ধারণা রাখা মোটেও উচিত নয়। কেননা খাদ্যে বিদ্যমান প্রতিটি পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকলেই একটি সুস্থ্য, সুন্দর ও প্রাণবন্ত জীবন উপভোগ করা সম্ভব।

তজ্জন্য প্রতিটি স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকের উচিত খাদ্য গ্রহণের পূর্বে কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে কিংবা খাদ্যের অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো কতটুকু পরিমাণে আছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা রাখা। অন্যথায় খাদ্যে বিদ্যমান নানাবিদ পুষ্টি উপাদানের অজ্ঞতার কারণে নিকট ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মত বহু ডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়।

পুষ্টি উপাদান কত প্রকার ও কি কি?

জীবদেহ কর্তৃক গৃহীত খাদ্য বিভিন্ন পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শোষিত হয়ে দেহের বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মরত খাদ্য উপাদানের নানাবিদ নিয়ামকই হলো পুষ্টি। জীবদেহের স্বাভাবিক গঠন নিশ্চিত করতে এবং কর্মক্ষম রাখতে প্রত্যহ গৃহীত বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে ৬টি প্রধান পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। যথা:
  • কার্বোহাইড্রেট
  • প্রোটিন
  • ফ্যাট
  • ভিটামিন
  • খনিজ ও
  • পানি
উপরোল্লিখিত ৬টি উপাদান আবার একাধিক ভাগে বিভক্ত যা নিচে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করা হলো:

কার্বোহাইড্রেট এর শ্রেণীবিভাগ

কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারগুলোকে নিম্নোক্ত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা:
  • শর্করা
  • শ্বেতসার
  • সেলুলোজ
নিচে এদের বিভিন্ন প্রকারভেদসহ উৎস উপস্থাপন করা হলো:
ক্র. নং প্রকারভেদ উৎস
০১। শর্করা: কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম উপাদান শর্করাকে আবার নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়:

 

  • গ্লুকোজ
আঙুর, শস্যদানা ও নির্দিষ্ট কিছু মূল্ ইত্যাদি।
  • ফ্রুকটোজ
চাক ভাঙ্গা খাঁটি মধু, পাকা মিষ্টি জাতীয় ফল, এবং কিছু সবজিতে।
  • মলটোজ
লাল চাল অথবা তুষযুক্ত চাল।
  • ল্যাকটোজ
দুধের চিনি
  • গ্যালাকটোজ
কার্বোহাইড্রেটের এই উপাদানটি সরাসরি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। দুধের মধ্যে বিদ্যমান শর্করা ল্যাকটোজ ভেঙ্গে এই উপাদানটি পরিণত হয়।
  • সুক্রোজ
সাধারণ চিনি
০২। শ্বেতসার উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট থাকে শ্বেতসাররূপে। চাল, শস্যদানা, বীজ, মূলূ, সবজি ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্বেতসার থাকে।
০৩। সেলুলোজ সেলুলোজ মানে হলো রাফেজ বা খাদ্য ফাইবার। খাদ্যশস্য, শাক, সবজি এবং ফলের খোসা কিংবা কঠিন অংশটিই সেলুলোজ হিসেবে পরিচিত।
উপরোক্ত তিনটি শ্রেণীবিভাগ ছাড়াও আধুনিক সভ্যতায় প্রাপ্ত সকল কার্বোহাইড্রেটকে নিম্নোক্ত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক্র. নং প্রকারভেদ উৎস
০১। প্রকৃতি প্রদত্ত কার্বোহাইড্রেট খাদ্যশস্য, শাক, সবজি এবং ফলমূল।
০২। বিকৃত কার্বোহাইড্রেট সকল ধরনের মিষ্টি, চিনি, মিছরি, গুড়, শোধিত মধু, বিভিন্ন কনফেকশনারী, ময়দা, পাউরুটি, সকল প্রকার শোধিত পানীয়, বিয়ার, অ্যালকোহল ইত্যাদি।

প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ

উৎসগত বিবেচনায় প্রোটিনকে (আমিষ) নিম্নোক্ত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক্র. নং প্রোটিনের প্রকারভেদ উৎস
০১। প্রাণিজ প্রোটিন প্রাণিজগৎ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনগুলোই প্রাণিজ প্রোটিন। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ প্রভৃতি।
০২। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উদ্ভিদ জগৎ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনগুলোই উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। যেমন- বিভিন্ন রকম ডাল, বাদাম, শিমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি।

ফ্যাটের শ্রেণীবিভাগ

উৎসগত দিক থেকে ফ্যাট বা চর্বি বা স্নেহ জাতীয় পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
  • প্রাণিজ ফ্যাট: প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটগুলোই প্রাণিজ ফ্যাট।
  • উদ্ভিজ্জ ফ্যাট: উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটগুলোই উদ্ভিজ্জ ফ্যাট।
বিভিন্ন স্নেহ জাতীয় খাদ্যে চর্বির শতকরা হারের উপর নির্ভর করে ফ্যাটকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট: সাধারণত ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যেসকল ফ্যাট কঠিন অবস্থায় থাকে সেগুলোকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বলে।
  • আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট: সাধারণত ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যেসকল ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে সেগুলোকে আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট বলে।
বিভিন্ন স্নেহজাতীয় খাবারে ফ্যাটি অ্যাসিডের শতকরা হার নিম্নোক্ত ছকে উপস্থাপন করা হলো:
স্নেহজাতীয় খাবার স্যাচুরেটেড ফ্যাট আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট
নারকেল তেল ৯১.৫০ ৮.৫০
বনস্পতি তেল ৯৪.০০ ৬.০০
সরষে তেল ০৪.০০ ৯৬.০০
বাদাম তেল ১৯.৪০ ৮০.৬০
তিলের তেল ১৩.৫০ ৮৪.৫০
সূর্যমুখীর তেল ০৬.০০ ৯৪.০০
গাওয়া ঘি ৫৯.৬% ৩৬.৪
এছাড়াও পারমাণবিক গঠন অনুযায়ী আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে নিম্নোক্ত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
  • পলি-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট: একাধিক কার্বনের যৌথ বন্ধনে গঠিত পলি-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই পাওয়া যায়।
  • মনো-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট: পলি-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকলেও তাপমাত্রার পরিমাণ যত কমতে থাকে এই জাতীয় ফ্যাটগুলো আস্তে আস্তে তত কঠিন হতে শুরু করে।
নিচে একনজরে ফ্যাট বা চর্বি বা স্নেহজাতীয় উপাদানের উল্লেখযোগ্য উৎসসমূহ উপস্থাপন করা হলো:
ক্র. নং ফ্যাট বা চর্বির প্রকারভেদ উৎস
০১। প্রাণিজ ফ্যাট ডিম, দুধ, লাল মাংস, ঘি, মাখন, বিভিন্ন প্রাণির চর্বি, কড্‌ লিভার ও শার্ক লিভার তেল প্রভৃতি।
০২। উদ্ভিজ্জ ফ্যাট সরষে, বাদাম, রেপসিড, কটনসিড, অলিভ, পাম, নারকেল, সূর্যমুখী, সয়াবিন, তিল প্রভৃতির তেল।
০৩। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ঘি, মাখন, পনির, প্রাণীজ চর্বি, নারকেল তেল, বনস্পতি, যেকোনো বেকারী পণ্য, লাল মাংস প্রভৃতি।
০৪। আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সরষে, বাদাম, রেপসিড, কটনসিড, অলিভ প্রভৃতির তেল।
০৫। পলি-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সূর্যমুখী, সয়াবিন, তিল, স্যামন মাছ, মটর শুটি, মাছের তেল ইত্যাদি।
০৬। মনো-আন্‌-স্যাচুরেটেড ফ্যাট লাল মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য, বাদাম, জলপাই এবং অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।

ভিটামিনের শ্রেণীবিভাগ

ভিটামিনের অপর নাম খাদ্যপ্রাণ। বিখ্যাত নিউট্রিসনিস্ট নাথান প্রিটিকিন এর ভাষ্যমতে অন্যান্য খাদ্য উপাদানের তুলনায় ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা খুবই সামান্য। তবুও এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, তাপশক্তি উৎপাদন ও দেহের ক্ষয়পূরণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এছাড়াও ভিটামিনের অভাবে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সহ কঠিন কিছু অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন- বেরিবেরি, স্কার্ভি, রিকেট, পেলেগ্রা প্রভৃতি।
নিচে উৎস সহ ভিটামিনের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করা হলো:
ক্র. নং ভিটামিনের প্রকারভেদ উৎস
০১। ভিটামিন ‘এ’ প্রাণীর যকৃৎ, অত্যধিক গাঢ় রংয়ের শাক্‌-সবজি ও ফলমূল ভিটামিন ‘এ’ এর উল্লেখযোগ্য উৎস।
০২। ভিটামিন ‘বি-কমপ্লেক্স’ ভিটামিন ‘বি-কমপ্লেক্স’ মূলত ভিটামিন ‘বি’ এর আটটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
  • ভিটামিন ‘বি-১’
বিভিন্ন শস্যজাতীয় খাবার যেমন- ঢেঁকি-ছাঁটা চাল, গম, ছোলা, মটরশুঁটি, ডাল প্রভৃতি। এছাড়াও মাছ ও দই এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘বি-১’ বিদ্যমান।
  • ভিটামিন ‘বি-২’
বিভিন্ন সবুজ শাক-সবজি ও আলুসহ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি ভিটামিন ‘বি-২’ এর উল্লেখযোগ্য উৎস।
  • ভিটামিন ‘বি-৩’
কলা, শস্যদানা, আলু, বেগুন, সবুজ শাক (নটে শাক) এবং মুরগির মাংসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘বি-৩’ বিদ্যমান।
  • ভিটামিন ‘বি-৫’
মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, আলু, ব্রোকলি ও অ্যাভোকাডো প্রভৃতি ভিটামিন ‘বি-৫’ এর উল্লেখযোগ্য উৎস।
  • ভিটামিন ‘বি-৬’
শস্য জাতীয় খাদ্য, অঙ্কুরিত শস্য, বিভিন্ন শাক-সবজি, নির্দিষ্ট কিছু ফল যেমন- পেঁপে, আপেল ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘বি-৬’ পাওয়া যায়।
  • ভিটামিন ‘বি-৭’
বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার, ডিমের কুসুম, কলা, মিষ্টি আলু, ব্রোকলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি-৭’ বিদ্যমান।
  • ভিটামিন ‘বি-৯’
পালং শাক, অঙ্কুরিত ছোলা, বিভিন্ন প্রকার বাদাম, প্রাণীর কলিজা, নির্দিষ্ট কিছু শাক-সবজি এবং ফলমূল ভিটামিন ‘বি-৯’ এর উল্লেখযোগ্য উৎস।
  • ভিটামিন ‘বি-১২’
বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, মাংস এবং বিভিন্ন প্রকার সামদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি-১২’ বিদ্যমান।
০৩। ভিটামিন ‘সি’ আমলকি, পেয়ারা, কাগজি লেবু এবং লেবুজাতীয় বিভিন্ন ফল।
০৪। ভিটামিন ‘ডি’ স্যামন, টুনা মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, ভেষজ দুধ ইত্যাদি। এছাড়াও ভিটামিন ‘ডি’ এর উত্তম প্রাকৃতিক উৎস হলো নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ‘সূর্যালোক’ গায়ে লাগানো।
০৫। ভিটামিন ‘ই’ বিভিন্ন শস্যদানা, জলপাই তেল, সয়াবিন তেল, পাইন বাদাম ইত্যাদি।
০৬। ভিটামিন ‘কে’ বিভিন্ন শাক-সবজিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায়। এছাড়াও কিছু প্রাণীজ উৎসে স্বল্প পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ বিদ্যমান। যেমন- গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, ডিম ইত্যাদি।

খনিজ লবণের প্রকারভেদ

বেশকিছু খনিজ উপাদানের সমন্বিতরূপ হচ্ছে খনিজ লবন। দেহ গঠনে প্রোটিনের পরেই খনিজ বা ধাতব লবণের স্থান। শরীরবৃত্তীয় কাজের গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে খনিজ লবনের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক্র. নং খনিজ লবনের প্রকারভেদ উপাদানসমূহ
০১। প্রধান খনিজ লবন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গনেসিয়াম, ও গন্ধক। খনিজ লবণের এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিধায় এদেরকে প্রধান খনিজ লবণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছ।
০২। লেশমৌল খনিজ লবন লৌহ, আয়োডিন, ক্লোরিন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, কোবাল্ট ও মলিবডেনাম। প্রাণীদেহের শরীরবৃত্তীয় কাজে এই উপাদানগুলোর ভূমিকা খুবই সামান্য বিধায় এরা লেশমৌল খনিজ হিসেবে পরিচিত।
প্রাণীদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই উপাদানটি সৃষ্টিকূলের দু’টি উৎস থেকে পাওয়া যায়। নিচের ছকে খনিজ লবনের উৎসসমূহ উপস্থাপন করা হলো:
ক্র. নং উৎসমূল উৎস
০১। প্রাণিজ উৎস দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য যেমন- দই, ঘি, মাখন, পনির ইত্যাদি। এছাড়াও ছোট মাছ ও মাছের কাটায় এবং প্রাণীর হাড়ে প্রচুর পরিমাণে খণিজ লবণের অন্যতম উপাদান ক্যালসিয়াম বিদ্যমান।
০২। উদ্ভিজ্জ উৎস প্রকৃতি প্রদত্ত সবুজ শাক-সবজি বিশেষ করে কলমি শাক, লাল শাক, পুঁই শাক, ডাটা শাক, ঢেঁড়শ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
দ্রষ্টব্য: কমবেশি সব খাবারেই কোনো না কোনো পুষ্টি উপাদান বা ভিটামিন বিদ্যমান। উপরে উল্লেখিত ছকগুলোতে শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য উৎসগুলো তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী আলোচনায় কোন খাবারে কত ক্যালরি, আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন কিংবা খনিজ লবন আছে তা নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা প্রণয়নের পূর্বে অবশ্যই খাদ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা রাখা প্রত্যেক স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকের জন্য অত্যাবশ্যক। নিচে বিভিন্ন প্রকার মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং বিভিন্ন শাক-সবজির কোনটিতে কতটুকু পরিমাণ পুষ্টি উপাদান এবং ক্যালরি বিদ্যমান তা নিম্নোক্ত চার্টগুলোতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কোন মাংসে প্রোটিন বেশি / কোন মাংসে কত ক্যালরি থাকে

বিভিন্ন প্রাণীর মাংসের প্রধান প্রধান পুষ্টি উপাদানসমূহ নিচের ছকে উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজন মাংসে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান
ক্র. নং প্রাণীর নাম প্রোটিন ফ্যাট ক্যালরি
(গ্রাম হিসেবে)

০১।

গরু

২২.৬০

০২.৬০

১১৪

০২।

মহিষ

২১.০০

০০.৫০

১৪০

০৩।

ছাগল

২১.৪০

০৩.৬০

১১৮

০৪।

ভেড়া

১৮.৫০

১৩.৫০

১৯৪

০৫।

শূকর

১৮.৭০

০৪.৪০

১১৪

০৬।

মুরগি

২৫.৯০

০০.৬০

১০৯

০৭।

কচ্ছপ

১৫.০০

০১.২০

৯৩

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

অতিরিক্ত মাংস খেলে কি সমস্যা দেখা দিতে পারে

কথায় আছে, মাংসে রোগের বংশ বাড়ে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতায় অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে মাংসের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি। কেননা মাংস খাওয়ার পর যতটুকু পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করা হয় সেই ক্যালরি বার্ণ করার জন্য ততটুকু কায়িক শ্রম আমরা মোটেও করি না। যার ফলশ্রুতিতে আতিরিক্ত মাংস খেলে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
  • অতিরিক্ত পরিমাণে মাংস খেলে শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। দেখা দিতে পারে বাতব্যাধি, থাইরয়েড ও আরথ্রাইটিসহ নানারকম জটিল রোগ।
  • মাত্রাতিরিক্ত মাংসাহারের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • ডায়াবেটিস মাত্রা বৃদ্ধির কখনও কখনও মাত্রাতিরিক্ত মাংসাহারই দায়ী। এছাড়াও যারা রীতিমত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা যদি মাত্রাতিরিক্ত মাংস খায় তাহলে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।
  • মাংসে বিদ্যমান অতিরিক্ত চর্বির ফলে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
  • অতিরিক্ত মাংসাহার হজম শক্তিতে বিঘ্ন ঘটায় এবং দেহে কোষ্ঠকাঠিণ্যের সৃষ্টি হয়। যার ফলে শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন জমে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে মাত্রাতিরিক্ত মাংসাহার অনেকাংশেই দায়ী।
  • অতিরিক্ত মাংস খেলে হৃদরোগের প্রবণতা বহুলাংশেই বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যারা রীতিমত হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের জন্য মাংস খাওয়া মানে আত্মহত্যার শামিল।
  • গ্যাস্ট্রিক, আলসার কিংবা লিভার জনিত যেকোনো সমস্যা ভোগা রোগীদের জন্য আতিরিক্ত মাংসাহার খুবই ক্ষতিকর।
  • দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত মাংস খেলে শরীরে স্নায়ুবিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
  • তাই সুস্থ থাকতে হলে মাত্রাতিরিক্ত পশুর মাংস পরিহার করাই শ্রেয়। প্রিটিকিন প্রোগ্রামের ডায়েট অনুযায়ী একজন মানুষ প্রত্যহ ৩০-৯৮ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খেতে পারবে যা সপ্তাহে হিসেব করলে ২১০-৬৮৬ গ্রাম। তবে প্রিটিকিন প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রত্যহ ৩০ গ্রাম মাংস খাওয়া বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
  • তাছাড়া, পশুমাংসের চেয়ে মুরগি কিংবা অন্যান্য পাখির মাংস খাওয়া তুলনামূলক বেশি নিরাপদ। কেননা এসব পাখির মাংসে চর্বি ও কলোস্টেরলের পরিমাণ পশুমাংসের তুলনায় অনেকাংশেই কম থাকে।

কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি / কোন মাছে কত ক্যালরি

নিচে উল্লেখিত বিভিন্ন মাছের পুষ্টি উপাদান বিষয়ক চার্টে কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি কিংবা কোন মাছে কত ক্যালরি থাকে তা একনজরে উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ ওজন মাছে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান
ক্র. নং মাছের নাম ক্যালরি কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট ক্যালসিয়াম ফসফরাস লোহা
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে)

০১.

রুই

৯৭

০৪.৪০

১৬.৬০

০১.৪০

 

 

 

০২.

কাতল

১০৬

০৩.৭০

১৮.৬০

০১.৯০

৫১০

২১০

০০.৮০

০৩.

মৃগেল

৯৮

০৩.২০

১৯.৫০

০০.৮০

৩৫০

২৮০

০১.৯০

০৪.

বোয়াল

১১৬

০৭.৬০

১৫.৪০

০২.৭০

১৬০

৪৯০

০০.৬০

০৫.

ইলিশ

২৭৩

০২.৯০

২১.৮০

১৯.৪০

১৮০

২৮০

০২.১০

০৬.

আইড়

৮৯

০৩.৫০

১৫.৯০

০১.৩০

৩৮০

১৮০

০০.৭০

০৭.

শোল

৮৫

০১.৩০

১৬.২০

০২.৩০

১৪০

৯৫

০০.৫০

০৮.

মাগুর

৮৬

০৪.২০

১৫.০০

০১.১০

২১০

২৯০

০০.৭০

০৯.

শিং

৯৬

-

২২.৮০

০০.৬০

৬৭০

৬৫০

০২.২০

১০.

ভেটকি

৭৩

০১.২০

১৩.৭০

০১.১০

৫৩০

৪০০

০১.০০

১১.

বেলে

৭৫

০২.৯০

১৪.৫০

০০.৬০

৩৭০

৩৩০

০১.০০

১২.

পাবদা

১১৪

৪.৬০

১৯.২০

০২.১০

৩১০

২১০

০১.৩০

১৩.

ভাটা

৯৮

১৪.৩০

০২.৫০

০২.২০

৭৯০

২০০

০১.১০

১৪.

ভাঙ্গর

১৫৪

০৩.৮০

১৪.৮০

০৮.৮০

১৮০

১৯০

০১.২০

১৫.

কই

৭০

০৪.৪০

১৪.৮০

০৮.৮০

৪১০

৩৯০

০১.৪০

১৬.

টেংরা

১৩৪

-

১৯.২০

০৬.৪০

২৭০

১৭০

০২.১০

১৭.

সরপুঁটি

১৬১

০২.৩০

১৬.৫০

০৯.৪০

২২০

১২০

০০.৫০

১৮.

ছোট পুঁটি

১০৬

০৩.১০

১৮.১০

০২.৪০

১২০

৯৬

০১.০০

১৯.

বাছা

১৪০

০৬.১০

১৮.১০

০৫.৬০

৫২০

১৮০

০০.৭০

২০.

খয়রা / চাপিলা

১২০

০৫.২০

১৮.০০

০৩.০০

৫৯০

২২০

০০.৭০

২১.

খলসে

১১২

০৩.১০

১৬.১০

০৩.৯০

৪৬০

৩৬০

০০.৯০

২২.

ফলুই

৮২

০১.০০

১৯.৮০

০১.০০

৫৯০

৪৫০

০১.৭০

২৩.

টাঁকি/ ল্যাটা

৮৩

-

১৯.৪০

০০.৬০

৬৮০

৫৩০

০১.৩০

২৪.

রূপচাঁদা

৭৮

০২.২০

১৫.১০

০১.০০

২০০

২৯০

০০.৯০

২৫.

মলা

১১৯

০২.৬০

১৮.০০

০৪.১০

৫৫০

২৫০

০০.৭০

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।
কোন_খাবারে_কত_ক্যালরি_থাকে_এবং_খাদ্যের_পুষ্টি_পরিমাপক_চার্ট

দুধের পুষ্টি উপাদান

নিচে ১০০ গ্রাম ওজনের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজন দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্যের পুষ্টি উপাদান
ক্র. নং দুধের উৎস / দুগ্ধজাত পণ্য ক্যালরি কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট ক্যালসিয়াম ফসফরাস ভিটামিন ‘এ’
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে) IU

০১.

মাতৃদুগ্ধ

৬৫

০৭.৪০

০১.১০

০৩.৪০

৩২

১৪

১৩৭

০২.

গরুর দুধ

৬৭

০৪.৪০

০৩.২০

০৪.১০

১১৯

৯৩

১৭৪

০৩.

মহিষের দুধ

১১৭

০৫.১০

০৪.৩০

০৮.৮০

২২০

-

১৬০

০৪.

ছাগলের দুধ

৭২

০৪.৬০

০৩.৩০

০৪.৫০

১৩৪

১১১

১৮২

০৫.

ভেড়ার দুধ

১০৮

৫.৩৬

০৫.৯৮

০৭.০০

১৯৩

১৫৮

-

০৬.

মাখন তোলা দুধ

২৯

০৪.৬০

০২.৫০

০০.১০

-

-

-

০৭.

ননীযুক্ত দুধ

৪৯৬

৩৮.০০

২৫.৮০

২৬.৭০

-

-

১৪০০

০৮.

ঘি

৯০০

-

০০.২৮

৬০.০০

৮৪০

০৯.

মাখন

৭১৭

-

০০.৮৫

৫৪.০০

২৪

২৪

৬৮৪

১০.

গরুর দুধের ছানা

২৬৫

০১.২০

১৮.০০

২০.৮০

-

-

৩৬৩

১১.

গরুর দুধের দই

৬০

০৩.০০

০৩.১০

০৪.০০

১২১

-

১০২

১২.

পনির

৩৪৮

০৬.৩০

২৪.১০

২৫.১

২০৮

-

২৭৩

১৩.

ঘোল

১৫

০০.৫০

০০.৮০

০১.১০

-

-

-

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

দুধ নাকি দই খাবো

কথায় আছে, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। এই প্রবাদকে ধারণ করে এবং দুধে প্রচুর পুষ্টিগুণ বিদ্যমান এমন কিছু প্রচলিত ধারণা নিয়ে আমাদের অধিকাংশই প্রত্যহ দুধ পান করে থাকি। দুধে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিগুণ থাকলেও তা আমাদের শরীরের বিপাকীয় কার্য সম্পাদনে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সাথে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যার ফলে খাদ্যাভ্যাসে দুধ নিয়ে আমাদের ধারণা স্বাস্থ্যবিদদের মতে সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।
বিভিন্ন পুষ্টিতাত্বিকের ভাষ্যমতে, “শুধু মানুষই নয়, যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রেই স্তন্যনির্ভর শৈশব ছাড়া অন্য কোন বয়সেই দুধ স্বাভাবিক খাদ্য নয়।” মাতৃদুগ্ধের এমনই ধর্ম যে শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন অনুযায়ী সমান তালে বাড়তে থাকে। কিন্তু মাতৃদুগ্ধ ছাড়ার পরও আমরা শিশুকে অযাচিত পরিমাণে অন্য প্রাণীর দুধ খাওয়াতে থাকি যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে প্রোটিন হজম করতে দেহে ৭ গুণ বেশি পানির দরকার। অথচ গরুর দুধে মাতৃদুগ্ধের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ প্রোটিন বেশি থাকায় শিশুদেহে ডিহাইড্রেশন (পানিস্বল্পতা) দেখা দিয়ে মস্তিস্ক ও কিডনির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি কখনও কখনও মৃত্যুঝুঁকিও থাকতে পারে। এজন্য শিশুকে দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াতে হবে এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।

উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুনসম্পন্ন দুধ কিংবা দুগ্ধজাত খাবারের সাহায্যে শরীরে ক্যালসিয়ামের যোগান দেওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী সকলের মধ্যে একটা অন্যরকম ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। কারণ গরুর দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল যার নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে শরীর নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। মাতৃদুগ্ধ ছাড়ার পর দুধের অভাবে কোনো শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে এমন নজির বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানেও নেই।

তাই অসংখ্য পুষ্টিগুণসম্পন্ন প্রকৃতিপ্রদত্ত এই দুধ খাওয়াকে কেন্দ্র করে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, দৈনিক জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১ গ্লাস (২২৫ গ্রাম) মাখন তোলা দুধ বা ৫ টেবিল চামচ মাখন তোলা পাউডার দুধ অথবা সমপরিমাণ দুগ্ধজাত খাদ্য খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব ছেলেমেয়ে প্রোটিনসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার কম খায় তাদেরকে প্রত্যহ ১ গ্লাস দুধ দেওয়া যেতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

অন্যদিকে, দই আমাদের উপমহাদেশের জন্য ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের অধিকাংশই বিকৃত কার্বোহাইড্রেট চিনি মিশ্রিত বাজারে তৈরী মিষ্টি দই বেশি পছন্দ করি। যার মধ্যে উপকারের চেয়ে অপকারিতাই বেশি। প্রকৃতপক্ষে পুষ্টির দিকে বিবেচনা করে টক দই আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শুধু তাই নয়, ৩০ উর্ধ্বো বয়সের প্রত্যেকের জন্য দুধের চেয়ে টক দইয়ের উপকারিতা বহুগুণ বেশি। নিচে টক দই খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
  • দই পাকস্থলীতে খাবারের পচন প্রতিরোধ করে স্বাভাবিক হজমে সহায়তা করে।
  • পেটের ভিতরে ঘা সারাতে দই অত্যন্ত উপকারী খাবার।
  • শরীরের অতিরিক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণে দইয়ের ভূমিকা অপরিসীম।
  • টক দই দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • দই থেকে তৈরী ঘোল পান করলে পেট গরম হলে কিংবা পেটে বায়ু হলে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
  • অনেক মনে করে দই খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে দই থেকে তৈরী ঘোল খেলে ঠান্ডা ও সর্দি উপশম হয়।
  • দই অকাল বার্ধক্য ও চুল পাকা রোধ করে।
  • রূপচর্চার কাজেও দইয়ের ব্যবহার ব্যাপক। দই মুখমন্ডলে মাখলে চেহারা মসৃন হয় ও অবাঞ্চিত দাগ দূর হয়।
  • দই মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের যোগান দেয়।
  • যাদের দুধ খেলে হজমে সমস্যা হয় কিংবা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য দুধের বিকল্প হিসেবে দই-ই উত্তম।
  • অনেক বিশেষজ্ঞের মতে দই প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
  • তাই, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্যই দই সমান পুষ্টিকর।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদি দুধ অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন তবুও মানবদেহ কর্তৃক অতিমাত্রার পুষ্টি উপাদান সহনশীলতার উপর ভিত্তি করে দুধের চেয়ে দই-ই উত্তম দুগ্ধজাত খাবার। তবে তা অবশ্যই চিনি বা যেকোনো বিকৃত কার্বোহাইড্রেট বিহীন দই হতে হবে।

রুটিতে কত ক্যালরি আছে

রুটির মূল উপাদান গমের আটা, চাল, সুজি প্রভৃতির মধ্যে পুষ্টি উপাদানের কোনটি কতটুকু পরিমাণে আছে তা নিম্নলিখিত চার্টে উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজন নিম্নোক্ত খাদ্যসমূহে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ
খাদ্যের নাম ক্যালরি প্রোটিন ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট ক্যালসিয়াম ফসফরা লোহা বি-১ বি-২ নিয়াসিন
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে)
গমের আটা

৩৪৫

৬.৪

০.৪

৭৯.০

২৪

১৩৬

০.৮

০.২১

০.০৯

৩.৮

চাল

৩৪১

১২.১

১.৭

৬৯.৪

৪১

৩৭২

৩.৩

০.৫৫

০.১২

০.৩

সুজি

৩৪৮

১০.৪

০.৬

৭৪.৮

১৬

১০২

১.৬

০.১২

০.৮০

০.৩

চিড়া

৩৪৬

৬.৬

১.২

৭৩.৩

২০

২২৩

৫.৫

০.১২

০.০৫

৪.০

মুড়ি

৩২৫

৭.৫

০.১

৭০.৬

২৩

১৫০

৬.৬

০.২১

০.১২

৪.১

খৈ

৩৬৩

৭.২

০.৪

৮২.৬

৯২

০.৯

০.০৫

০.০৩

১.৪

পাউরুটি

২৪৭

৭.৮

০.৭

৫২.৫

-

-

-

-

 

-

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

কোন ডালে কত প্রোটিন / কোন ডালে কত ক্যালরি

নিম্নোক্ত চার্টে কোন ডালে কত ক্যালরি থাকে কিংবা কোন ডালে কত প্রোটিন থাকে সে সম্পর্কে বিভিন্ন ডালের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন ডালে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান
ডালের নাম ক্যালরি

কর্বো.

প্রোটিন ফ্যাট

ক্যাল.

ফস.

লোহা বি১ বি২ বি৩ সি
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে) IU (মিলিগ্রাম হিসেবে)
মুগ

৩৪৮

৫৯.৯

২৪.৫

১.২

৭৫

৪০৫

৮.৫

-

০.৪৬

-

-

মসুর

৩১৬

৫৯.৯

২৫.১

০.৭

৬৯

২৪২

৪.৮

৪৫০

০.৪৫

০.৪৯

১.৫

-

খেসারি

৩২৭

৫৫.৭

২২.৯

০.৭

৯০

৩১৭

৬.৩

-

-

-

-

-

মাস কালাই

৩২৬

৫৯.৬

২৪.০

১.৪

১৫৪

৩৮৫

৯.১

৬৪

০.৪২

০.৩৭

২.০

-

ছোলার ডাল

৩৮৫

৫৯.৮

২০.৮

৫.৬

৫৬

৩৩১

৯.১

২১৬

০.৪৮

০.১৮

২.৪

মটর ডাল

৩৫৪

৭১.৩

২৪.৫

১.১

৭০

৩০৩

৪.৭

১৫৮

০.৪৭

০.৩৯

২.১

আস্ত ছোলা

৩২৩

৬০.৯

১৭.১

৫.১

১৯০

১৮৪

৯.৮

৩১৬

০.৩

০.৫

২.১

-

অড়হর

৩৪৩

৫৭.৬

২২.৩

১.৭

৭৩

৩০৪

৫.৮

২২০

০.৪৫

০.৫১

২.৬

-

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

কোন শাকে কোন ভিটামিন থাকে

নিচে কোন শাকে কোন ভিটামিন থাকে তা এক নজরে উপস্থাপন করা হলো:
শাকের নাম ভিটামিনের নাম

বি

সি

ডি

কে

বি১ বি২ বি৩ বি৫ বি৬ বি৭ বি৯ বি১২
পালং শাক

-

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

কে

লাল শাক

-

বি১ বি২

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

পুঁই শাক

-

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

কচু শাক

-

বি২ বি৩

 

বি৬

 

বি৯

 

সি

-

-

-

কলমি শাক

-

বি১

 

বি৩

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

সজনে শাক

বি১ বি২ বি৩

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

ডাঁটা শাক

বি১ বি২

-

-

-

-

বি৯

-

সি

-

-

-

সবুজ (নটে) শাক

বি১ বি২ বি৩

-

বি৬

-

-

-

সি

-

-

কে

হেলেঞ্চা শাক

-

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

সরিষা শাক

-

-

-

-

-

-

বি৯

-

সি

 

কে

পেঁয়াজকলি

-

বি২ বি৩

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

লেটুস পাতা

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

কে

কোন শাকে ক্যালসিয়াম বেশি / কোন শাকে কত ক্যালরি

কোন শাকে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে কিংবা কোন শাকের পুষ্টিমান কতটুকু তা নিচে একনজরে উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন শাকে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান
শাকের নাম ক্যালরি কর্বো. প্রোটিন ফ্যাট

ক্যাল.

ফস.

লোহা বি১ বি২ বি৩ সি
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে) IU (মিলিগ্রাম হিসেবে)
পালং শাক

৩৪

৭.৭০

৫.১০

০.৯০

৫৯৫

৯৩

১৯.৫

৯৩০০

০.০৩

০.০৭

০.০৫

২৮

লাল শাক

৪৩

৫.০০

৫.৩০

০.১০

৩৭৪

৮৩

২.০০

৫৭০

০.১০

-

-

৮০

পুঁই শাক

২৫

২.১০

২.২০

০.৩০

১৬৪

৫২

১০.০

১৭০

০.০২

০.৩৫

০.৫

৫১.৮

কচু শাক

২১

৪.২০

০.৭০

০.৩০

৩৯

২০

০.৫০

৬০০

-

০.১০

১.০

৫২

কলমি শাক

২৮

৪.৩০

১.৭০

০.৪০

১১০

৫০

৩.৯০

৩৩০০

০.০৫

০.১২

০.৬

১৩৭

সজনে শাক

২৬

৩.৭০

২.৫০

০.১০

৩০

১১০

৫.৩০

১৮৪

০.০৫

০.০৭

০.২০

১২০

ডাঁটা শাক

৩৪

৫.৬০

১.৬০

০.৫০

৫৮

৭০৩

৮.৩০

৪২৫

০.০১

০.১৮

-

১০

সবুজ(নটে) শাক

৪৬

৬.৩০

৪.০০

০.৫০

৩৯৭

৮৩

২৫.৫

৯২০০

০.০৩

০.১০

১.২

৯৯

হেলেঞ্চা শাক

৪১

৫.৫০

২.৯০

০.২০

২৭০

-

৪.৪০

৫৭৩

-

-

-

৮.৫

পেঁয়াজকলি

৪১

৮.৯০

০.৯০

০.২০

৫০

৫০

০.৫০

৯৯৩

-

০.০৩

০.৩০

১৭

লেটুস পাতা

৫৫

২.২৩

১.৩৫

০.২২

৩৫

৩৩

১.২৪

১৬৬

০.০৬

০.০৬

-

৩.৭

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

কোন সবজিতে কোন ভিটামিন থাকে

নিচে কোন সবজিতে কোন ভিটামিন থাকে তা এক নজরে উপস্থাপন করা হলো:
সবজির নাম ভিটামিনের নাম

‘বি’

‘সি’ ‘ডি’ ‘ই’ ‘কে’
বি১ বি২ বি৩ বি৫ বি৬ বি৭ বি৯ বি১২
ফুলকপি

-

বি১

-

বি৩

-

-

-

বি৯

-

‘সি’

-

-

‘কে’
বাধাকপি

-

-

-

-

বি৬

-

বি৯

-

‘সি’

-

-

‘কে’
শিম

-

বি১ বি২

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

টমেটো

-

বি৬

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

‘ই’ ‘কে’
গাজর

বি৩

-

-

-

বি৬

-

-

-

‘সি’

-

-

-

আলু

-

বি২

-

বি৩

-

বি৬

-

-

-

-

-

-

-

মিষ্টি আলু

-

বি৬

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

সজনে ডাটা

-

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

বরবটি

-

বি১ বি২

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

পটল

-

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

কাঁকরোল

-

বি

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

চিচিঙ্গা

বি৬

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

‘ই’

-

ধুন্দুল

বি৯

-

-

-

-

-

-

-

সি

-

-

-

লাউ

-

বি১

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

‘ডি’

-

-

মিষ্টি কুমড়া ‘এ’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

‘ই’

-

চাল কুমড়া

-

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

উচ্ছে / করলা ‘এ’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

মটরশুঁটি ‘এ’ বি১

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

‘ই’

-

বেগুন ‘এ’ বি৩

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

ঢেঁড়স ‘এ’ ‘বি’

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

ওল ‘এ’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

কাঁচা কলা ‘এ’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

‘ই’

-

কাঁচাপেপে

-

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

মূলা

-

-

-

-

-

বি৬

-

বি৯

-

‘সি’

-

-

-

ঝিঙে ‘এ’

 

বি২

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

কাঁচা মরিচ ‘এ’ বি১ বি২ বি৩

-

বি৬

-

বি৯

-

‘সি’

-

-

‘কে’
ডুমুর ‘এ’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

‘ই’

-

পলতা ‘এ’ বি১ বি২

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

-

কাঁঠাল-বিচি

-

বি১ বি২

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

ডাঁটা

-

বি২

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

লাল আলু

-

বি৩

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

বিটরুট ‘এ’

-

-

বি৩

-

বি৬

-

বি৯

-

‘সি’

-

-

-

শালগম

-

বি৯

-

-

-

-

-

-

-

‘সি’

-

-

‘কে’
মোচা

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

-

‘ই’

-

মাশরুম

-

‘বি’

-

-

-

-

-

-

-

-

‘ডি’

-

-

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ভিটামিন বি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কোন সবজিতে কত ক্যালরি

কোন সবজিতে কত ক্যালরি থাকে কিংবা কোন সবজির পুষ্টিমান কতটুকু তা নিচের চার্টে একনজরে উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন সবজিতে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান
সবজির নাম ক্যালরি কর্বো. প্রোটিন ফ্যাট ক্যাল. ফস. লোহা বি১ বি২ বি৩ সি
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে) IU (মিলিগ্রাম হিসেবে)
ফুলকপি

৪৩

৫.৩

৩.৫

০.২৮

৩৩

৫৭

১.৫

৫১

০.০৪

০.১

১.০

৫৬

বাধাকপি

৩০

৫.৯

১.১

০.১

৩৯

২৬

০.৮০

২০০০

০.০৬

০.০৩

০.৪

১২৪

শিম

৬২

৫.১

২.৫

০.৩

২১

৪৯

০.৬

-

-

-

-

-

টমেটো

১৮

৭.৭

০.৯০

০.২০

৪৮

২৪

০.৪০

৫০৫

০.০৪

০.০৬

০.৬

১৪

আলু

৮৩

১৯.১

২.০

০.১০

১১

৫৬

০.৭

৪০

০.১১

০.০১

১.২

১৭

মিষ্টি আলু

৩৭৮

৩৭.৫৫

২.০০

০.১৫

৩৮

৫৪

০.৬৯

৯৬১

০.১১

০.১১

১.৫

১৯.৬

বেগুন

২৪

৪.০০

০.৩

০.৩

১৮

৪০

০.৯

১২৪

০.০৪

০.১১

০.৯

১২

পটল

২০

২.২

৩.৬

৩০

৪০

১.৭

২৫৫

০.০৫

০.০৬

০.৫

২৯

কাঁকরোল

৫২

৭.৭

৩.১

১.০০

৩৩

৪২

৪.৬

-

-

-

-

-

ঝিঙে

১৭

৩.৪

০.৫

০.১

৪০

৪০

১৬

৫৬

০.০৭

০.০১

০.২০

চিচিঙ্গা

৮৬

১২.৫

২.০

৩.৯

৫.১

৫.৭

-

-

-

-

-

ধুন্দুল

১৪

১.২

০.৭

০.১

১৯

-

০.৪

-

-

-

-

২১

ঢেঁড়স

৩৫

৬.৪

১.৯

০.১০

৬৬

৫৭

১.৫

৫১

০.০৪

০.১০

১.০০

৫৬

করলা/উচ্ছে

৬০

৯৮

২.৯

১.০০

৫০

১৪০

৯.৪

২১০

০.০৭

০.৯

০.৫

২৭

কাঁচা কলা

৬৩

১৪.৭

১.৪

০.২০

১০

৩০

০.৬

৫০

০.০৫

০.০২

০.৩

২৪

লাউ

১২

২.৫

০.২

০.১

২০

১০

০.৭

-

০.০৩

০.০১

০.৪

মিষ্টি কুমড়া

২৫

৯.৭৬

১.৪

০.১

২১

৪৪

০.৮

৮৪

০.০৫

০.১১

০.৬

চাল কুমড়া

৫.৯

০.৪

০.২

১৯

১৯

০.৪

-

০.০৪

০.১১

০.৪

১৩

মূলা

২২

৪.২

০.৬

০.১০

৪০

৪০

০.৫

০.০৬

০.০২

০.২০

১৬

বরবটি

২৭

৪.৭

১.৭

-

৩৩

-

৫.৯

-

০.১৪

০.৩০

-

-

গাজর

৪৮

১০.৭

১.২

০.৩০

৩৯

৩৭

০.৮

৩১৫০

০.০৭

০.০৬

১.০

৫.৯

শশা

১৩

২.৫

০.৪

০.১

২০

৪১

০.৫

২৯২

০.০৩

০.১৩

০.৪

কাঁচাপেপে

২৯

৬.২

০.৪

০.৩

৩৪

৬৪

০.৯

-

০.১

০.০১

০.১

১২

কাঁচা মরিচ

২৯

৩.০

২.৯

০.৬

৩০

৮০

১.২

২৯২

০.১৯

০.৩৯

০.৯

১১১

ওল

১১০

২৪

২.৪

০.১

৬০

২০

১.৩

১৩০

০.০৭

-

০.৭

-

মোচা

৩৪

৫.১

১.৭

০.৭

৩২

৪২

১.৬

৪৬

০.০৫

০.০২

০.৪

১৬

শালগম

৩৫

৭.৬

১.১

০.২০

৩০

৪০

০.৪০

১২৭০

০.০৪

০.০৪

০.৫০

৪৩

ডুমুর

৩৭

৭.৬

১.৩

০.২

৬০

৩০

১.২

২৭০

০.০৬

০.০৫

০.৪

১৮০

বিটরুট

৪৬

৭.৬

১.৪

০.২০

২০০

৫৫

১.০

৬.৭

০.০৪

০.০২

০.৬

৮৮

কাঁঠাল বিচি

১৮৪

৩৮.৮

৬.৬

০.৪

৫০

১৩০

১.২

১৭

০.২

০.১১

০.৩

১১

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।
কোন_খাবারে_কত_ক্যালরি_থাকে_এবং_খাদ্যের_পুষ্টি_পরিমাপক_চার্ট

কোন ফলে কত ক্যালরি থাকে

নিম্নোক্ত ছকে ১০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন ফলে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণসহ কোন ফলে কত ক্যালরি থাকে তা উপস্থাপন করা হলো:
প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন ফলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান
ফলের নাম ক্যালরি কর্বো. প্রোটিন ফ্যাট

ক্যাল.

ফস. লোহা বি১ বি২ বি৩ সি
(গ্রাম হিসেবে) (মিলিগ্রাম হিসেবে) IU (মিলিগ্রাম হিসেবে)
পেয়ারা

৫১

১১.২

০.০৯

০.৩৩

১০

২৮

১.৪

-

০.০৩

০.০৩

০.০৪

২১২

কলা

৯৮

২২.৫

০.৮

০.৫

১০

৩০

০.৫

৮০

০.৩০

০.১০

০.৬

ল্যাংড়া আম

৮২

১৭.৮

০.৮

০.৮

১০

২০

০.৯

১০৩৫

-

-

১.৫

৮৩

কালোজাম

৬২

১৪.০

০.৭

০.৩

১৫

১৫

১.০

৮০

-

০.১

০.২

১৮

কাঁঠাল

৮৮

১৯.৮

১.৯

০.১

২০

৪১

০.৫

২৯২

০.০৩

০.১৩

০.৪

লিচু

৬১

১৩.৬

১.১

০.২

১০

৩৫

০.৭

-

০.০২

০.০৬

০.৪

৩১

আনারস

৪৬

১০.৮

০.৪

০.১

২০

১.২

৩০

০.২

০.১২

০.১

৩৯

পাকা পেঁপে

৩২

৭.২

০.৬০

০.১০

১৭

১৩

০.৫০

১১১০

০.০৪

০.২৫

০.২০

৫৭

লেবু (কাগজি)

৫৭

১১.১

১.০

০.৯

৯০

২০

০.২

-

০.০২

০.০২

০.১

৬৩

বাতাবি লেবু

৪৪

১০.২

০.৬

০.১

৩০

৩০

০.৩

২০০

০.০৩

০.০৩

০.২

২০

বেল

১৩৬

১.৮

১.৮

০.৩

৮৫

৫০

০.৬

৯৩

০.১৩

১.১৯

১.১৪

আতা

১১

২৬.২

১.৬

০.৩

৩৯৮

৪০

০.৩

-

০.৩৩

০.৪৪

১.৩

২৬

ডালিম

৬৫

১৪.৫

১.৬

০.১

১০

৭০

০.৩

-

০.০৬

০.১

০.৩

১৩

সফেদা

৯৪

২২.৩

০.৫

১.২

১০

২০

০.৩

-

০.০১

-

০.১

নারকেল

৬৬২

১৮.৪

৬.৮

৬২.৩

৪০০

২১০

২.৭

-

০.০৮

০.০৬

০.৬

জামরুল

৪৩

৯.৭

০.৭

০.২

১০

৩০

০.৫

২৩৪

০.০১

০.০৫

০.৪

কচি ডাব

২২

৫.০

০.১

০.১

২০

১০

০.১

-

-

-

০.১

তরমুজ

১৬

৩.৩

০.২

০.২

১১

১২

৭.৯

-

০.০২

০.০৪

০.১

আপেল

৫৫

১৩.৩

০.৩

০.১

২০

১.০

-

০.১২

০.০৩

০.২

নাসপাতি

৫৮

১৩.৪

০.৩

০.৩

২০

২০

৩.৬

১৪

০.০২

০.৩

০.২

-

কমলালেবু

৪০

৮.৯

০.৬

০.২

৫০

২০

০.১

১৮০০

০.১২

০.০৬

০.৩

৮৫

আঙুর

৭১

১৬.৫

০.৫

০.৩

২০

৩০

১.৫

-

০.১২

০.০২

০.৩

৩১

কিসমিস

৩০১

৭২.২

১.৮

০.৫

১০০

৮০

৭.১

-

০.১২

০.২৩

০.৫

খেজুর

১৪৪

৩৩.৮

০.২

০.৪

১২০

৫০

৭.৩

৪৪

০.০১

০.০২

০.৯

আখ

৮৩

২০.৫

০.১

০.১

১০

২০

০.৩

-

-

-

-

-

আখের রস

৩৯

৯.১

০.১

০.২

১০

১০

১.১

১০

-

০.০৪

০.৬

-

আমলকি

৯৬

৬.৯

০.৯

-

-

-

১.২

-

-

-

-

৪৪৫

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকা।

লেখকের মন্তব্য

স্বাস্থ্যসচেতন প্রত্যেকের উচিত খাদ্যদ্রব্যে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়ে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে খাবার গ্রহণ করা। অন্যথায় কম খেলে যেমন দেহ পুষ্টি স্বল্পতায় ভুগার সম্ভাবনা থাকে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত পুষ্টিমানও শরীরে নানাবিদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই খাবারে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিউপাদান সহ কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে সে সম্পর্কে প্রত্যেকের সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক।

উপরোল্লিখিত চার্টগুলোতে কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে কিংবা প্রত্যহ গৃহীত বিভিন্ন খাদ্যে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কতটুকু পরিমাণে থাকে তা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশাকরি স্বাস্থ্যসচেতন প্রত্যেকের জন্য আর্টিকেলটি উপকারী হবে। আর্টিকেলটিতে কোন প্রকার ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে কমেন্টবক্সে আপনাদের মতামতের মাধ্যমে ভুল সংশোধনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

সেইসাথে তথ্যগুলো পড়ে উপকৃত হলে প্রিয়জন ও পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আর্টিকেলে উল্রেখিত এতো পরিমাণের গাণিতিক তথ্য মুখস্থ রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই আপনার ডিভাইসের ব্রাউজারে আমাদের ওয়েবসাইট লিংক কিংবা আর্টিকেলটির লিংক বুকমার্ক করে রাখলে প্রয়োজনের সময় খুব সহজেই খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।



তথ্যসূত্র: ইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, Britannica, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; সাক্ষাৎকার: নিউট্রিসনিস্ট আয়শা সিদ্দিকাসহ বেশ কিছু অথেনটিক ওয়েবসাইট।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url