১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ এবং প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত
১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ জেনে সেই অনুপাতে প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত তা নির্ধারণ করে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা প্রণয়ন করা প্রত্যেক স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তির জন্য আবশ্যিক বিষয়। ক্যালরি হচ্ছে শক্তির একক যার মাধ্যমে প্রত্যহ গৃহিত খাদ্যসামগ্রীর শক্তির মান নির্ণয় করা হয়।
ভাত খাওয়া বা না খাওয়া কিংবা কম খাওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পাঠকদের সকল ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে।
ভূমিকা
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা প্রণয়নের সময় অবশ্যই কোন খাবারে কতটুকু পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান সে সম্পর্কে ধারণ রেখে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা উচিত। ভাত বাঙালীর প্রধান খাদ্য। আমরা ভাত খাওয়ার বিষয়টি মনের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে নিয়েছি, তাতে মনে হয় ভাতই আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান খোড়াক। দৈনন্দিন নানা পদের খাবার খেলেও ভাত না খেলে মনে হয় কিছুই খাওয়া হয়নি।
ভাত উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত দৈনন্দিন আহার্য একটি খাদ্যবস্তু। তাই ১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান কতটুকু পরিমাণে আছে তা জেনে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভাতের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। অধিকাংশ মানুষেই খাদ্য তালিকায় ভাত ছাড়া কিছু বুঝেই না আবার কিছুসংখ্যক মনে করেন ভাত খেলে মোটা হয়ে যায় কিংবা নানা রকম শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। উভয়ক্ষেত্রেই কিছু ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান।
১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ
১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ ১৩০ Kcal বা ৫৪০ কিলোজুল। এছাড়াও ১০০ গ্রাম ভাতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কতটুকু পরিমাণে আছে তা নিচের ছকে এক নজরে উপস্থাপন করা হলো:
ক্র. নং | পুষ্টি উপাদানের নাম | পরিমাণ |
০১. | কার্বোহাইড্রেট: | ২৮.১০ গ্রাম |
শর্করা | ০০.০৫ গ্রাম | |
ফাইবার | ০০.৪০ গ্রাম | |
০২. | প্রোটিন বা আমিষ | ০২.৬৯ গ্রাম |
০৩. | ফ্যাট বা চর্বি বা স্নেহ পদার্থ | ০০.২৮ গ্রাম |
০৪. | খনিজ উপাদান: |
|
ক্যালসিয়াম | ১০.০০ মিলিগ্রাম | |
ম্যাগনেসিয়াম | ১২.০০ মিলিগ্রাম | |
ফসফরাস | ৪৩.০০ মিলিগ্রাম | |
আয়রণ | ০০.২০ মিলিগ্রাম | |
পটাসিয়াম | ৩৫.০০ মিলিগ্রাম | |
সোডিয়াম | ০১.০০ মিলিগ্রাম | |
ম্যাঙ্গানিজ | ০০.৫০ মিলিগ্রাম | |
দস্তা | ০০.০৫ মিলিগ্রাম | |
০৫. | ভিটামিন: |
|
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) | ০০.০২ মিলিগ্রাম | |
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) | ০০.০১৩ মিলিগ্রাম | |
ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) | ০০.৪০ মিলিগ্রাম | |
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) | ০.০৯৩ মিলিগ্রাম | |
০৬. | পানি (জলীয় অংশ) | ৬৮.৪৪ গ্রাম |
প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত
পৃথিবীর বিখ্যাত সব নিউট্রিসনিস্টরা খাদ্যে বিদ্যমান ক্যালরি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের উপর ভিত্তি করে বয়স অনুযায়ী ডায়েট চার্ট প্রস্তুত করেন । সাধারণত শিশুদেরকে দৈনিক সর্বোচ্চ ১,০০০ ক্যালরি দেওয়া যেতে পারে। ১৬-১৮ বছর বয়সী কিশোরদের জন্য এই মাত্রা সর্বোচ্চ ৩,২০০ এবং ১৯-২৫ বছর বয়সী তরুণদের জন্য প্রত্যহ ক্যালরির প্রয়োজন ২,০০০ থেকে ২,২০০ পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্ক একজন কর্মক্ষম পুরুষের জন্য ২০০০-৩০০০ ক্যালরির প্রয়োজন। অন্যদিকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মক্ষম মহিলার ক্যালরির প্রয়োজন সর্বনিম্ন ১,৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ২,৪০০।
প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত তা মূলত শরীরে কতটুকু ক্যালরির প্রয়োজন এবং খাদ্য তালিকার অন্যান্য খাবারে কি পরিমাণ ক্যালরি আছে তার উপর নির্ভর করে। প্রতিদিন একজন মানুষের ভাত খাওয়ার পরিমাণের উপযোগিতা নির্ভর করে ব্যক্তির লিঙ্গ, বয়স, ওজন এবং খাদ্যের মাধ্যমে গৃহীত ক্যালরি বার্ণের সক্ষমতার উপর অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রমের উপর। এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ প্রত্যহ ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ভাত খেতে পারেন। তবে যাদের মধ্যে অল্প খাবারেই মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি তারা এর পরিমাণ ২০০-২৫০ গ্রামের মধ্যে সীমাবব্ধ রাখতে পারেন।
যেহেতু ভাত খাওয়ার সময় ওজন করে খাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না তাই সুনির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে মাঝারি সাইজের কাপের সাহায্যে ভাত মেপে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বয়সভেদে ভাত খাওয়ার পরিমাণ নিম্নরূপ:
বয়স | পরিমাণ |
২ বছরের ছোট শিশু | এই বয়সের বাচ্চাদের খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এদের ক্ষুধার প্রবণতা ও শারীরিক গঠনের উপর নির্ভর করে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হয়। |
২-১০ বছরের শিশু | এই বয়সের শিশুদের দৈনিক দেড় থেকে দুই কাপ ভাত দেওয়া যেতে পারে। |
১১-১৬ বছরের কিশোর | এদেরকে প্রত্যহ ৩-৪ কাপ ভাত দেওয়া যেতে পারে। |
১৭-২০ বছরের কিশোর | এই বয়সী কিশোরদের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন কাপ ভাত খাওয়ানো যেতে পারে। |
২১-২৫ বছরের তরুণ | এই বয়সী তরুণদের প্রতিদিন ৩ কাপ ভাত দেওয়া যেতে পারে। |
২৫-৩০ বছরের যুবক | এদেরকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন কাপ ভাত দেওয়া যেতে পারে। |
৩০ উর্ধ্বো বয়স | এই বয়সীদের খাবারের পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম, ওজন ও স্বাস্থ্যসক্ষমতার উপর নির্ভর করে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩ কাপের বেশি ভাত না খাওয়াই উত্তম। |
৪০ উর্ধ্বো বয়স | শারীরিক সক্ষমতা ও কায়িক পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে এই বয়সে প্রত্যহ দেড় থেকে দুই কাপ ভাত খাওয়া যাবে। |
উপরোক্ত তালিকায় বর্ণিত ভাত খাওয়ার পরিমাণ ব্যক্তির লিঙ্গ, ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীল। কেননা মহিলাদের তুলনায় পুরুষের কায়িক পরিশ্রম বেশি হয় সেক্ষেত্রে কেউ যদি ভাত থেকে গৃহীত ক্যালরি বার্ণ করার ক্ষমতা রাখে তাহলে খাবারের পরিমাণে কমবেশি করা যেতে পারে।
সেই সাথে পুষ্টির সকল উপাদানের সমন্বয়ে প্রত্যহ প্রস্তুতকৃত খাদ্য তালিকা সুষম হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে, ভাতসহ অন্যান্য খাবারের সাথে আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করেছেন তা আপনার শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সামঞ্জস্য কিনা কিংবা উক্ত ক্যালরি আপনার শরীর বার্ণ করতে পারছে কিনা। মূলত ক্যালরি বার্ণের সক্ষমতার উপর খাদ্যের পরিমাণ নির্ভরশীল।
ভাত খাওয়ার উপকারিতা কি
বাঙালি জাতির সূচনালগ্ন থেকেই ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য এবং খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। সম্প্রতি চমকপ্রদ উপস্থাপনায় বিভিন্ন ডায়াটেশিয়ান ভাতকে তুলনামূলক কম প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশেসহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোতে ভাতের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা অনন্য। ভাত খাওয়ার যত উপকারিতা তা নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
- অল্প খরচে অধিক ক্যালরি: ভাত উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেটযুক্ত একটি খাবার যার ক্যালরির পরিমাণও অধিক। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতে নিম্ন আয় বা মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য উক্ত পুষ্টি উপাদানটির প্রধান উৎস হচ্ছে ভাত যা তুলনামূলক অনেক কম খরচে পাওয়া যায়।
- দ্রুত শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম উৎস: শরীরে শক্তি উৎপাদনের প্রধান উপকরণই হচ্ছে শর্করা। ভাতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় খুব দ্রুত শরীরে শক্তি উৎপাদনে সহযোগিতা করে।
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: ভাতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়ে মানব মস্তিষ্ক থেকে সেরোটনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- অন্ত্রের পরিপাক ক্রিয়ার উন্নতি সাধন: ভাতে থাকা ফাইবার বা আঁশ অন্ত্রের পরিপাক ক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও তা সহজপাচ্য হওয়ায় নিজেও সহজে হজম হয় এবং এর মধ্যে থাকা ফাইটিক অ্যাসিড নামক যৌগ অন্যান্য খাবার হজমে সহযোগিতা করে।
- শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণ: অনেকে মনে করেন ভাত খেলেই মোটা হয়ে যায়। অথচ মোটা হওয়ার প্রধান উপাদান ফ্যাট বা চর্বি ভাতের মধ্যে খুবই সামান্য যা না থাকারই সমান। তাই ভাত খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি জমার কোনো সুযোগ নেই।
- রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ: ভাতে থাকা আয়রণ শরীরের রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে খুবই কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
- হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: ভাত থাকা কার্বোহাইড্রেট শক্তির সঞ্চার করে হার্টকে কর্মক্ষম রাখতে সহযোগিতা করে। এমনকি ভাতে কোনো চর্বি না থাকায় ভাত খাওয়ার ফলে হৃদরোগের কোনো ঝুঁকি থাকে না। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের মতে, রক্তের অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভাত খুবই উপকারী খাদ্যবস্তু।
- রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ভাত রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে খুবই কার্যকরী। সাদা ভাতে থাকা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নামক রাসায়নিক যৌগ ভাতের সাথে গৃহীত অন্যান্য সবজির শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
রাতে ভাত না খাওয়ার উপকারিতা
বাংলাদেশেসহ এশিয়া মহাদেশের প্রায় অধিকাংশ দেশেই ভাত খাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। আমাদের দেশের মত আরও কিছু দেশ আছে যাদের প্রধান খাদ্য ভাত। অতি উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেটযুক্ত এই খাবার আমাদের নিত্যদিনের ক্যালরির একটা বিশাল অংশ যোগান দিতে খুবই কার্যকরী উপাদান। কিন্তু উক্ত ক্যালরি বা শক্তি নিঃসরণের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমানের কায়িকশ্রম।
যেহেতু রাতে ভাত খাওয়ার পর শারীরিক শ্রমের কোনো সুযোগ নেই সেহেতু বিশেষজ্ঞগণ রাতে ভাত না খাওয়ারই পক্ষেই বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে থাকেন। রাতে ভাত না খাওয়ার উপকারিতা সমূহ নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- রাতে ভাত খাওয়ার ফলে শরীরে সুগার লেভের মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায় যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই রাতে ভাত না খাওয়াই উত্তম।
- ১৫০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ২০০ যা রাতে খাওয়ার পর বার্ণ করার সুযোগ না থাকায় উক্ত ক্যালরি শরীরে ক্ষতিকর চর্বিতে রূপান্তরিত হয়।
- বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাতে ভাত খাওয়া। বিশেষ করে খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে গেলে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
মোটকথা, রাতে ভাত খাওয়ার মাধ্যমে শরীর যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করে তা খরচ করার কোনো উপায় না থাকায় রাতে ভাত না খাওয়াই উত্তম। তবে যারা রাতে নানারকম কায়িক পরিশ্রমে লিপ্ত তাদের কথা ভিন্ন।
রাতে ভাত না খেলে কি ক্ষতি হয়
রাতে ভাত না খাওয়ার কোনো ক্ষতিকর দিক নেই বরং রাতে ভাত না খাওয়াই উত্তম। তবে রাতে খালিপেটে ঘুমানো যাবে না। এতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কার্য পরিচালনায় প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়। তখন শরীরের মাংস পেশীতে জমে থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন নিয়ে উক্ত অভাব পূরণ করে ফলে ধীরে ধীরে শরীর রুগ্ন ও শীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই রাতে খালিপেটে না ঘুমিয়ে, ঘুমানোর অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা পূর্বে প্রোটিন সমৃদ্ধ কিছু খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ভাত খেলে কি হয়
ভাত খাওয়ার যত উপকারিতা আছে তার ঠিক উল্টোটাই হবে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়। শুধু ভাত নয় যে কোনো খাবারই অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ, রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসক যে ওষুধ দেন তা যদি নির্দিষ্ট ডোজের বেশি খাওয়া হয় তাহলে যেমন ক্ষতি হয় তেমনি ভাতও অতিরিক্ত খেলে নানা রকম স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়। নিচে অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
- ভাত খুব দ্রুত শরীরের সুগারের মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে ভাত খেলে তা ডায়াবেটিসে রূপান্তরিত হয়।
- ভাত খাওয়ার মাধ্যমে শরীর যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে তা যদি দেহ সঠিকভাবে কাজে না লাগায় অর্থাৎ কায়িকশ্রম না করে তাহলে উক্ত কর্বোহাইড্রেট চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে দেহে মেদের সৃষ্টি করে।
- বিশেষজ্ঞরা অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভাত খাওয়ার অভ্যাসকেই দায়ী করে থাকেন।
- ভাত সহজপাচ্য হওয়ায় খুব দ্রুত হজম হয়ে যায় কিন্তু ভাতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ঠিকই আমাদের শরীরে রয়ে যায় এবং পুনরায় খিদে পায়। তাই একসাথে অতিরিক্ত পরিমাণে ভাত না খেয়ে অল্প পরিমাণে সময়কে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করে কয়েবারে খাওয়া উত্তম।
- ভাত খাওয়ার পরপরই ঘুমের অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে আপনার জন্য ভাত খাওয়া অনুচিত। কেননা ভাতে থেকে নিঃসৃত গ্লুকোজ আপনার ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সহজেই রক্তে মিশে গিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে।
স্বভাবতই বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের কায়িক পরিশ্রমের হার তুলনামূলক কমে আসে। তাই ৩০ উর্ধ্বো প্রত্যেকের উচিত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভাত খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনা। আমাদের শারীরিক পরিশ্রম যত কমতে থাকবে ভাতের ক্ষতিকর দিক ততই বাড়তে থাকবে। ফলশ্রুতিতে বয়স ৩০ এর পর অতিরিক্ত ভাত খেলে কিংবা দিনে একাধিকবার ভাত খেলে ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে কি হয় / পান্তা ভাতের উপকারিতা
পান্তা ভাত বাঙালী ঐতিহ্যের একটি অংশ। বিশেষ করে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে পান্ত ভাত খাওয়ার প্রচলন কিংবা জনপ্রিয়তা অনেক বেশি দেখা যায়। তাছাড়া শহুরে পরিবেশেষেও অনেকে পান্তা ভাত পছন্দ করে থাকেন। বিশেষ করে পান্তা ইলিশের গুণগান কমবেশি সবারই জানা। এছাড়াও পান্তা ভাত কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, বিভিন্ন পদের ভর্তা, পেঁয়াজু বা ডালের বরা দিয়ে খেতেও অনেকে পছন্দ করেন।
সাধারণত খাওয়া শেষে বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত ভাতের মধ্যে পানি দিয়ে পান্তা ভাত তৈরী করা হয়। ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানির নিচে থাকা এই ভাতে কোনো প্রকার অক্সিজেনের সংস্পর্শ না থাকায় ভাতের সাথে পানির রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভাতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে খনিজ উপাদানের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় যা ভাতের পুষ্টিগুণকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে তুলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পান্তাভাত দেহের ইমিউনিটি পাওয়ারকে সমুন্নত রেখে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। পান্তা ভাতে থাকা আয়রণ দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় যা হাড়ের ক্ষয়রোধ সহ হাড়কে মজবুত করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পান্তাভাতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ যেমন- বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের ইত্যাদি দেহের অযাচিত ব্যথা থেকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও কলোস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে এসব রাসায়নিক যৌগ খুবই কার্যকরী। পান্তা ভাতে বিদ্যমান ল্যাকটিক অ্যাসিড দেহের বিপাকীয় কাজে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পান্তাভাত তীব্র গরমে শরীরকে শীতল রাখতে খুবই উপকারী।
পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক
পান্তা ভাতের নানা উপকারিতার মাঝে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পান্তা ভাত ১২ ঘণ্টার বেশি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর মধ্যে এ্যালকোহল জাতীয় এক প্রকার রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয় যা খাওয়ার ফলে মাথা ঝিমঝিম করা, শরীর ম্যাজম্যাজ করাসহ অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ ভিজানো পান্তা ভাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়রিয়াসহ নানা রকম ব্যাকটেরিয়াল স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাতের মাড়ের সাথে মোটা হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের মতে, ভাতের মাড়ে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও অলিগোস্যাকারাইড নামক দুই ধরনের দ্রবীভূত ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিসহ অন্ত্রের কর্মক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি, এসব উপাদান ওজনাধিক্য রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আপনি যে খাবারই খান না কেন, যদি কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে উক্ত খাবার থেকে গৃহীত ক্যালরি বার্ণ করতে না পারেন তাহলে তা ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে।
লেখকের মন্তব্য
শহর কিংবা গ্রাম সম্প্রতি সকলের নিকটই পান্তাভাত খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাঙালীর ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন পদের ভর্তার সাথে পান্তা ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এই সময়গুলোতে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকেই সুষম ডায়েট অনুসরণ না করলেও সাধারণত অন্যান্য দিনগুলোতে খাদ্য তালিকা সুষম খাবারের সমন্বয়ে হওয়া উচিত। বয়সভেদে পুষ্টি চাহিদা বিবেচনায় রেখে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
আশাকরি ১০০ গ্রাম ভাতে ক্যালরির পরিমাণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ জেনে আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা প্রণয়নে আর্টিকেলটি সহায়ক হবে। আর্টিকেলটিতে কোন প্রকার সংশোধন, সংযোজন কিংবা বিয়োজনের নিমিত্তে আপনার যৌক্তিক মতামত সাদরে গ্রহণযোগ্য। তথ্যগুলো উপকৃত মনে হলে আপনার প্রিয়জন, পরিজন এবং বন্ধুমহলে আর্টিকেলটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি।
তথ্যসূত্র: Pritikin Diet Chart, Food Value Chart: Indian Council of Medical Research, চিন্ময় সেনগুপ্ত রচিত বিনা ওষুধে রোগ নিরাময় গ্রন্থ; ওয়েবসাইটসমূহ: উকিপিডিয়া, britannica.com, prthomalo.com, kalerkontho.com, dailystar.com, anandabazar.com |
আপনার সুচিন্তিত মতামত দিয়ে MrDorpon কে আরও সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করুন। আপনার মতামতটি রিভিউর পর Published করা হবে।
comment url