লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা

লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ বলতে মূলত এই রোগের ভ্যাকসিনকেই (টিকা) নির্দেশ করে। এছাড়াও লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঔষধ_এবং_লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঘরোয়া_চিকিৎসা
ভ্যাকিসিন ব্যতীত লাম্পি স্কিন রোগের জন্য কার্যকরী কোনো ওষুধ না থাকলেও এই রোগে আক্রান্ত গরু সেকেন্ডারী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বিধায় পশু চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন।

ভূমিকা

গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এল এস ডি) একটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ। এখন পর্যন্ত এ রোগ শুধুমাত্র গরু ও মহিষের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯২৯ সালে আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়ার গবাদিপশুতে এর রোগ দেকা যায়। সম্প্রতি রোগটি আফ্রিকাসহ মধ্য-প্রাচ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপ, চীন, ভারত এবং বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে বিস্তৃত। বাংলাদেশে প্রথম ২০১৯ সালে রোগটি শনাক্ত হয়ে বর্তমানে দেশব্যাপী রোগটির প্রাদুর্ভাব চলমান। তবে, শীতকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যায়।

ভাইরাজনিত সংক্রামক এই রোগটি মশা-মাছি দ্বারা সংক্রমিত হয় এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, এ রোগে আক্রান্তের হার ৮০-৯০% পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং মৃত্যুর হার ১০-৪০% পর্যন্ত হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে, মৃত্যুর হার আরো বেশিও হতে পারে। ২০১৯ সালে এই রোগে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় লক্ষ লক্ষ গরু আক্রান্ত হয় এবং অনেক গরু মারা যায়।
তাই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ হিসেবে প্রতিটি গরুকে ভ্যাকসিনেশন এর আওয়াতায় আনতে হবে। সেই সাথে আক্রান্ত পশুর মধ্যে যেনো অন্যান্য ভাইরাস আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধের পাশাপাশি দ্রুত নিরাময় ও পশুর কষ্ট লাঘবে লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে হবে।

লাম্পি স্কিন রোগের কারণ

লাম্পি স্কিন রোগ এক প্রকার চর্মরোগ যা ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। এ রোগের কারণ হিসেবে সিপ পক্স বা ক্যাপরিপক্স নামক ভাইরাস দায়ী। উক্ত ভাইরাস সংক্রমণের পর গরুর মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়।

লাম্পি স্কিন রোগ কিভাবে ছড়ায়

  • মশা, মাছি, আটালি এবং মাইটস এর মাধ্যমে রোগটি দ্রুত এক প্রাণি হতে অন্য প্রাণিতে ছড়ায়।
  • আক্রান্ত প্রাণির লালা, নাক থেকে নিঃসৃত পদার্থ, দুধ এবং আক্রান্ত প্রাণির সংস্পর্শের মাধ্যমেও রোগটি অন্য সুস্থ প্রাণিতে ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত প্রাণি এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত পশুর পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক ও ভ্যাকসিন প্রদানকারীর মাধ্যমেও সুস্থ পশুর মধ্যে ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত প্রাণির ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও অন্য সুস্থ প্রাণিতে ছড়াতে পারে।
  • এক কথায় আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসা যেকোনো জীব বা বস্তুর মাধ্যমে সুস্থ পশুও আক্রান্ত হতে পারে।

লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ

সিপ পক্স বা ক্যাপরিপক্স ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর পশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণস্বরূপ নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দেয়:
  • পশুর শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া সামান্য উঁচু দেখায় অথবা কুঁচকে যায়। এগুলো দেখতে গোলাকার বা গুটি বসন্তের মত মনে হয়।
  • কখনও কখনও গরুর সমস্ত শরীরজুড়ে উপরোক্ত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
  • আক্রান্ত হওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে গুটিগুলো ফেটে সেখান থেকে রস বা কস বের হতে থাকে।
  • ধীরে ধীরে গরুর শরীরে থাকা গুটিগুলো ঘাঁয়ে পরিণত হয়।
  • এ সময় গরুর শরীরের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় এবং তা ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে ১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • আক্রান্ত স্থানে পশু কিছুটা ব্যাথা অনুভব করে।
  • গরুর পায়ে এবং নিম্নাংশে ফোলা দেখা যায় এবং গরু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করে।
  • গরু খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়।
  • কখনও কখনও গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  • শরীরের বসন্তের মত গুটি ও চামড়া খসে পড়ে মাংস দেখা যায়।
  • অনেক সময় ক্ষতস্থান পঁচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে খসে পড়ে এবং প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়।
  • পশু আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
  • দ্রুত চিকিৎসা কিংবা রোগের লক্ষণ না জানার কারণে অনেক গরু মারা যায়।
লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঔষধ_এবং_লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঘরোয়া_চিকিৎসা

লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভ্যাকসিন এর নাম, দাম ও প্রাপ্তিস্থান

লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর ভ্যাকসিন এখনও বাংলাদেশে উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ইমপোর্ট (আমদানি) করছে। নিচে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভ্যাকসিন এর নাম, দাম ও প্রাপ্তিস্থান উল্লেখ করা হলো:
ক্র. নং ভ্যাকসিনের নাম, দাম ও প্রাপ্তিস্থান
০১. ভ্যাকসিনের নাম: Lumpyvac; কোম্পানির নাম: Battle Animal Health Products SA, Turkey; আমদানিকারক: Rafique Medecine, Ishawardi, Pabna, Bangladesh; দাম: ২৬০০ টাকা (১০টি গরুকে দেওয়া যাবে)।
০২. ভ্যাকসিনের নাম: Bovivax LSD-N; কোম্পানির নাম: MCI SANTE ANIMAL, Morocco; আমদানিকারক: ACI Ltd, Dhaka, Bangladesh.
০৩. ভ্যাকসিনের নাম: Lumpyvax; কোম্পানির নাম: MSD Animal Health Intervet South Africa (Pty) Ltd. South Africa; আমদানিকারক: Bengal Overseas Ltd, Dhaka, Bangladesh.
০৪. ভ্যাকসিনের নাম: Lumpy Shield; কোম্পানির নাম: Jordan Bio Industries, Jordan; আমদানিকারক: Bengal Overseas Ltd, Chittagong, Bangladesh.
০৫. ভ্যাকসিনের নাম: Servac Lumpy; কোম্পানির নাম: Veterinary Serum and Vaccine Research Institute; আমদানিকারক: Pharma & Firm, Dhaka, Bangladesh.

 

  • প্রাপ্তিস্থান: যেহেতু ভ্যাকসিনগুলো আমদানি নির্ভর সেহেতু আমদানি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে যেকোনো ভেটেরিনারী ফার্মেসীতে পাওয়া যায়। যদি ফার্মেসীতে না পাওয়া যায় তাহলে কোম্পানির নামসহ ভ্যাকসিনের নাম বললে ফার্মেসী মালিক সংগ্রহ করে দিতে পারবে।
  • প্রয়োগবিধি: ভ্যাকসিনের সাথে থাকা নির্দেশিকা দেখে প্রয়োগ করতে হবে। যেকোনো বয়সের পশুকে ঘাড়ের চামড়ার নিচে ২ সিসি পরিমাণে প্রতি ১ বছর অন্তর অন্তর এই ভ্যাকসিন দিতে হয়। এই ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, তবে গর্ভবতী গাভীর ক্ষেত্রে প্রথম মাস এবং প্রসবের পূর্ববর্তী এক মাস এই ভ্যাকসিন না দেওয়াই উত্তম।

গরুর এল এস ডি রোগের চিকিৎসা

রোগের ইতিহাস এবং প্রাণীর শরীরে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ ও লক্ষণ দেখে খুব সহজেই এই রোগ চেনা যায়। তবে পক্স, এফ.এম.ডি, বোভাইন হারপিস ভাইরাস-২, হাইফারসেনসেটিভ প্রতিক্রিয়া, কীট-পতঙ্গের কামড় ইত্যাদির সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণে কখনও কখনও এ রোগ নির্ণয়ে নানারকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগতে হয়। সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে লাম্পি স্কিন রোগকে অন্যান্য চর্মরোগ থেকে পৃথক করতে হবে। তাই ভেটেরিনারিয়ানের সহযোগিতায় পশুর আক্রান্ত স্থানের নমুনা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখে অথবা ফ্লোরোসেন্ট অথবা ইমোনো পারঅক্সাইডেজে কালচার করে রোগ নির্ণয় পূর্বক গরুর এল এস ডি রোগের চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ

প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও ভেটেরিনারী ডাক্তার প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার কর্তৃক রচিত গৃহপালিত পশু-পাখির রোগব্যাধি ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রন্থে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত একটি বড় বা মাঝারি পশুর জন্য নিম্নোক্ত ওষুধগুলো সঠিক মাত্রায় প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা খুবই সীমিত। এ রোগ ঔষধে ভালো হওয়ার ইতিহাস খুবই কম। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনই লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ হিসেবে সর্বোত্তম চিকিৎসা।
(১)
  • Inj. Niravet 10ml, 100ml (SK+F)
  • Inj. Astavet 10ml, 100ml (ACME)
  • Inj. Renacin 10ml, 100ml (Renata)
  • Inj. Phenadryl 10ml, 100ml (ACME)
  • Inj. Histavet 10ml, 100ml (ACI)
প্রয়োগবিধি: উপরোল্লিখিত এন্টিহিস্টামিন গ্রুপের যেকোনো একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংশপেশীতে প্রতিদিন একবার ১০ মি.লি. করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
(২)
  • Inj. Keto-A vet 10ml, 30ml (ACME)
  • Inj. Kop-Vet 10ml Vial (Square)
  • Inj. Renafen vet 10ml, 100ml (Renata)
  • Inj. Ketoflam 10ml, 50ml (Opsonin)
প্রয়োগবিধি: উপরোল্লিখিত এন্টিইনপ্লামেটরি গ্রুপের যেকোনো একটি ইনজেকশন আক্রান্ত পশুর মাংশপেশীতে প্রতিদিন একবার ১০-১৫ মি.লি. করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
(৩)
  • লাইসোভিট
  • জিস-ভিট
প্রয়োগবিধি: উপরের যে কোন একটি ওষুধ চা চামচের ১-২ চামচ পানিতে গুলিয়ে আক্রান্ত পশুর জিহ্বায় লাগাতে হবে।
(৪)
  • স্যালাইন- গ্লুকোলাইট
  • স্যালাইন- রেনালাইট
প্রয়োগবিধি: উপরের যে কোন একটি স্যালাইন ১ গ্রাম পরিমাণ ২০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পশুকে সারাদিন খাওয়াতে হবে।
দ্রষ্টব্য: যদি গুটি ফেটে গিয়ে ঘাঁ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাহলে সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য নিচের ৫ ও ৬ নং এ উল্লেখিত ওষুধ দিতে হবে।
(৫)
  • Inj. Renacef Vet 1gm, 2gm Vial (Renata)
  • Inj. Trizon Vet 1gm, 2gm Vial (ACME)
  • Inj. Triject Vet 1gm, 2gm Vial (SK+F)
  • Inj. Topcef 1gm, 2gm Vial (Navana)
প্রয়োগবিধি: উপরোল্লিখিত Ceftriaxone গ্রুপের যেকোনো একটি 2gm ইনজেকশন ১০ মি.লি. পরিশোধিত পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পশুর মাংশপেশীতে প্রতিদিন একবার করে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে।
(৬)
  • পভিডন
  • পভিসেফ
  • পভিন ভেট
প্রয়োগবিধি: উপরোক্ত যেকোন একটি ওষুধ পশুর আক্রান্ত স্থানে তুলা দিয়ে দিনে ৩-৪ বার লাগাতে হবে। জীবাণুনাশক এসব ওষুধ লাগানোর পর সুমিভভেট/সালফাভেট পাউডার দিনে ৩-৪ বার লাগাতে হবে অথবা পিনকেস্প্রে দিতে হবে দিনে ৩-৪ বার।

লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ভাইরাস জনিত এই রোগে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারীতা একেবারেই সামান্য। উপরোক্ত ৫ নং এ উল্লেখিত ওষুধটি ব্যবহারের ফলে পশু দুর্বল হলে পড়ে। আক্রান্ত পশুর শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পশুকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে নিম্নোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো বেশ কার্যকরী।

নিমপাতার মাধ্যমে ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রতি ১০০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ৫০ গ্রাম বাটা নিমপাতা, ৫০ গ্রাম খাবার সোডা, ১০০ গ্রাম গুড়, গবাদিপশুর জ্বরনাশক টেবলেট (Mel Vet Tablet 100mg, ACI) চূর্ণ করে সবগুলো উপকরণ একত্রে ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার (সকাল বিকাল) করে আক্রান্ত পশু সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খাওয়ালে পশু দ্রুত সেড়ে উঠার তথ্য পাওয়া যায়। 
লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঔষধ_এবং_লাম্পি_স্কিন_রোগের_ঘরোয়া_চিকিৎসা
এক্ষেত্রে পশুর ওজন বেশি হলে অন্যান্য সকল উপকরণ একই পরিমাণে রেখে শুধুমাত্র জ্বরনাশক টেবলেটের পরিমাণ ওজনের আনুপাতিক হারে বাড়িয়ে নিতে হবে। লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ গুটি বের হওয়ার সাথে সাথে এই চিকিৎসাটি বেশ কার্যকর।

পানপাতার মাধ্যমে ঘরোয়া চিকিৎসা

মাঝারি আকারের ১০টি পান, ৫টি কাঁচামরিচ, ২ চামচ লবণ একত্রে বেঁটে পরিমাণমত পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পশুকে প্রথমদিন ৪ বার খাওয়াতে হবে এবং পরবর্তী দিন থেকে পশু সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে। লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার এই পদ্ধতিটিও আক্রান্ত পশুর প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ গুটি ফেটে যাওয়ার আগে প্রয়োগ করতে হবে।

মেথি ও হলুদের মিশ্রণে ঘরোয়া চিকিৎসা

লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি মূলত আক্রান্ত পশুর নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে কিংবা খসে পড়তে লাগলে তখন প্রযোজ। এক্ষেত্রে ১০ গ্রাম মেথি, ২০ গ্রাম কাঁচা হলুদ, ১০টি মাঝারি আকারের রসুনের কোয়া, এক মুষ্টি নিমপাতা, এক মুষ্টি মেহেদি পাতা, এক মুষ্টি ধনে পাতা বা পুদিনা পাতা একত্রে বেঁটে ৫০০ মিলি নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে বোতলজাত করে আক্রান্ত পশুর ঘাঁ বা ক্ষত স্থানে তুলার সাহায্যে দৈনিক দুই বার করে লাগালে পশু খুব দ্রুত সেড়ে উঠতে পারে।

বাছুরের লাম্পি রোগের চিকিৎসা

বাছুরের লাম্পি রোগের চিকিৎসার জন্য নিমপাতার ঘরোয়া চিকিৎসাটি খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে ছয় মাসের বেশি কিন্তু ১০০ কেজির কম ওজনের বাছুরের জন্য নিমপাতার ঘরোয়া চিকিৎসায় উল্লেখিত সকল উপকরণ অর্ধেক পরিমাণে নিয়ে ২৫০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে বাছুরকে দৈনিক ২ বার করে পরপর ৭ দিন খাওয়ালে বেশ উপকার পাওয়া যায়। 
ছয় মাসের ছোট বাছুরকে এমন তরল দ্রবণ না খাওয়ানোই উত্তম। কারণ এভাবে তরল দ্রবণ খাওয়ানোর ফলে বাছুরের নিমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবন বেড়ে যায়। এছাড়া লাম্পি রোগে আক্রান্ত বাছুর এমনিতেই প্রচুর শ্বাসকষ্টে ভোগে। এক্ষেত্রে পানি ব্যতীত অন্যান্য উপকরণগুলো একত্রে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

ভ্যাকসিন ব্যতীত লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ খুব একটা কার্যকরী না হওয়ায় প্রতি বছর এ রোগে অসংখ্য গরু বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। সম্প্রতি বিভিন্ন পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লাম্পি স্কিন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণের মাধ্যমে খামারীরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও এ রোগ থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণ পেতে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।

আশাকরি, লাম্পি স্কিন রোগের ঔষধ, ঘরোয়া চিকিৎসা এবং এর টিকা বিষয়ক আর্টিকেলটি খামারীদের জন্য এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে খুবই সহায়ক হবে। আর্টিকেলটিতে কোনো প্রকার ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের নিমিত্তে কমেন্টবক্সে আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে যেকোনো পরামর্শ সাদরে গ্রহণযোগ্য।

আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে আপনার পরিচিত খামারীদের নিকট শেয়ার করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। সেই সাথে আর্টিকেলটি আপনার প্রয়োজনের সময় খুব দ্রুত খুঁজে পেতে আপনার ডিভাইসের ব্রাউজের আর্টিকেলের লিংক কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটের লিংক বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।



তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া, agrilife24.com, agricare24.com, poultrydoctorsbd.com, এগ্রোবাংলা, ড. মাহবুব মোস্তফা রচিত আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ ও চিকিৎসা এবং দুগ্ধবতী গাভী পালন, ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার, অধ্যাপক, এনিমেল হাজবেন্ড্রী এণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক রচিত এবং নূর পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “লাভজনক পশু পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা” ও “গৃহপালিত পশু-পাখির রোগব্যাধি ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি” বই । খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে বই তিনটি আপনার সংরক্ষণে রাখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করেনি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।

comment url