কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং সাইলেজ তৈরির নিয়ম

কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম উপায় হলো সাইলেজ। সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ঘাস প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের পশুর জন্য ১০ কেজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। অকালে পশুর খাদ্য সংকট মোকাবেলায় খামার ব্যবস্থাপনায় কাঁচা ঘাস সংরক্ষেণের জন্য সাইলেজ তৈরির নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক খামারীর জন্য আবশ্যক।
কাঁচা_ঘাস_সংরক্ষণ_পদ্ধতি_এবং_সাইলেজ_তৈরির_নিয়ম
কাাঁচাঘাস সংরক্ষণের চমকপ্রদ এই পদ্ধতি সম্পর্কে সবাই অবগত নয়। অথচ বাংলাদেশের মত মৌসুমী জলবায়ুর দেশে অতিরিক্ত খরা কিংবা বন্যায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিলে ভরা মৌসুমে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করে সাইলেজ করলে গো-খাদ্যের অভাব লাঘব করা সম্ভব।

ভূমিকা

সাইলেজ হলো কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণ করলে একদিকে যেমন গো-খাদ্যের খরচ কমে আসে তেমনি অপর দিকে পশুর জন্য প্রতিকূল মৌসুমে গো-খাদ্যের অভাব থাকে না। খামার ব্যবস্থাপনায় পশুর জন্য যেমন দানাদার খাদ্য দরকার তেমনি কাঁচা ঘাসও দরকার। কিন্তু বছরের সবসময় পশুকে কাঁচা ঘাস সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম উপায় সাইলেজের মাধ্যমে বিরূপ আবহাওয়ায়ও পশুকে কাঁচা ঘাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সক্ষম।

কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি

আমাদের দেশে চারণভূমির অভাবে এমনিতেই কাঁচা ঘাস পাওয়া যায় না। আবার উন্নত জাতের বিভিন্ন ঘাস চাষ করলেও সেগুলো মৌসুমী হওয়ায় বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময় প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। তাই, বছরের অন্য সময়ে যখন ঘাস উৎপাদন করা যায় না তখন ব্যবহারের জন্য কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করতে হয়। গাভী হতে নিয়মিত দুধ পেতে হলে সারা বছরই কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়। তাই, কাঁচা সবুজ ঘাস নষ্ট না করে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। কাঁচা সবুজ ঘাস সাধারণত দু’ভাবে সংরক্ষণ করা যায়, যেমন- ‘হে’ করে এবং ‘সাইলেজ’ করে।

হে তৈরির পদ্ধতি

কাঁচা ঘাস শুকিয়ে ‘হে’ তৈরি করতে হয়। ‘হে’ এক এক প্রকার শুষ্ক ঘাস যার মধ্যে কেরোটিনযুক্ত সকল পুষ্টিমান সংরক্ষিত থাকে। উন্নত ‘হে’ এর মধ্যে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ শুষ্ক পদার্থ এবং ১৫-২০ ভাগ পানিয় উপাদানের বেশি থাকে না। ‘হে’ কে রাফেজ বা মোটা গো-খাদ্য বলা হয়। নিচে ‘হে’ তৈরির পদ্ধতি উপস্থাপন করা হলো:
  • ‘হে’ তৈরির জন্য প্রথমে ঘাস নির্বাচন করতে হয়।
  • সবুজ ওট্‌স বা যব ঘাস থেকে সর্বোত্তম ‘হে’ তৈরি করা যায়।
  • নির্বাচিত ঘাসগুলো অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক সবুজ পাতাযুক্ত হতে হবে।
  • ঘাসের কান্ডগুলো হতে হবে নরম এবং সতেজ।
  • ঘাসগুলো হতে হবে পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত। আগাছা বা আবর্জনাযুক্ত বা ধুলি-বালিযুক্ত ঘাস হলে ‘হে’ ভালো হয় না।
  • উন্নত মানের ‘হে’ তৈরির জন্য ভোরে ঘাস কেটে প্রখর তাপে ৪-৫ ঘণ্টা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়।
  • এভাবে পরপর দু’দিন শুকানোর পর ‘হে’ সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে উঠে।
  • শুকানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘাসের পাতা ভেঙ্গে চূর্ণবিচুর্ণ না হয়ে যায়।
  • ঘাস শুকানোর পর ‘হে’ তৈরি হয়ে গেলে আটি বেঁধে শুকনা জায়গায় কাঠের মাঁচা বা বাঁশের মাঁচার উপর সংরক্ষণ করে রাখলে তা একবছর পর্যন্ত খাবার উপযুক্ত থাকে।
সংরক্ষিত ‘হে’ যেন বৃষ্টির পানিতে না ভিজে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ‘হে’ এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং একটা পর্যায়ে ‘হে’ পঁচে যায়।

‘সাইলেজ’ একটি ইংরেজী শব্দ যা দ্বারা গো-খাদ্যের বেলায় সবুজ ঘাসের পুষ্টিমান অক্ষুন্ন রেখে একটি নির্দিষ্ট অম্লতায় বা ক্ষারত্বে সংরক্ষিত ঘাসকে বুঝায়। অর্থাৎ বায়ুশূন্য অবস্থায় সবুজ কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করাকে সাইলেজ বলে। সাধারণত খড় জাতীয় খাদ্য ব্যতীত সব ধরনের সবুজ ঘাসই সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। সাইলেজের ফলে ঘাসের পুষ্টিগত মানের কোনো পরিবর্তন হয় না।

সাইলেজ কাঁচা ঘাস হিসেবেই থাকে। যে মৌসুমে ঘাসের উৎপাদন প্রচুর হয় এবং ঘাস অতিরিক্ত থাকে সে মৌসুমে কাঁচা ঘাস সাইলেজ করে রাখলে ঘাসের অকাল মৌসুমে পশুকে সাইলেজ খাওয়ানো যায়। সাইলজে কাঁচা ঘাসের সকল গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে বিধায় সাইলেজ খাওয়ালে গাভীর দুধ উৎপাদনে কোনো ব্যতিক্রম হয় না।

উন্নত জাতের ঘাস, যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, গিনি, ভুট্টা দিয়ে সাইলেজ তৈরি করা যায়। অধিক শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ঘাস সাইলেজ তৈরির জন্য উৎকৃষ্ট। অধিক শর্করাযুক্ত ঘাসের সাথে কম শর্করাযুক্ত ঘাস এক সাথে মিশিয়ে সাইলেজ করলেও শর্করার পরিমাণ ভালো থাকে। ধানের কাঁচা খড় বেশি পরিমাণে থাকলে নষ্ট না করে উন্নতজাতের ঘাসের সাথে মিশিয়ে ভালো সাইলেজ করা যায়।
কাঁচা_ঘাস_সংরক্ষণ_পদ্ধতি_এবং_সাইলেজ_তৈরির_নিয়ম
সাইলেজ খাওয়ানোর সময় ঝোলাগুড় মিশিয়ে শর্করার পরিমাণ বাড়ানো যায়। গাভীকে দেহের ওজন অনুপাতে সর্বোচ্চ ১২-১৫ কেজি পর্যন্ত সাইলেজ খাওয়ানো যায়। সাইলেজ অম্লগন্ধযুক্ত গো-খাদ্য যা গাভীর নিকট খুবই পছন্দনীয়। তবে দুগ্ধবতী গাভীকে দুধ দোহনের পর সাইলেজ খাওয়াতে হয় অন্যথায় দুধে সাইলেজের গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।

সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়

  • ঘাসের অকাল মৌসুমে গো-খাদ্য হিসেবে ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতিকে সাইলেজ বলা হয়ে থাকে। নিচে সাইলেজ তৈরির একটি প্রচলিত নিয়ম উল্লেখ করা হলো: 
  • সাইলেজ পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করতে প্রথমে সাইলো পিট তৈরি করতে হয়। সাইলো পিট সাধারণত গোলাকার বা চার দেয়াল বিশিষ্ট্য হয়ে থাকে।
  • পিট তৈরি করার পর কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে বা আস্ত ঘাস পিটের ভিতর চেপে চেপে ভরাট করতে হয়।
  • ভুট্টা গাছ প্রথম ফুল আসার সময় বা অন্যান্য ঘাস কচি অবস্থায় অর্থাৎ যখন ঘাসে পর্যাপ্ত রস থাকে তখন সে ঘাস দিয়ে সাইলেজ প্রস্তুতের উপযুক্ত সময়।
  • সাধারণত ০.৩ কিউবিক মিটার আকারের সাইলো পিটে ১৫ কেজি কাঁচা ঘাস চপিং করে বা টুকরা করে সাইলেজ করা যায়।
  • ৪টি গাভীর তিন মাসের জন্য প্রায় ৫.৫ টন ঘাসের সাইলেজ রাখতে হয়। আর এই পরিমাণ ঘাসের সাইলেজ করতে ২ মিটার গভীর ও ৩ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট সাইলো পিট তৈরি করতে হয়।
  • গাভী এবং ঘাসের পরিমাণ কম বেশি হলে আনুপাতিক হারে সাইলো পিটের আকার কম বেশি হবে।
  • পিটেরে মধ্যে স্তরে স্তরে ঘাস সাজিয়ে পা দিয়ে চেপে চেপে পিট ভরাট করতে হবে। ঘাস ভরাট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ঘাসে বায়ু না থাকে।
  • ঘাস ভরা যত বেশি আঁটশাঁট এবং বায়ুশূন্য হবে সাইলেজের মান তত উন্নত হবে এবং বেশি দিন ভালো থাকবে।
  • সাইলো পিট ভর্তি হয়ে গেলে ঘাসের উপর নিম্নমানের ঘাস বা খড় বিছিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • তারপর প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে উপরে ভালোভাবে মাটি দিয়ে মাঝখানে উঁচু করে চারদিক ঢালু করে দিতে হবে। এতে বৃষ্টির পানি চারদিকে গড়িয়ে চলে যায় এবং সাইলো পিটের ভিতরে পানি ঢুকার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না।
  • সাইলো পিটের ভিতরে কোনোভাবে বৃষ্টির পানি ঢুকলে সাইলেজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • একটি সাইলো পিটে সাইলেজ তৈরির কাজটি সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
  • ঘাস সাইলো পিটে বায়ু ও পানি রোধক করে রাখার ১ মাস পরই সাইলেজ তৈরি হয়ে যায় এবং গো-খাদ্য হিসেবে উপযোগী হয়।
  • সাইলো পিট থেকে সাইলেজ খাওয়ানো আরম্ভ করলে একপাশ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত খালি করে সাইলেজ বের করতে হয়।

সাইলেজ তৈরীর দেশীয় পদ্ধতি

বাংলাদেশে বৃষ্টির মৌসুমে কোন কোন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ঘাস পাওয়া যায়। যেমন- দূর্বা, বাকসা, আরাইর, সেচি, দল, শষ্য খেতের আগাছা ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন গাছের পাতা যা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়, যেমন- ইপিল-ইপিল, ধৈঞ্চা ইত্যাদি। বৃষ্টির মৌসুমে গো-সম্পদের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হলেও শুষ্ক মৌসুমে সবুজ ঘাসের অভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। দেশীয় এসকল সবুজ ঘাস অথবা জমিতে চাষ করা নেপিয়ার, ভুট্টা সরগম, ওট্‌স ইত্যাদি খুব সহজেই ‘সাইলেজ’ করে সংরক্ষণ করা যায়।

সবুজ ঘাসের সাইলেজ করতে সাইলো ও প্রিজারভেটিভ দরকার হয়। সাইলো হলো যেখানে সাইলেজের উদ্দেশ্যে কাঁচা ঘাস রাখা হয় এবং প্রিজারভেটিভ হচ্ছে এক প্রকার ক্যামিকেল যা ঘাসকে সংরক্ষণে সহায়তা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সাইলোর ব্যবহার দেখা যায়। এমনকি ঘাসকে মেশিন দ্বারা পলিথিনে মুড়িয়েও সাইলেজ তৈরী করা যায়।

আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের এসব পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘাস সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বল্প ব্যয়ে মাটির গর্তে সবুজ ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। তারা ঘাস সংরক্ষণের প্রিজারভেটিভ হিসেবে সহজলভ্য চিটাগুড় ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুমে প্রাপ্ত সবুজ ঘাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয়াংশ থাকে যা সাইলেজের জন্য উপযোগী নয়।

এসকল সবুজ ঘাসকে সাইলেজ উপযোগী করতে শতকরা ১৫-২০ ভাগ শুকনো খড় ঘাসের সাথে স্তরে স্তরে দিলে একদিকে যেমন সাইলেজের গুণাগুণ ভালো থাকে অন্যদিকে ঘাসে মিশ্রিত চিটাঁগুড় চুইয়ে খড়ের সাথে মিশে খড়ের খাদ্যমানও বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতির একটি অতিরিক্ত সুবিধা হলো পরবর্তীতে পশুকে আর আলাদা করে খড় খাওয়াতে হয় না।

ডাল বা লিগুম জাতীয় ঘাস যেমন- খেসারী, মাসকালাই, কাউপি বা হেলেন ডাল, ইপিল-ইপিল ইত্যাদি ঘাসও সবুজ থাকা অবস্থায় সাইলেজ করে রাখা যায়। তবে এ ধরনের ঘাসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ থাকায় শুধুমাত্র ডাল জাতীয় ঘাস দ্বারা সাইলেজ করলে ভালো সাইলেজ নাও হতে পারে।

এজন্য এধরনের ঘাসের সাথে নন-লিগুম জাতীয় ঘাস যেমন- ভুট্টা, নেপিয়ার ইত্যাদি সর্বোচ্চ ১:১ এবং সর্বনিম্ন ১:৩ অনুপাতে মিশিয়ে সাথে চিটাঁগুড় দিয়ে সাইলেজ করা ভালো। নন-লিগুম জাতীয় ঘাস না পাওয়া গেলে শুকনা খড়ের সাথে মিশিয়েও সাইলেজ তৈরী করা যায়। পূর্বের নিয়মেই ঘাসের সহিত খড় ব্যবহার করা যাবে। মিশ্রিত ঘাসের পরতে পরতে আগের নিয়মে খড় দেওয়া উত্তম।
কাঁচা_ঘাস_সংরক্ষণ_পদ্ধতি_এবং_সাইলেজ_তৈরির_নিয়ম
১০০ সিএফটি (ঘনফুট) একটি মাটির গর্তে ২.৫০ থেকে ৩.০০ টন সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করা যায়। মাটির গর্তে সাইলেজ করতে চারদিকে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিলে সাইলেজের গুণগত মান ভালো থাকে এবং নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তবে পলিথিনের খরচ ব্যয়বহুল মনে হলে নিচে এবং চারদিকে পুরো করে শুকনো খড় বিছিয়ে মাটি ঢেকে দিয়েও সাইলো তৈরী করা যায়। নিচে ০৩ টন কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম উপায় সাইলেজ তৈরীর নিয়ম সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো:
  • প্রথমে সাইলো (মাটির গর্ত) তৈরীর জন্য উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে কোনোভাবেই পানি সাইলোর (মাটির গর্ত) ভিতরে না ঢুকতে পারে।
  • তারপর নির্ধারিত জায়গায় মাটি কেটে গর্ত তৈরী করতে হবে। গর্তের গভীরতা ৩ ফুট, গর্তের তলদেশের প্রস্থ ৩ ফুট, মাঝের দিকের প্রস্থ হবে ৮ ফুট এবং উপরের দিকে অর্থাৎ মুখের দিকে গর্তের প্রস্থ হবে ১০ ফুট। অর্থাৎ গর্তটি নিচের দিকে সরু হয়ে আস্তে আস্তে উপরের দিকে প্রশস্ত হতে থাকবে।
  • সবুজ ঘাসের শতকরা ৩-৪ ভাগ টিচাগুড় মেপে চাড়িতে নিতে হবে।
  • তারপর ঘন চিটাগুড়ের মধ্যে ১:১ অথবা ৪:৩ পরিমাণে পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিলে ইহা ঘাসের উপর ছিটানোর উপযোগী হবে।
  • সাইলোর তলায় এবং চারিধারে পলিথিন দিতে চাইলে আগেই বিছিয়ে নিতে হবে। পলিথিন না দিতে চাইলে পুরো করে গর্তের তলায় এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ঘাস দেওয়ার সময় চারদিকে খড় দিতে হবে।
  • এরপর স্তরে স্তরে সবুঝ ঘাস এবং শুকনো খড় দিতে হবে। প্রতি স্তরে ৩০০ কেজি ঘাস ১৫ কেজি পরিমাণের খড় দিয়ে স্তরটি তৈরী করতে হবে।
  • তারপর একটি পাত্রের মধ্যে ৯ থেকে ১২ কেজি চিটাগুড় এবং ৮ থেকে ১০ কেজি পানি মিশিয়ে নিতে হবে। চিটাগুড় ও পাণির মিশ্রণটি এমন হতে হবে যেন আঠার মত ঘাসের গায়ে লেগে থাকে। উল্লেখ্য যে, প্রতি ৩০০ কেজি ঘাসের জন্য এই মিশ্রণটি।
  • চিটাগুড় মিশ্রিত পানি ঝরনা বা খড়ের আঁটি দিয়ে মিশ্রণের মধ্যে চুবিয়ে সাইলোর মধ্যে যে ৩০০ কেজি পরিমাণ ঘাস বিছানো আছে তার উপর ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • ৩০০ কেজি ঘাসের স্তরটির উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিটাগুড় ছিটানোর পর ১৫ কেজি পরিমাণের খড় দিয়ে ঘাসের স্তরটিকে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।
  • এভাবে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি ঘাসের স্তরের উপর চিটাগুড় ছিটিয়ে তার উপর শুকনো খড় বিছিয়ে পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ গর্ত (সাইলো) ভরাট করতে হবে। উল্লেখ্য যে, খড়ের মধ্যে কোনো চিটাগুড় দিতে হবে না। ঘাসে মিশানো চিটাগুড়ই চুইয়ে চুইয়ে খড়ের সাথে মিশে যাবে।
  • গর্তের বাহিরেও কমপক্ষে ৪-৫ ফুট উঁচু পর্যন্ত এভাবে ঘাস, চিটাগুড় ও খড়ের স্তর সাজাতে হবে।
  • ঘাস ও খড়ের প্রতিটি স্তর ভালো করে পা দিয়ে চেপে চেপে সাজাতে হবে যেন ভিতরে ফাঁকা না থাকে এবং বাতাস ঢুকতে না পারে। যত আঁটশাঁট করে ঘাস সাজানো হবে সাইলেজ তত মানসম্পন্ন হবে।
  • ঘাস সাজানো হয়ে গেলে সবার উপরে বেশি করে খড়ের আস্তরণ দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • পলিথিনের চারদিকে ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে যেন কোনোভাবেই বৃষ্টির পানি সাইলোর ভিতরে না ঢুকতে পারে।
  • সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ০১ দিনেই করা উত্তম। যদি একদিনে করা সম্ভব না হয় এবং বৃষ্টি না থাকে তাহলে কয়েকদিন সময় নিয়েও করা যেতে পারে।
সাইলেজের মাধ্যমে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণে নিম্নলিখিত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে:
  • নীচু জায়গায় সাইলো করা যাবে না। এতে পানি জমে সাইলেজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • উপরের পলিথিন সুন্দরভাবে এঁটে দিতে হবে যাতে কোন পানি সাইলেজের ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে।
  • চিটাগুড়র পাতলা হলে পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং পানির পরিমাণ কমাতে হবে। বেশি পাতলা হলে চিটাগুড় ঘাস হতে চুইয়ে একদম নিচে চলে যাবে।
  • ঘাস এবং খড় এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে।
  • সাইলোর কোণাগুলো এবং সাইডের দিকে পা দিয়ে চেপে চেপে ঘাস সাজাতে হবে যেন কোনো রকম ফাঁকা না থাকে।
  • ঘাসের সাথে খুব বেশি পানি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।

লেখেকের মন্তব্য

কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক বর্ষা মৌসুমে প্রাপ্ত ঘাস মজুদ করলে শুষ্ক মৌসুমে গো-খাদ্যের অভাব হ্রাস করা সম্ভব। ঘাস সংরক্ষণের এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের গো-খাদ্যের অভাব কিছুটা হলেও সমাধান করা সম্ভব। বিশেষ করে দুগ্ধবতী গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অত্যাবশ্যকীয় একটি গো-খাদ্য। আর এই পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করলে অকালেও ‍দুগ্ধবতী গাভীকে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সাইলেজকৃত কাঁচা ঘাস সরবরাহ করা সম্ভব।

কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং সাইলেজ তৈরীর নিয়ম সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে খামারীদের জন্য রচিত। আশাকরি আর্টিকেলটি পড়ে বাস্তবে প্রয়োগ করলে অকালে গো-খাদ্যের সংকট নিরসনে সহায়ক হবে। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। সেই সাথে কোন তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে কমেন্টবক্সে আপনার মতামত পেশ করুন।




তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া, কৃষিজাগরণ, এগ্রোবাংলা, ড. মাহবুব মোস্তফা রচিত আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ ও চিকিৎসা এবং দুগ্ধবতী গাভী পালন, ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, অধ্যাপক, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক রচিত এবং নূর পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “লাভজনক পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা” বই থেকে নেওয়া। খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে বই দুটি আপনার সংরক্ষণে রাখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url