গরুর খামার তৈরির নকশা এবং গরুর বাসস্থান তৈরির নিয়ম
ভূমিকা
গরুর বাসস্থান তৈরি করা হয় কেন?
- গরুর বাসস্থান নির্মাণের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু লালন পালন করা।
- গবাদি পশুকে আরামদায়ক অবস্থা নিশ্চিত করতে।
- বন্য হিংস্র জীবজন্তু ও পশুপাখির হাত হতে গাভীকে রক্ষা করতে।
- চোর-ডাকাত হতে পশুকে রক্ষা করতে।
- গবাদিপশুর সঠিক পরিচর্যা, খাদ্য সরবরাহ, কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো ও অন্যান্য কার্যাদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা।
- খাদ্যের অপচয় রোধ করা ও খাদ্যের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
- সঠিক পদ্ধতিতে গরুর বাস্থান নির্মাণ করলে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায়।
- পশুকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- প্রতিটি পশুর প্রতি আলাদাভাবে বিশেষ নজর দেওয়া সম্ভব হয়।
- পশুকে বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়।
- গবাদিপশুর গোবল ও মলমূত্রের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
- রুটিন মাফিক পশুকে পরিদর্শন করা যায়।
- পশুর রোগ নির্ণয় ও অসুস্থ পশুকে চিকিৎসা প্রদান সহজ হয়।
গরুর বাসস্থান কোথাায় হওয়া উচিত
- অপেক্ষাকৃত উঁচু ও শুষ্কভূমি: গাভীর খামার স্থাপনের জন্য উঁচু ও শুষ্ক ভূমি নির্বাচন করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ও খামারের অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ সহজে নিষ্কাশন করা যায় এবং খামারটি শুষ্ক ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।
- খামারের অবকাঠানো নির্মাণ: তুলনামূলকভাবে উর্বর ভূমি বাদ দিয়ে অনুর্বর ভূমিতে গোশালা নির্মাণ করতে হবে। খামার ঘর হওয়া উচিত দক্ষিণমূখী যেন খুব সহজে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস ও সূর্যের কিরণ পায়। এতে ঘর স্যাঁতসেঁতে হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
- সম্প্রসারণ: ভবিষ্যতে গাভীর খামার সম্প্রসারণ করার জন্য আশেপাশে জায়গা থাকতে হবে। তাই খামারের জন্য অপেক্ষাকৃত অল্পমূল্যে ও সহজে জমি পাওয়া যায় সেরূপ স্থান নির্বাচন করতে হবে।
- জনবসতি হতে দূরে: জনবসতি হতে দূরে গাভীর খামার স্থাপন করা উত্তম। এতে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
- যোগাযোগ ব্যবস্থা: খামারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে। গাভীর খামার প্রধান রাস্তা হতে দূরে হতে হবে। তবে ৫০ মিটারের অতিরিক্ত দূরে নয়।
- বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা: খামারের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে খামারে বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা করা যায়।
- পানি সরবরাহের ব্যবস্থা: অতি সহজেই এবং অল্প খরচে প্রচুর পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় এমন স্থানে দুগ্ধ খামার নির্বাচন করা উচিত।
- খাদ্যের প্রাপ্যতা: যে এলাকায় পশুর খাদ্য সহজে ও অল্পমূল্যে পাওয়া যায় এবং কাঁচা ঘাস উৎপাদন করা যায় এমন স্থান খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
- পণ্যের চাহিদা ও বাজার ব্যবস্থা: যেখানে খামারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা আছে এবং সহজে বাজারজাতকরণের সুবিধা আছে এমন স্থানে খামার স্থাপন করা উচিত।
- পরিবেশ: বন্য জীবজন্তু বা অবাঞ্চিত লোকজন দ্বারা খামার ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এমন স্থান খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া খামারের আশপাশে জলাভূমি বা হাওড় না থাকাই উত্তম।
গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত
- পশুর সংখ্যা, বয়স, প্রকৃতি অনুযায়ী বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে।
- পশুর জন্য আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যরক্ষার উপযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়।
- পানি ও বৈদ্যুতিক আলোক সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- প্রয়োজনবোধে বাসস্থান সম্প্রসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- নির্মাণ অবশ্যই মজবুত ও টেকসই হতে হবে।
- বাসস্থানের পাশে ঘাস উৎপাদনের জমি থাকতে হবে।
- গোবর ও অন্যান্য আবর্জনা নিস্কাশনেরে ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- গবাদি পশুর ঘর নির্মাণের জন্য উঁচু সমতলভূমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। ঘরটি মোটামোটি খোলামেলা জায়গায় দক্ষিণমুখী করে তৈরী করার চেষ্টা করতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। তীব্র তাপদাহ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে কিছুটা সুরক্ষা পেতে ঘরের আশেপাশে কিছু গাছ থাকা উত্তম।
- ঘরটি টিনের চালা দ্বারা তৈরী করা হলে টিনের চালার নিচে বাঁশের বা চাটাইয়ের সিলিং দিতে হবে। যাতে টিনের গরমে গরুর অসুবিধা না হয়। এ জাতীয় ঘরের বেড়া বা দেয়াল দেওয়ার প্রয়োজ হয় না। চারদিকে খোলা রাখতে হয়। তবে চোর বা জন্তু জানোয়ারের উপদ্রব হতে রক্ষা করার জন্য চারিদিকে বাঁশের খোপ খোপ বেড়া বা মেঝে থেকে ১ মিটার উঁচু লোহা জালের বেড়া দেওয়া যায়।
একটি গরুর জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন
পশুর বিবরণ |
প্রতিটি পশুর জন্য মেঝের প্রয়োজন (বর্গফুট) |
প্রতিটি পশুর জন্য খাদ্য পাত্রের দৈর্ঘ্য (ইঞ্চি) |
|
আবদ্ধ জায়গা |
খোলা জায়গা |
||
গাভী | ২০-৩০ | ৮০-১০০ | ২০-২৪ |
মহিষ | ২৫-৩৫ | ৮০-১০০ | ২৪-৩০ |
বাড়ন্ত গরু | ১৫-২০ | ৫০-৬০ | ১৫-২০ |
বাছুর | ০৭-১০ | ২০-৩৫ | ১০-১৫ |
বকনা | ১৮-২০ | ৬০-৭৫ | ১৮-২০ |
গর্ভবতী গাভী | ১০০-১২০ | ১৮০-২০০ | ২৪-৩০ |
ষাঁড় গরু | ১২০-১৪০ | ২০০-২৫০ | ২৪-৩০ |
- ছক-২: একসারি বিশিষ্ট গোশালায় বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশুর জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:
পশু |
দাঁড়াবার জায়গা (দৈর্ঘ্য) |
পাশের জায়গা (প্রস্থ)
|
খাবার পাত্র |
নালা |
||||
সে.মি. |
ফুট |
সে.মি.
|
ফুট |
সে.মি. |
ফুট |
সে.মি. |
ফুট |
|
গরু |
১৬৫ |
৫.৭৫ |
১০৫ |
৩.৩৫ |
৭৫ |
২.৬০ |
৩০ |
১.০০ |
মহিষ |
১৮০ |
৬.২৫ |
১২০ |
৪.২০ |
৭৫ |
২.৬০ |
৩০ |
১.০০ |
- ছক-৩: দ্বি-সারি বিশিষ্ট মুখোমুখি পদ্ধতির গোশালার জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:
|
বাম পাশের সারি |
খাদ্য সরবরাহের রাস্তা |
ডান পাশের সারি |
|
||||||
পশু |
পশু প্রবেশের রাস্তা |
নালা |
পশুর স্টল |
খাবার ও পানির পাত্র |
খাবার ও পানির পাত্র |
পশুর স্টল |
নালা |
পশু প্রবেশের রাস্তা |
সর্বমোট |
|
গরু | ৩ ফুট | ০১ ফুট | ৫ ফুট | ২ ফুট | ৪ ফুট | ২ ফুট | ৫ ফুট | ১ ফুট | ৩ ফুট | ২৬ ফুট |
প্রতিটি স্টলে গরুর জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩ ফুট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৬ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা গরুর পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। গরুর সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী গরুর সংখ্যাকে ৩ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। | ||||||||||
মহিষ | ০১ ফুট | ৩ ফুট | ৫.৫ ফুট | ২ ফুট | ৪ ফুট | ২ ফুট | ৫.৫ ফুট | ১ ফুট | ৩ ফুট | ২৭ ফুট |
প্রতিটি মহিষের জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩.৫ ফুট জায়গা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ৮৭.৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৭ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা মহিষের পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। মহিষের সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী মহিষের সংখ্যাকে ৩.৫ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। |
- ছক-৪: দ্বি-সারি বিশিষ্ট পিছোপিছি পদ্ধতির গোশালার জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:
|
বাম পাশের সারি |
পয়ঃনিষ্কাশন ও পশু প্রবেশের রাস্তা |
ডান পাশের সারি |
|
||||||
পশু |
খাদ্য সরবরাহের রাস্তা |
খাবার ও পানির পাত্র |
পশু স্টল |
নালা |
নালা |
পশু স্টল |
খাবার ও পানির পাত্র |
খাদ্য সরবরাহের
রাস্তা |
সর্বমোট |
|
গরু | ৩ ফুট | ২ ফুট | ৫ ফুট | ১ ফুট | ৬ ফুট | ১ ফুট | ৫ ফুট | ২ ফুট | ৩ ফুট | ২৮ ফুট |
প্রতিটি স্টলে গরুর জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩ ফুট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩ = ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৮ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা গরুর পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। গরুর সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী গরুর সংখ্যাকে ৩ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। | ||||||||||
মহিষ | ৩ ফুট | ২ ফুট | ৫.৫ ফুট | ১ ফুট | ৬ ফুট | ১ ফুট | ৫.৫ ফুট | ২ ফুট | ৩ ফুট | ২৯ ফুট |
প্রতিটি মহিষের জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩.৫ ফুট জায়গা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩.৫ = ৮৭.৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৯ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা মহিষের পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। মহিষের সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী মহিষের সংখ্যাকে ৩.৫ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। |
- ছক-৫: বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশুর খাদ্য ও পানির পাত্রের মাপ নিম্নরূপ:
পশু |
প্রতিটি পশুর জন্য প্রয়োজন (সেন্টিমিটার) |
||||
ভোজন পাত্র |
পানির পাত্র |
চওড়া |
গভীরতা |
দেয়ালের উচ্চতা |
|
গরু | ৬০-৭০ | ৬০-৭৫ | ৬০ | ৪০ | ৫০ |
মহিষ | ৬০-৭০ | ৬০-৭৪ | ৬০ | ৪০ | ৫০ |
বাড়ন্ত গরু | ৫০-৬০ | ৫০-৬৫ | ৫০ | ৩০ | ৩৫ |
বাছুর | ৪০-৫০ | ৪০-৫০ | ৪০ | ১৫ | ২০ |
গরুর বাসস্থান কত প্রকার ও কি কি?
- উদাম ঘর
- বাঁধা ঘর
গরুর ‘উদাম ঘর’ কী
পশুর উদাম ঘরের সুবিধা |
পশুর উদাম ঘরের অসুবিধা |
|
|
গরুর উদাম ঘর নির্মাণ পদ্ধতি
গরুর ‘বাঁধা ঘর’ কী?
পশুর বাঁধা ঘরের সুবিধা | পশুর বাঁধা ঘরের অসুবিধা |
|
|
বাঁধা ঘর পদ্ধতিতে গোশালার প্রকারভেদ
- একসারি বিশিষ্ট গোশালা [Single Row System Cowshed]
- দ্বিসারি বিশিষ্ট গোশালা [Double Row System Cowshed]
- মুখোমুখি বা অন্তর্মূখী পদ্ধতি
- পিছোপিছি বা বহিঃর্মূখী পদ্ধতি
মুখোমুখি বা অন্তর্মূখী পদ্ধতির গোশালা কেমন হয়?
মুখোমুখি পদ্ধতির গোশালার সুবিধা | মুখোমুখি পদ্ধতির গোশালার অসুবিধা |
|
|
পিছোপিছি বা বহিঃর্মূখী পদ্ধতির গোশালা কেমন হয়?
পিছোপিছি পদ্ধতির গোশালার সুবিধা | পিছোপিছি পদ্ধতির গোশালার অসুবিধা |
|
|
গরুর খামার তৈরির নকশা
মুখোমুখি বা অন্তর্মূখী পদ্ধতিতে গরুর খামার তৈরির নকশা
পশু |
জায়গার পরিমাপ |
সর্বমোট জায়গা |
||
বামপাশের সারি |
রাস্তা |
ডানপাশের সারি |
||
গরু | নালা ০১ ফুট + গরু স্টলে প্রবেশের রাস্ত ০৩ ফুট + গরুর স্টলের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট + গরুর খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট | পরিদর্শন ও খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ৪ ফুট | + গরুর খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + গরুর স্টলের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট + গরু স্টলে প্রবেশের রাস্ত ০৩ ফুট + নালা ০১ ফুট | গোশালার সর্বমোট প্রস্থ = ২৬ ফুট। ৫০টি গরুর গোশালার দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ ২৬ ফুট। |
|
প্রতিটি স্টলে গরুর জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩ ফুট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩ = ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৬ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা গরুর পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। গরুর সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী গরুর সংখ্যাকে ৩ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। | |||
মহিষ | নালা ০১ ফুট + মহিষ স্টলে প্রবেশের রাস্ত ৩ ফুট + মহিষ স্টলের দৈর্ঘ্য ৫.৫ ফুট + মহিষের খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট | পরিদর্শন ও খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ৪ ফুট | + মহিষের খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + মহিষের স্টলের দৈর্ঘ্য ৫.৫ ফুট + মহিষ স্টলে প্রবেশের রাস্ত ০৩ ফুট + নালা ০১ ফুট | গোশালার সর্বমোট প্রস্থ = ২৭ ফুট। অতএব, ৫০টি মহিষের গোশালার দৈর্ঘ্য 87.5 ফুট এবং প্রস্থ ২৭ ফুট। |
|
প্রতিটি মহিষের জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩.৫ ফুট জায়গা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩.৫ = ৮৭.৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৭ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা মহিষের পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। মহিষের সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী মহিষের সংখ্যাকে ৩.৫ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। |
পিছোপিছি বা বহিঃর্মূখী পদ্ধতিতে গরুর খামার তৈরির নকশা
পশু | জায়গার পরিমাপ | সর্বমোট জায়গা | ||
বামপাশের সারি | রাস্তা | ডানপাশের সারি | ||
গরু | খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ০৩ ফুট + গরুর খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + গরুর স্টলের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট + নালা ০১ ফুট | পরিদর্শকের চলাচল, গরু স্টলে প্রবেশ করানো ও পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য রাস্তা ৬ ফুট | নালা ০১ ফুট + গরুর স্টলের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট + গরুর খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ০৩ ফুট | গোশালার সর্বমোট প্রস্থ = ২৮ ফুট। ৫০টি গরুর গোশালার দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ ২৮ ফুট। |
| প্রতিটি স্টলে গরুর জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩ ফুট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩ = ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৮ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা গরুর পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। গরুর সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী গরুর সংখ্যাকে ৩ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। | |||
মহিষ | খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ০৩ ফুট + মহিষের খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + মহিষের স্টলের দৈর্ঘ্য ৫.৫ ফুট + নালা ০১ ফুট | পরিদর্শকের চলাচল, মহিষ স্টলে প্রবেশ করানো ও পয়ঃ নিষ্কাশনের জন্য রাস্তা ৬ ফুট | নালা ০১ ফুট + মহিষের স্টলের দৈর্ঘ্য ৫.৫ ফুট + মহিষের খাবার ও পানির পাত্রের জায়গা ২ ফুট + খাদ্য সরবরাহের রাস্তা ০৩ ফুট | গোশালার সর্বমোট প্রস্থ = ২৯ ফুট। অতএব, ৫০টি মহিষের গোশালার দৈর্ঘ্য ৮৭. ৫ ফুট এবং প্রস্থ ২৯ ফুট। |
| প্রতিটি মহিষের জন্য পাশের দিকে (প্রস্থ) ৩.৫ ফুট জায়গা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ জোড়া (৫০টি) গরুর গোশালার সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ২৫ x ৩.৫ = ৮৭.৫ ফুট এবং প্রস্থ হবে ২৯ ফুট। উল্লেখ্য যে, স্টল বা মহিষের পাশের (প্রস্থ) দিকটি পূর্ণাঙ্গ গোশালার জন্য দৈর্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত। মহিষের সংখ্যা যতই হোক না কেন গোশালার প্রস্থের মাপের কোন পরিবর্তন হবে না। শুধুমাত্র দৈর্ঘ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী মহিষের সংখ্যাকে ৩.৫ দিয়ে গুণ করলে গোশালার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। |
গরুর বাসস্থান তৈরির নিয়ম /
বাঁধা ঘর পদ্ধতিতে গরুর বাসস্থান তৈরির নিয়ম
- গোশালার দেয়াল নির্মাণ: গোশালার দেয়াল মাটি বা ইট দিয়ে তৈরি করা যায়। তবে পাকা দেয়াল অনেক ভালো। পাকা দেয়ালের ভিতরদিক সিমেন্ট দিয়ে ভালোভাবে প্লাস্টার করা উচিত। এতে পশুকে আক্রান্তকারী কীট-পতঙ্গ দেয়ালের ফাঁকফোকর না পেয়ে বাসা বাঁধতে পারে না। দেয়াল শুকনো থাকে। দেয়ালের কোণগুলো গোলাকৃতির করতে হয়। দেয়ালের উচ্চতা ৪-৫ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়।
- সাধারণত গোশালার ছাদ সিমেন্ট অথবা আয়রণ পিলারের উপর দেওয়া হয়। দেয়ালে উপর থেকে ছাদ পর্যন্ত বাকী অংশটুকু এসএস পাইপ বা টিএমটি বারের গ্রিল দিতে হবে অথবা বাঁশ দিয়ে তৈরী খোপ খোপ করে বেড়া দেওয়া যেতে পারে। এতে গোশালায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। যদি ছাদ পর্যন্ত দেওয়াল দেওয়া হয় তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অন্তর ৪ x ৩ ফুট জানালা রাখতে হবে।
- মেঝে নির্মাণ: গোশালায় ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে পাঁকা মেঝে তৈরী করতে হবে এবং অবশ্যই মেঝে অমসৃন হতে হবে যেন পশু পিছলে পড়ে না যায়। মেঝেটি ভোজন পাত্র হতে ১-১.৫ ইঞ্চি নিচু করতে হয়। মেঝেটি নালার দিকে সামান্য পরিমাণে ঢালু রাখতে হবে যেন পশুর মূত্র জমে না থাকে এবং সহজেই নালায় গড়িয়ে যায়। এছাড়া মেঝে একটু ঢালু থাকলে গোবর তোলার পর হুইপ পাই দিয়ে পানি দিলে খুব সহজেই মেঝে পরিস্কার হয়ে যায়।
- ছাদ নির্মাণ: গোশালার ছাদ ছন, সিমেন্ট টিন, অ্যাসবেস্টস, টালি ইত্যাদি দ্বারা তৈরী করতে হবে। আয়রণ টিন ব্যবহার করা যাবে না কারণ এতে গোশালার ভেতরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা পশুর জন্য ক্ষতিকর। তবে আয়রণ টিন রঙ করে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই টিনের নিচে হিট প্রুফ ফোম, কাঠ, বাঁশ, পাট কাঠি বা খড়ের সিলিং ব্যবহার করতে হবে।
- পয়ঃনিষ্কাশন নালা তৈরী: গবাদিপশুর মলমূত্র পরিস্কার করার জন্য নালা আবশ্যক। নালার শেষ প্রান্তে মলমূত্র সংগ্রহের জন্য একটি চৌবাচ্চা বা গর্তের প্রয়োজন। কেননা ঐসব গোবর ও মলমূত্র জৈবসার হিসেবে খুবই চাহিদাসম্পন্ন। নালাটি অবশ্যই চৌবাচ্চা বা গর্তের দিকে ঢালু রাখতে হবে যেন পানি দিলে খুব সহজেই পশুর মলমূত্র চৌবাচ্চায় গড়িয়ে যায়।
- ভোজন পাত্র ও পানির পাত্র: পশুর ভোজন পাত্র ও পানি পানের পাত্র সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করতে হবে। দুটি পাত্রই প্রতিটি স্টলের সামনে পাশাপাশি রাখতে হবে। পাত্রদুটিকে পশুর স্টল থেকে এমনভাবে ঘিরে রাখতে হবে যেন পশু খুব সহজেই খাবার খেতে পারে কিন্তু কোনোভাবেই যেন পশু ভোজন পাত্রের উপর না আসতে পারে।
- দরজা নির্মাণ: একসারি বিশিষ্ট গোশালায় ৭ ফুট লম্বা এবং ৫ ফুট চওড়ার দরজা হলেও জলে কিন্তু দ্বি-সারি বিশিষ্ট গোশালায় কমপক্ষে ৮-৯ ফুট চওড়া দরজা প্রয়োজন। দরজাগুলো এমন হতে হবে যেন সেগুলি সম্পূর্ণ খুলে দিলে দেয়ালের সাথে লেগে থাকে।
একটি পূর্ণাঙ্গ খামারে গোশালার অন্যান্য ঘর
- দুগ্ধ দোহনশালা: একটি পূর্ণাঙ্গ গোশালায় গাভীর দুগ্ধ দোহনের জন্য পৃথক দুগ্ধ দোহন ঘরের ব্যবস্থা করতে হয়। এটি সাধারণত উদাম ঘর পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। এই ঘরটি এমনভাবে তৈরী করা উচিত যেন সেখানে ময়লা বা ধূলোবালি প্রবেশ করতে না পারে। এই ঘরে দুগ্ধ দোহন ও দুগ্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি মজুদ থাকে।
- প্রসূতি ঘর: গাভীর বাচ্চা প্রসবের জন্য প্রসবের ২-৩ সপ্তাহ পূর্ব থেকে গাভীকে যে ঘরে পৃথক করে রাখা হয় তাকে প্রসূতি ঘর বলে। সাধারণত প্রজননক্ষম গাভীর মোট সংখ্যার ৫ ভাগ প্রসূতিঘর থাকা আবশ্যক। এই ঘরে ৩ x ৪ মিটার অংশ আবৃত এবং ৩.৪ মিটার অংশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা থাকে। ঘরের মেঝেতে খড় ও বিচালী দিয়ে বিছানা করা উচিত।
- বাছুরের ঘর: দুধদোহন ঘরের পাশে বাছুরের ঘর থাকা প্রয়োজন। এতে বাছুর দিয়ে দুধ দোহন, বাছুরকে দুধ খাওয়ানো ও যত্ন নেওয়া সহজ হয়। বাছুরের সংখ্যা বেশি হলে বয়স অনুযায়ী পৃথক ঘর থাকা ভালো।
- বকনের ঘর: বকনকে ছয়মাস বয়স থেকে প্রজননক্ষম হওয়া পর্যন্ত পৃথক ঘরে পালন করা ভালো। বকনের শেড শুষ্ক গাভীর শেডের পাশে হওয়া ভালো।
- অসুস্থ পশুর ঘর: অসুস্থ পশুর ঘরটি অন্যান্য ঘর থেকে একটু দূরে স্থাপন করা উচিত। কারণ রোগাক্রান্ত পশু হতে রোগ জীবাণু অন্য সুস্থ পশুতে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। উক্ত ঘরের সাথে নর্দমা, নালা সবকিছুই পৃথক করা উচিত। সাধারণত এই ঘরটি ১৫ x ১০ ফুট মাপের হতে পারে।
- ষাঁড়ের ঘর: সবসময় ষাঁড়ের আলাদা ঘর রাখতে হবে। প্রতিটি ষাঁড়ের জন্য পৃথক ঘর থাকতে হবে। সাধারণত ৫০টি প্রজননক্ষম গাভী ও বকনের জন্য ১টি ষাঁড় প্রয়োজন। ষাঁড়ের ঘরের ৩ x ৪ মিটার অংশ আবৃত এবং ১২০ বর্গমিটার অংশ খোলা থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এই ঘরেও অন্যান্য ঘরের মত খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখতে হবে। ষাঁড়ের ব্যায়ামের জন্য ২-৩ ফুট দেয়াল বা বাশের বেড়ো দিয়ে মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরটি এমনভাবে এমন জায়গায় তৈরী করতে হবে যেন ঐ স্থান থেকে ষাঁড় অন্যান্য পশুদের দেখতে পায়।
লেখকের মন্তব্য
তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া, এগ্রোবাংলা এবং ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, অধ্যাপক, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক রচিত এবং নূর পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “লাভজনক পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা” বই থেকে নেওয়া। খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে বইটি আপনার সংরক্ষণে রাখতে পারেন। |
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url